পরিচিত চার দেয়ালের ভেতরে যে সহিংসতা লুকানো, তার সঙ্গে লড়াই করার কৌশল !

পরিচিত চার দেয়ালের ভেতরে যে সহিংসতা লুকানো, তার সঙ্গে লড়াই করার কৌশল !
ছবির ক্যাপশান, পরিচিত চার দেয়ালের ভেতরে যে সহিংসতা লুকানো, তার সঙ্গে লড়াই করার কৌশল !
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গার্হস্থ্য নির্যাতন বা Domestic Violence আজও বিশ্বের প্রায় সব সমাজে একটি সংবেদনশীল ও বিস্তৃত সমস্যা। এটি শুধু শারীরিক আক্রমণ নয়; মানসিক নির্যাতন, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, যৌন নিপীড়ন এবং সামাজিকভাবে অবমাননার মাধ্যমে পরিবার ও ঘরের মধ্যে ঘটে। অনেক সময় ভুক্তভোগীরা ভয়, লজ্জা বা সামাজিক চাপের কারণে এ বিষয়ে মুখ খোলে না, ফলে নির্যাতন আরও গভীর হয়ে ওঠে।

গবেষণা বলছে, গার্হস্থ্য নির্যাতন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, এটি সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বড় ঝুঁকি। নির্যাতনের শিকারদের মধ্যে বিষণ্নতা, আতঙ্ক, মানসিক চাপ এবং আত্মমর্যাদা হ্রাসের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। শিশুদের ক্ষেত্রেও, পিতামাতার মধ্যে চলা সহিংসতা তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। যেমন- ভয়, অবিশ্বাস এবং আচরণগত সমস্যা।

গার্হস্থ্য নির্যাতনের ধরন-

⇨ শারীরিক নির্যাতন: ধাক্কা, মারধর, আঘাত বা জখম করা।

⇨ মানসিক নির্যাতন: উত্যক্ত করা, অপমান করা, ভয় বা অনাস্থা সৃষ্টি করা।

⇨ যৌন নিপীড়ন: বিয়ে বা সম্পর্কের মধ্যে অনিচ্ছাকৃত যৌন আচরণ চাপিয়ে দেওয়া।

⇨ অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ: টাকা বা সম্পদের উপর একতরফা নিয়ন্ত্রণ রাখা।

⇨ সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: পরিবারের বা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বাধা দেওয়া, স্বাধীনতা হরণ।

প্রতিরক্ষা ও সচেতনতার উপায়-

১. সচেতনতা ও শিক্ষা: সবার প্রথম পদক্ষেপ হলো সচেতন হওয়া। পরিবার, স্কুল ও সামাজিক মাধ্যমে গার্হস্থ্য নির্যাতনের লক্ষণ, প্রভাব ও শিকারদের সহায়তা সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।

২. সংস্থান ও সহায়তা: অনেক দেশে নির্যাতনের শিকারদের জন্য হেল্পলাইন, সাপোর্ট গ্রুপ এবং নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন এনজিও যেমন BRAC, Acid Survivors Foundation ইত্যাদি সহায়তা দেয়। শিকাররা দ্রুত এই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করলে নিরাপত্তা ও আইনগত সহায়তা পেতে পারেন।

৩. আইনগত সুরক্ষা: বাংলাদেশের Domestic Violence (Prevention and Protection) Act, 2010 শিকারদের আইনি সুরক্ষা দেয়। মামলা, নিরাপদ আশ্রয় এবং অস্থায়ী নিষিদ্ধাদেশের মাধ্যমে নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব।

৪. মানসিক ও আবেগিক সহায়তা: সাইকোলজিকাল কাউন্সেলিং, থেরাপি ও সহায়ক গ্রুপ নির্যাতনের শিকারদের মানসিক ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতা ফিরে পেতে সহায়ক।

৫. প্রতিবেশী ও পরিবার সচেতনতা: শুক্রবারে শুধু শিকারকেই নয়, প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরাও সতর্ক থাকলে নির্যাতন চিহ্নিত করা সহজ হয়। ঘরে নীরব সহিংসতার ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ অনেক সময় প্রাণ রক্ষা করতে পারে।

দূরদর্শিতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা:

গার্হস্থ্য নির্যাতন শুধু ব্যক্তিগত সমস্যা নয়; এটি একটি সমাজ-স্বাস্থ্য বিষয়। সমাজের প্রতিটি স্তরের দায়িত্ব—শিক্ষা, সচেতনতা, আইন প্রয়োগ ও সহায়তার মাধ্যমে নির্যাতনের চক্র ভাঙা। নির্যাতনের শিকাররা যেন লজ্জা বা ভয়কে শক্তিতে পরিণত না করতে পারেন। এতে করে তারা দ্রুত সহায়তা নিতে পারবে এবং জীবনকে পুনর্গঠন করতে সক্ষম হবে।

গার্হস্থ্য নির্যাতন প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি হলো সচেতনতা, সমর্থন, আইনগত সুরক্ষা এবং মানসিক সহায়তা। প্রতিটি ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব-নীরব সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতন হয়ে দাঁড়ানো। যে কোনো নির্যাতনের ক্ষেত্রে দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং সঠিক সহায়তা নিলে, ঘরকে আবার একটি নিরাপদ ও স্নেহময় স্থান হিসেবে রক্ষা করা সম্ভব।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ