Schindler's List (1993): এক জন মানুষের সাহসে ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় লেখা হলো

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানব ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায়, যেখানে মানুষের নির্মমতা ও লোভের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল মানুষেরই মানবতা। সেই অন্ধকার সময়ের বাস্তব ঘটনাকেই সিনেমার পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছিল স্টিভেন স্পিলবার্গের ১৯৯৩ সালের চলচ্চিত্র Schindler's List। এটি শুধু একটি চলচ্চিত্র নয় এটি এক যুগের দলিল, যেখানে মৃত্যুর ছায়ার নিচে জেগে উঠেছিল সাহস, ন্যায় আর মানবতার অমোঘ শক্তি।
১৯৪০-এর দশকে নাৎসি জার্মানির হাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছিল ইউরোপ। হিটলারের 'ফাইনাল সলিউশন' পরিকল্পনায় লক্ষ লক্ষ ইহুদি মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছিল। সেই সময়েই ওস্কার শিন্ডলার নামের এক জার্মান ব্যবসায়ী নিজের স্বার্থের বাইরে গিয়ে দাঁড়ান মানবতার পক্ষে। প্রথমে তিনি যুদ্ধের সুযোগে মুনাফা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরে বুঝতে পারেন,তার কারখানাই হতে পারে নিরপরাধ মানুষের আশ্রয়স্থল। সেই উপলব্ধি থেকেই তিনি নিজের অর্থ ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচিয়ে তোলেন এক হাজারেরও বেশি ইহুদিকে। এই ঘটনাই আজ ইতিহাসে পরিচিত "Schindlerjuden" নামে অর্থাৎ "শিন্ডলারের মানুষ"।
Schindler's List সিনেমাটি সাদা-কালো চিত্রে নির্মিত, যা দর্শককে সেই সময়ের শ্বাসরুদ্ধ করা বাস্তবতার মধ্যে টেনে নেয়। রঙের অভাব এখানে প্রতীকী, কারণ এটি এক এমন সময়ের কাহিনি, যেখানে জীবনের সব রঙ মুছে গিয়েছিল। শুধু মাঝে মাঝে দেখা যায় একটি ছোট্ট মেয়ের লাল কোট, যা প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় নিষ্পাপ জীবনের, হারিয়ে যাওয়া মানবতার।
স্পিলবার্গের এই চিত্রনাট্য এমনভাবে গড়ে ওঠে, যেখানে দর্শক বুঝতে পারে একজন সাধারণ মানুষও চাইলে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে। সিনেমার দৃশ্যগুলোতে নেই নাটকীয় চমক বা অতিরঞ্জন, বরং আছে বাস্তবতার নিরাবরণ মুখ। মৃত্যুর প্রান্তে দাঁড়িয়েও যে মানুষ অন্যের জন্য বাঁচতে পারে এই বিশ্বাসই চলচ্চিত্রটিকে করেছে অনন্ত মানবিক।
মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, শিন্ডলারের এই পরিবর্তনকে "moral awakening" বা নৈতিক জাগরণ বলা হয়। যুদ্ধ, ভয়, মৃত্যু—সবকিছুর মাঝেও একজন মানুষের মস্তিষ্ক যখন সহানুভূতি ও নৈতিকতার দ্বারা প্রভাবিত হয়, তখন সে নিজের সত্তাকে ছাড়িয়ে যায়। গবেষণায় দেখা যায়, মানব মস্তিষ্কের "mirror neuron" সিস্টেমই আমাদের অন্যের যন্ত্রণাকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে, যা শিন্ডলারের ভেতরে তীব্রভাবে কাজ করেছিল। অর্থাৎ, মানবতা কোনো বিলাসিতা নয়; এটি আমাদের জৈবিক সত্তার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এই চলচ্চিত্র আজও আমাদের শেখায় যে সময়ই আসুক, মানবতার পাশে দাঁড়ানো কখনো বৃথা যায় না। পৃথিবীর প্রতিটি নিষ্ঠুর বাস্তবতার মাঝেও একজন মানুষের নৈতিক সাহসই হতে পারে শত জীবনের রক্ষা। Schindler's List তাই শুধু ইতিহাসের স্মারক নয়, এটি মানব মনের বিবর্তনের দলিলও।
আজ যখন বিশ্বজুড়ে নানা রূপে ঘৃণা, বিভাজন ও সহিংসতা ফিরে আসছে, তখন Schindler's List আমাদের মনে করিয়ে দেয়- একজন মানুষের সিদ্ধান্তও পারে ইতিহাস বদলাতে।
স্পিলবার্গের এই সৃষ্টি কেবল সিনেমা নয়; এটি এক গভীর মানবিক ধ্বনি, যা বলে "যে জীবন অন্যের জন্য জ্বলে, সেই জীবনই সত্যিকারের আলো।"
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।