প্যাপারোমিয়া: ঘরের কোণে জন্ম নেওয়া 'সবুজ হেয়ার টনিক' চুলের যত্নে প্রকৃতির নীরব বিস্ময়

প্যাপারোমিয়া: ঘরের কোণে জন্ম নেওয়া 'সবুজ হেয়ার টনিক' চুলের যত্নে প্রকৃতির নীরব বিস্ময়
ছবির ক্যাপশান, প্যাপারোমিয়া: ঘরের কোণে জন্ম নেওয়া 'সবুজ হেয়ার টনিক' চুলের যত্নে প্রকৃতির নীরব বিস্ময়
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ঘরের জানালার পাশে রাখা ছোট্ট, নরম পাতার গাছটি হয়তো কেবলই শোভাবর্ধনের জন্য রাখেন অনেকে। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই প্যাপারোমিয়া (Peperomia) নামের গাছটি শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়, চুলের স্বাস্থ্য রক্ষাতেও আশ্চর্য কার্যকর? সাম্প্রতিক উদ্ভিদবিজ্ঞান ও বায়োকেমিস্ট্রি গবেষণায় দেখা গেছে, প্যাপারোমিয়ার পাতার রস বা নির্যাসে এমন কিছু প্রাকৃতিক যৌগ রয়েছে যা চুলের গোড়া শক্ত করে, খুশকি কমায় এবং মাথার ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে পারে। এই গাছকে এখন অনেকেই বলছেন "সবুজ হেয়ার টনিক" কারণ এর ভেতরে লুকিয়ে আছে প্রকৃতির নিঃশব্দ ঔষধি ক্ষমতা।

প্যাপারোমিয়া এক ধরনের ছোট আকারের ইনডোর প্ল্যান্ট, যাকে প্রায়ই ঘর বা অফিস সাজানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এর পাতায় থাকে ফেনলিক যৌগ, ফ্ল্যাভোনয়েড, ট্রাইটারপেনয়েড, প্রোটিন এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা দেহে এবং ত্বকে সেল রিজেনারেশন বাড়াতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই উপাদানগুলো স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং ফোলিকলগুলোতে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ বাড়ায়। ফলে চুল পড়া কমে, নতুন চুল গজানোর পরিবেশ তৈরি হয়।

প্যাপারোমিয়া পাতার নির্যাসে এমন উপাদান পাওয়া গেছে, যা স্ক্যাল্পের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাস দমন করতে সক্ষম। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল হিসেবে কাজ করে এবং খুশকি ও চুলকানি কমায়। একই সঙ্গে এতে থাকা প্রোটিন ও ট্রাইটারপেনয়েড চুলের গোড়া শক্তিশালী করে, ফলে চুল ভেঙে পড়া বা রুক্ষ হয়ে যাওয়া অনেকটাই কমে যায়। পাতার রস থেকে নির্গত প্রাকৃতিক তেল চুলে মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা এনে দেয়। নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় থাকে, যা রাসায়নিক শ্যাম্পুতে সাধারণত হারিয়ে যায়।

ঘরোয়া ব্যবহারের পদ্ধতি

চুলের যত্নে প্যাপারোমিয়া ব্যবহার করা খুব সহজ। গাছের পাতাগুলো ধুয়ে ব্লেন্ডারে পিষে রস বের করে নিন। এতে সামান্য নারকেল তেল বা জলপাই তেল মিশিয়ে হালকা গরম করুন। এরপর সেই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন এবং আধা ঘণ্টা রেখে সাধারণ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

এই পদ্ধতিটি সপ্তাহে একবার করলে স্ক্যাল্প পরিষ্কার থাকে এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়।

চুলে বাড়তি পুষ্টি দিতে চাইলে প্যাপারোমিয়া রসের সঙ্গে অ্যালোভেরা, দই ও মধু মিশিয়ে একটি প্রাকৃতিক হেয়ার মাস্ক তৈরি করা যায়। এটি রুক্ষ চুলে নরমতা ও উজ্জ্বলতা আনে।

বিজ্ঞানীরা প্যাপারোমিয়ার নির্যাসে β-sitosterol, lupeol এবং flavone নামক যৌগের উপস্থিতি পেয়েছেন যা চুল পড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত DHT হরমোনের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়া, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো চুলের কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়, যা চুলের অকালপক্বতা বা দুর্বলতা রোধে ভূমিকা রাখে।

তবে এখনো এই গাছের চিকিৎসাগত ব্যবহার নিয়ে গবেষণা চলছে; তবু ঐতিহ্যগতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার যাদের ত্বক সংবেদনশীল, তারা সরাসরি পাতার রস ব্যবহার করার আগে অল্প অংশে পরীক্ষা করে নেবেন। সব প্রজাতির প্যাপারোমিয়া গাছ সমান কার্যকর নয় সাধারণত Peperomia pellucida বা Peperomia obtusifolia প্রজাতির নির্যাস সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করা হয়।

যদি কারও মাথার ত্বকে ইনফেকশন বা ক্ষত থাকে, তবে আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্যাপারোমিয়া কোনো দামি ব্র্যান্ডের পণ্য নয়, কিন্তু প্রকৃতির নিজের হাতে তৈরি এক নিখুঁত হেয়ার টনিক। যেখানে আধুনিক কসমেটিকস চুলে কেমিক্যালের ভার বাড়ায়, সেখানে এই গাছ চুপিচুপি ফিরিয়ে দেয় প্রকৃতির শীতল যত্ন। চুলের যত্নে সবসময়ই সমাধান লুকিয়ে থাকে প্রকৃতির কাছেই

আর প্যাপারোমিয়া যেন তারই এক সবুজ বার্তা, যা বলে"সৌন্দর্য আসে না বোতলে, আসে মাটির ঘ্রাণে।"

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ