একই শহর, তিন দেশ, তিন সরকার!বাস্তবে কীভাবে সম্ভব?জানুন নিকোসিয়ার বিভাজন রহস্য

একই শহর, তিন দেশ, তিন সরকার!বাস্তবে কীভাবে সম্ভব?জানুন নিকোসিয়ার বিভাজন রহস্য
ছবির ক্যাপশান, একই শহর, তিন দেশ, তিন সরকার!বাস্তবে কীভাবে সম্ভব?জানুন নিকোসিয়ার বিভাজন রহস্য
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বিশ্বে অসংখ্য শহর সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত, কিন্তু এমন শহর খুব কমই আছে, যা একইসঙ্গে তিনটি ভিন্ন প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের অধীনে চলছে। ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্বের ছোট দ্বীপ দেশ সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোসিয়া (Nicosia) ঠিক এমনই এক অনন্য শহর, যেখানে এক প্রান্তে গ্রীক সাইপ্রাসের প্রশাসন, অপর প্রান্তে তুর্কি সাইপ্রাসের নিয়ন্ত্রণ, আর মাঝখানে জাতিসংঘের (UN) তত্ত্বাবধানে একটি নিরপেক্ষ বাফার জোন।

নিকোসিয়া শহরের কেন্দ্র দিয়ে চলে গেছে একটি সবুজ রেখা, যাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় "Green Line"। এই রেখাই কার্যত শহরটিকে তিন ভাগে ভাগ করেছে 

◑ দক্ষিণ অংশে গ্রীক সাইপ্রাস প্রশাসন,

◑ উত্তরে তুর্কি সাইপ্রাস কর্তৃপক্ষ,

◑ মাঝখানে জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রিত নিরপেক্ষ অঞ্চল, যেখানে কোনো দেশের আইন প্রযোজ্য নয়।

এই বাফার জোনে বসবাস বা ব্যবসা করা সীমিত ও

কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। ফলে একই শহরের বাসিন্দারা তিন ধরনের প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে চলাফেরা করেন এ যেন আধুনিক পৃথিবীর এক রাজনৈতিক ল্যাবরেটরি।

বিভাজনের সূচনা: সংঘাত থেকে বিভক্তি-

১৯৭৪ সালে সাইপ্রাসে গ্রীকপন্থী এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। এর প্রতিবাদে তুরস্ক উত্তরাংশে সেনা পাঠায়, এবং দ্বীপের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দখল করে নেয়। সেই সময় থেকেই রাজধানী নিকোসিয়া কার্যত দুই শাসনব্যবস্থায় বিভক্ত হয়ে যায়। পরে জাতিসংঘের উদ্যোগে শহরের মাঝখানে তৈরি হয় "গ্রিন লাইন" একটি সামরিকভাবে নিয়ন্ত্রিত বাফার জোন, যেখানে শুধু UN Peacekeeping Force টহল দেয়। এই অঞ্চলকেই তৃতীয় "প্রশাসনিক সত্তা" হিসেবে গণ্য করা হয়, কারণ এখানে সাইপ্রাস বা তুরস্ক, কোনো পক্ষের আইনই পুরোপুরি কার্যকর নয়।

একই শহরের বাসিন্দারা ভিন্ন ভিন্ন প্রশাসনের অধীনে থাকলেও, তাদের সামাজিক জীবনে বিভাজনের প্রভাব গভীর। দক্ষিণাংশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়মকানুন চলে, যেখানে ইউরো মুদ্রা ব্যবহৃত হয়। উত্তরে তুর্কি লিরা চালু, আইনও ভিন্ন। মাঝের UN অঞ্চলে সীমিত যোগাযোগ, প্রবেশের জন্য বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন। এই বিভক্তির কারণে অনেক পরিবারের সদস্য দুই দিকে ছড়িয়ে গেছে; কেউ দক্ষিণে, কেউ উত্তরে তাদের দেখা করার জন্য বিশেষ পারমিট নিতে হয়।

বিশ্বে আর এমন শহর নেই!

বিশ্বে আরও কিছু শহর সীমান্তে অবস্থিত যেমন জার্মান-ফরাসি সীমান্তের কেল, অথবা আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তের টিজুয়ানা কিন্তু সেগুলোর প্রশাসন দুই দেশের মধ্যে ভাগ হলেও কোনো শহরই তিনটি পৃথক প্রশাসনের অধীনে একসঙ্গে পরিচালিত নয়। নিকোসিয়া তাই একমাত্র শহর, যাকে বলা যায় "এক শহর, তিন সরকার, তিন বাস্তবতা।"

যদিও গত কয়েক দশকে উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনা হয়েছে, এখনো পর্যন্ত কোনো স্থায়ী ঐক্যমত্য হয়নি। ফলে নিকোসিয়া রয়ে গেছে পৃথিবীর একমাত্র বিভক্ত রাজধানী, যেখানে একই রাস্তায় হাঁটলেও প্রশাসনিক মানচিত্র বদলে যায়। বিভাজনের এই দীর্ঘ ইতিহাস যেন মনে করিয়ে দেয়—একই শহরও কখনো কখনো তিন ভিন্ন সত্যের প্রতীক হতে পারে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ