কলার ম্যাজিক: সুস্থতা, শক্তি আর আনন্দ একসাথে পেতে চাইলে ট্রাই করুন !

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ঘরেই সহজলভ্য এই ফল কলা। দাম সস্তা, কিন্তু গুণে অমূল্য। অনেকেই এটিকে সাধারণ ফল বলে অবহেলা করেন, অথচ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি এক "কমপ্লিট ফুড" যা একসঙ্গে শক্তি, ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবার সরবরাহ করে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের উপকারে কাজ করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রতিদিন অন্তত একটি কলা খেলে শরীরের নানান সমস্যার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন বি৬, সি, ফাইবার এবং প্রাকৃতিক চিনিজাত উপাদান, যা একে করে তুলেছে প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্টার ও রোগ প্রতিরোধের যোদ্ধা।
মস্তিষ্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যে -
কলায় থাকা ট্রিপটোফ্যান নামের অ্যামাইনো অ্যাসিড শরীরে সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়ায়, যা মন ভালো রাখে এবং স্ট্রেস কমায়। এটি স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও মানসিক চাপগ্রস্তদের জন্য কার্যকর। নিয়মিত কলা খেলে হতাশা, উদ্বেগ, অনিদ্রা ও ক্লান্তি কমে।এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম স্নায়ু শান্ত করে এবং ঘুমের মান উন্নত করে।
হৃদপিণ্ড ও রক্তচাপ রক্ষায়-
কলায় পটাশিয়ামের মাত্রা খুবই বেশি, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এটি রক্তনালীকে নমনীয় রাখে, রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে। কোলেস্টেরল কমায়, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং হৃদযন্ত্রের পেশি মজবুত রাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কলা খান, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় ২৪% কমে।
হাড়, দাঁত ও পেশিতে-
কলায় থাকা ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। ব্যায়ামের পর কলা খেলে পেশির ব্যথা ও টান ধরা কমে। এটি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ বাড়িয়ে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। খেলোয়াড়দের জন্য এটি আদর্শ খাবার—তাৎক্ষণিক শক্তি দেয় এবং পেশির ক্লান্তি দূর করে।
রক্ত ও রোগপ্রতিরোধে-
কলায় রয়েছে আয়রন ও ফলেট, যা রক্তশূন্যতা দূর করে এবং হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। ভিটামিন বি৬ শরীরে নতুন রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ঠান্ডা, কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমে কলা দারুণ উপকারী।
হজম ও পেটের সমস্যায় প্রাকৃতিক ওষুধ-
কলায় থাকা ডায়েটারি ফাইবার ও পেকটিন হজম শক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পাকস্থলীর আলসার প্রতিরোধে কার্যকর, কারণ এটি পেটের অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার সময় শরীরের ডিহাইড্রেশন কমাতে সাহায্য করে। গ্যাস, অম্বল ও বমিভাব কমায়।
গর্ভবতী মা ও শিশুদের জন্য-
কলায় আছে প্রাকৃতিক ফোলিক অ্যাসিড ও আয়রন, যা গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি ও রক্ত গঠনে সাহায্য করে। গর্ভবতী নারীদের বমি ভাব কমায় এবং শক্তি জোগায়। শিশুদের জন্য এটি নরম, সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার।
ত্বক ও চুলের যত্নে কলার ম্যাজিক-
কলা ফেসপ্যাক ত্বক নরম করে, উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও বয়সের ছাপ কমায়। এতে থাকা ভিটামিন ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্রণ, দাগ, রোদে পোড়া ত্বক সারাতে সাহায্য করে।
চুলে কলার প্যাক ব্যবহার করলে প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের মতো কাজ করে খুশকি কমায়, চুল নরম ও মসৃণ করে, গোড়া মজবুত করে।
শক্তি ও কর্মক্ষমতায়-
কলায় থাকা গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ দ্রুত শক্তি জোগায় তাই খেলোয়াড়দের জন্য এটি সেরা স্ন্যাকস। এটি শরীর ঠান্ডা রাখে ও পানিশূন্যতা রোধ করে। নিয়মিত খেলে দুর্বলতা ও ক্লান্তি দূর হয়, শরীর থাকে চনমনে।
অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা
⇨ কিডনি ও লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
⇨ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অল্প পরিমাণে কলা নিরাপদ এর ফাইবার রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
⇨ ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর একদিকে এটি পেট ভরায়, আবার বেশি খেলে ওজন বাড়াতেও সক্ষম।
⇨ বয়সজনিত বার্ধক্য বিলম্বিত করে ও ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক।
কখন ও কীভাবে খাবেন!
সকালে নাস্তার সঙ্গে বা বিকেলে হালকা ক্ষুধায় ১–২টি কলা যথেষ্ট।
ব্যায়ামের আগে বা পরে খেলে দ্রুত শক্তি মেলে। ডায়াবেটিস রোগীরা দিনে আধা বা একটি কলা খেতে পারেন।
সারাদিনের ব্যস্ত জীবনে একটিমাত্র কলাই হতে পারে আপনার প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্ট এনার্জি, পুষ্টি, সৌন্দর্য ও মানসিক প্রশান্তির এক অনন্য উৎস।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।