সার্জারির ঝামেলা ছাড়া এই টিপসই পরিবর্তন করবে আপনার মুখের আকৃতি-ঘরে বসেই ট্রাই করুন!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানুষের সৌন্দর্যের পরিমাপে মুখের আকৃতি বা ফেস শেপ সবসময়ই কেন্দ্রে থাকে। গায়ের রঙ বা ত্বকের টেক্সচার পরিবর্তনশীল হলেও, মুখের গঠন—চোয়াল, গাল, থুতনি ও সামগ্রিক আউটলাইন—একজনের ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাসকে দৃশ্যমানভাবে প্রকাশ করে। তাই অনেকেই মনে করেন, আকর্ষণীয় চেহারা মানেই সার্জারি করে মুখের গড়ন পাল্টে নেওয়া। কিন্তু আধুনিক গবেষণা বলছে, সার্জারির ঝুঁকিপূর্ণ পথে না গিয়েও প্রাকৃতিক উপায়ে ফেস ইয়োগা ও নিয়মিত কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে মুখের আকৃতি উন্নত করা সম্ভব।
বছরের পর বছর ধরে সেলিব্রিটি সংস্কৃতি সার্জারিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। নাকের আকৃতি, থুতনির শেপ কিংবা গালের লাইন পাল্টাতে মানুষ কৃত্রিম পথে ঝুঁকছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, সার্জারি কখনোই স্থায়ী সমাধান নয়। বরং এর ফলে হতে পারে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুখে স্থায়ী বিকৃতি, অতিরিক্ত ফোলা, ইনফেকশন কিংবা মানসিক চাপ। অনেক বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রী এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে সৌন্দর্যের বদলে সমালোচনার শিকার হয়েছেন। এর বিপরীতে, ফেস ইয়োগা হলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, ঝুঁকিমুক্ত এবং দীর্ঘমেয়াদী উপায়, যা মুখের পেশিকে মজবুত করে আকৃতিকে স্বাভাবিকভাবে সুন্দর করে।
আমাদের মুখে প্রায় ৫০টিরও বেশি পেশি রয়েছে, যেগুলো আমরা প্রতিদিন হাসি, কথা বলা বা খাওয়ার সময় ব্যবহার করি। কিন্তু এগুলোকে নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে সক্রিয় না রাখলে ধীরে ধীরে ঢিলে হয়ে যায়। এর সাথে বয়স বাড়ার ফলে ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন প্রোটিনের মাত্রা কমতে থাকে, ফলে চামড়া ঝুলে যায়, ডাবল চিন তৈরি হয় এবং মুখ তার সুষম আকৃতি হারায়। ফেস ইয়োগা এই পেশিগুলোকে টানটান রাখে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং কোলাজেন উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে। এর ফলে ত্বক হয়ে ওঠে সতেজ, উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়।
সহজ ও কার্যকর ফেস ইয়োগা ব্যায়াম-
মুখের সৌন্দর্য বজায় রাখতে যে ধরনের ব্যায়াম ঘরে বসেই করা যায়:
◑ ফুঁ দেওয়া (Blowing Exercise): চোয়াল সরু ও গালের মেদ কমানোর জন্য উপরের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে ফুঁ দিন। প্রতিদিন অন্তত ২০ বার করুন।
◑ বেলুন ফুলানো: গাল ফুলিয়ে রাখা বা আসল বেলুন ফুলানো মুখের মাংসপেশিকে সক্রিয় করে। এটি শ্বাসপ্রশ্বাসেরও ভালো ব্যায়াম।
◑ মৎস্যমুখ (Fish Face): গাল ভেতরে টেনে মাছের মতো মুখ করুন, ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। দিনে অন্তত ৫–৭ বার করুন।
◑ পাউটিং এক্সারসাইজ: ঠোঁট ফুলিয়ে কিস করার ভঙ্গি করুন। এটি ঠোঁট ও চোয়ালের আশপাশের চর্বি কমায়।
◑ ভাওয়েল ব্যায়াম: ইংরেজি A, E, I, O, U ধীরে উচ্চারণ করুন, মুখে চাপ দিয়ে। নিয়মিত করলে ডাবল চিন কমে ও মুখে শার্পনেস আসে।
◑ ফেস ট্যাপিং: আঙুল দিয়ে হালকা চাপ দিয়ে গাল ও কপালে ট্যাপ করুন। এটি রক্তসঞ্চালন ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
◑ হাসি থেরাপি: মনখুলে হাসলে মুখের প্রায় সব পেশি সক্রিয় হয়। নিয়মিত হাসলে মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
◑ ফেস রোলার: আধুনিক সময়ে জনপ্রিয় এই যন্ত্র দিয়ে হালকা মেসাজ করলে মুখের লিম্ফ ফ্লুইড বের হয়, ফলে ফোলা ও অতিরিক্ত মেদ কমে।
মুখ সাধারণত চারটি প্রধান আকৃতিতে ভাগ করা হয় গোল (রাউন্ড), ডিম্বাকৃতি (ওভাল), চারকোনা (স্কয়ার) এবং লম্বাটে (লং)। প্রতিটি আকৃতির নিজস্ব সৌন্দর্য থাকলেও বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে আকর্ষণীয় ধরা হয় ওভাল বা V-শেপ। এটি সবচেয়ে সুষম ও ব্যালান্সড শেপ, যেখানে থুতনি সরু ও চোয়াল স্পষ্ট থাকে। সেলিব্রিটিরা প্রায়ই সার্জারির মাধ্যমে এ আকৃতি পেতে চান, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিয়মিত ফেস ইয়োগা করলে স্বাভাবিকভাবেই এর কাছাকাছি ফল পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের প্রভাব
শুধু ব্যায়াম নয়, মুখের আকৃতি সুন্দর রাখার জন্য জীবনযাপনেও কিছু বিষয় জরুরি
⇨পর্যাপ্ত ঘুম মুখের পেশিকে রিল্যাক্স করে।
⇨ পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বক টানটান থাকে।
⇨ অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার মুখে ফোলাভাব বাড়ায়।
⇨ ফল, শাকসবজি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার ত্বক ও পেশির পুষ্টি জোগায়।
আকর্ষণীয় মুখগঠন মানেই শুধু সার্জারির কৃত্রিম সৌন্দর্য নয়। বরং প্রতিদিনের অভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ফেস ইয়োগা এসবই হতে পারে স্থায়ী সমাধান। সৌন্দর্যের আসল রহস্য হলো প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা। তাই সার্জারির ভয় নয়, বরং ফেস ইয়োগার সহজ অনুশীলনেই মিলতে পারে আত্মবিশ্বাসী, প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় মুখাবয়ব।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।