চুল ঝলমল করতে এখন আর পার্লারের দরকার নেই কলার সহজ ট্রিকটি শিখে নিন!!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
চুল আমাদের ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন। রুক্ষ, নিষ্প্রাণ বা ঝরে পড়া চুল শুধু সৌন্দর্য নষ্টই করে না, বরং আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব ফেলে। আধুনিক জীবনে দূষণ, মানসিক চাপ, অপুষ্টি ও রাসায়নিক পণ্যের অতিরিক্ত ব্যবহার চুলের গঠনকে দুর্বল করে দেয়। এই সময় অনেকেই দামী হেয়ার স্পা বা কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টে ভরসা করেন, যা সাময়িক ফল দেয়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে চুল আরও ভঙ্গুর করে তোলে। অথচ প্রকৃতির কাছেই আছে এমন উপাদান, যা নিখুঁতভাবে চুলের যত্ন নিতে পারে।
সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে কলাএ কটি সহজলভ্য ফল, কিন্তু এর ভেতর লুকিয়ে আছে চুলের সৌন্দর্যের এক বিস্ময়কর রহস্য।
চুলে কলার কার্যকারিতা:
কলা শুধুই শরীরের শক্তির উৎস নয়; এটি একটি সম্পূর্ণ নিউট্রিশনাল হেয়ার বুস্টার।
এর পুষ্টিগুণ ও রাসায়নিক উপাদান সরাসরি চুলের শিকড় ও কিউটিকলে প্রভাব ফেলে।
◑ পটাসিয়াম: চুলের কোষে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে এবং গোড়া মজবুত করে।
◑ সিলিকা: কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা চুলে ইলাস্টিসিটি ও প্রাকৃতিক চকচকে ভাব আনে।
◑ ভিটামিন বি৬ ও সি: রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং মাথার ত্বকের প্রদাহ কমায়।
◑ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে চুলের ক্ষতি রোধ করে, ফলে চুল থাকে দীর্ঘদিন তরুণ ও মজবুত।
◑ প্রাকৃতিক তেল ও এনজাইম: রুক্ষ ও শুষ্ক চুলে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে, মাথার ত্বককে নরম ও প্রশান্ত রাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কলার প্রোটিন ও সিলিকা যৌগ চুলের কেরাটিন স্তরে মিশে গিয়ে কিউটিকল লেয়ার মসৃণ করে, যার ফলে চুলে আলো প্রতিফলন বেড়ে যায়, অর্থাৎ চুল দেখতে আরও উজ্জ্বল লাগে।
কলা হেয়ার মাস্ক:
১. কলা ও দই -চুলে মসৃণতা ও কোমলতা আনতে সাহায্য করে:
ব্যস্ত জীবনে ধুলা-ময়লা ও সূর্যের তাপে চুল হয়ে পড়ে রুক্ষ ও ভঙ্গুর।
দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড মাথার ত্বক পরিষ্কার করে মৃত কোষ দূর করে, আর কলা দেয় গভীর ময়েশ্চার।
প্রস্তুত প্রণালী: দুটি পাকা কলা চটকে তাতে আধা কাপ টক দই মেশান।
মিশ্রণটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে ১৫–২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
এরপর কুসুম গরম পানি ও মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ফলাফল: চুল হবে নরম, মসৃণ ও সহজে আঁচড়ানো যায় এমন। সপ্তাহে অন্তত দুদিন ব্যবহার করলে চুলের টেক্সচার স্পষ্টভাবে বদলে যাবে।
২. কলা ও মধু - শুষ্ক স্ক্যাল্প ও খুশকির সমাধান!
মধু হলো প্রাকৃতিক হিউমেকট্যান্ট, যা বাতাসের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগায়।
অন্যদিকে কলা মাথার ত্বকের খোসা ওঠা বা চুলকানি কমায়।
প্রস্তুত প্রণালী: একটি পাকা কলা ভালোভাবে চটকে নিন। তাতে দুই চামচ মধু মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এবার তা মাথার ত্বকে লাগিয়ে ১০–১৫ মিনিট রেখে দিন। পরে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ফলাফল: স্ক্যাল্পের শুষ্কতা দূর হবে, খুশকি কমবে এবং চুলে আসবে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা। নিয়মিত ব্যবহারে স্ক্যাল্পের অস্বস্তি দূর হয়ে চুল হবে হালকা ও প্রাণবন্ত।
৩. কলা ও অ্যালোভেরা, নতুন চুল গজাতে সহায়ক!
অ্যালোভেরা জেলে থাকে এনজাইম ও ভিটামিন, যা স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। কলা এতে যোগ হয়ে চুলে আর্দ্রতা ও সিল্কি টেক্সচার আনে।
প্রস্তুত প্রণালী: একটি পাকা কলা চটকে তাতে দুই চামচ বিশুদ্ধ অ্যালোভেরা জেল মেশান।
এই প্যাকটি পুরো চুলে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। এরপর স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ফলাফল: মাথার ত্বক ঠান্ডা ও সতেজ থাকবে, চুলে আসবে স্বাভাবিক ঘনত্ব ও প্রাকৃতিক ঝলক।
নিয়মিত ব্যবহার করলে খুশকি ও চুল পড়ার সমস্যা কমে যাবে।
যেভাবে এই মিশ্রণগুলো কাজ করে-
কলার প্রাকৃতিক শর্করা ও তেল হেয়ার ফাইবারকে পুষ্টি দেয়, ফলে চুল ভেঙে যাওয়া কমে। দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক উপাদান মাথার ত্বকের microbiome ভারসাম্য বজায় রাখে, যা চুল পড়া রোধে গুরুত্বপূর্ণ। মধু স্ক্যাল্পে একধরনের প্রতিরোধক স্তর তৈরি করে, ফলে দূষণ ও ধুলোবালি থেকে চুল সুরক্ষিত থাকে। অ্যালোভেরার proteolytic enzymes মৃত কোষ দূর করে চুলের ফলিকল খোলে, যাতে নতুন চুল গজায়।
চুলে কলা ব্যবহারের সময় যেসব বিষয় মনে রাখবেন-
☞ সবসময় পাকা কলা ব্যবহার করুন, কাঁচা কলা আঠালো হয়ে চুলে আটকাতে পারে।
☞ মিশ্রণটি ব্লেন্ডারে মিহি করে নিন,তাহলে সহজে ধুয়ে ফেলা যায়।
☞ ব্যবহারের আগে ও পরে গরম পানি নয়, বরং কুসুম গরম বা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন।
☞ ধোয়ার পর রাসায়নিক কন্ডিশনার না দিয়ে, প্রাকৃতিক নারকেল তেল বা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন।
☞ সপ্তাহে ২–৩ বার ব্যবহারই যথেষ্ট। অতিরিক্ত ব্যবহারে স্ক্যাল্প তৈলাক্ত হতে পারে।
চুলের যত্ন মানে শুধু চকচকে দেখা নয়, বরং তার ভিতরকার স্বাস্থ্য রক্ষা করা। প্রাকৃতিক উপাদান যেমন কলা, মধু, দই ও অ্যালোভেরা একসঙ্গে মিলে শুধু বাহ্যিক উজ্জ্বলতা নয়, বরং চুলের গোড়া পর্যন্ত পুষ্টি জোগায়। অর্থাৎ, রাসায়নিক পণ্যে নয়, প্রকৃতির হাতে লুকিয়ে আছে চুলের সত্যিকারের সৌন্দর্য। তাই পরের বার যখন আয়নায় নিজের চুল দেখে মন খারাপ হবে, তখন মনে রাখুন
চুলের স্পা আপনার ঘরেই আছে, আপনার রান্নাঘরের এক কোণে থাকা একটি পাকা কলায়!
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।