স্বাদে ধামাকা, বানাতেও সহজ: আজই জানুন চিকপির কিমার ফালাফেল রেসিপি!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মধ্যপ্রাচ্যের রাস্তায় হাঁটলে কিংবা কোনো আরবি রেস্টুরেন্টে ঢুকলে এক বিশেষ গন্ধ নাকে আসবে চিকপির (ছোলা) কিমায় তৈরি এক দারুণ ভাজা বল, নাম তার ফালাফেল (Falafel)। বাইরে খাস্তা, ভেতরে নরম ও সুগন্ধি এই খাবারটি শুধু স্বাদের জন্য নয়, পুষ্টিগুণ ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের জন্যও বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।
ফালাফেলের উৎপত্তি:
ফালাফেলের শিকড় খুঁজে পাওয়া যায় প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায়। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব যুগে মিশরের কপটিক খ্রিস্টানরা রোজার সময় মাংসের বিকল্প হিসেবে এই খাবার তৈরি করত। পরবর্তীতে এটি আরব উপদ্বীপ, লেবানন, সিরিয়া, ইসরায়েলসহ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ফালাফেল মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় প্রতিটি দেশের জাতীয় বা ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে পরিচিত।
ফালাফেলের প্রধান উপাদান হলো চিকপি বা ছোলা। এটি একটি উদ্ভিদজাত প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য, যা শরীরে শক্তি জোগায় এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ছোলার পাশাপাশি ফালাফেলে ব্যবহার করা হয় রসুন, ধনেপাতা, পার্সলে, পেঁয়াজ, জিরা ও ধনে গুঁড়া। এসব মসলা শুধু স্বাদ বাড়ায় না, বরং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার ও খনিজে ভরপুর।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ছোলায় থাকা "লেসিথিন" ও "স্যাপোনিন" উপাদান রক্তে কোলেস্টেরল কমায় এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। ফলে, ফালাফেল শুধু মুখরোচকই নয়, স্বাস্থ্যসম্মতও বটে যদি তা কম তেলে ভাজা হয়।
একটি মাঝারি আকারের ফালাফেল বল (প্রায় ৫০ গ্রাম) সরবরাহ করে
☞ প্রায় ১৩০ ক্যালরি শক্তি,
☞ ৫-৬ গ্রাম প্রোটিন,
☞ ৪ গ্রাম ফাইবার এবং
☞ অল্প পরিমাণে ফ্যাট।
এই পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, বিশেষত নিরামিষভোজীদের জন্য ফালাফেল এক অসাধারণ প্রোটিনের উৎস।
ফালাফেল ভাজার সময় মেইলার্ড রিঅ্যাকশন ঘটে। প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট একত্রিত হয়ে তাপের প্রভাবে সোনালি খাস্তা লেয়ার তৈরি করে। এই রাসায়নিক প্রক্রিয়াই ফালাফেলকে দেয় স্বাদ, সুবাস ও টেক্সচার।
ফালাফেল বানানোর সহজ রেসিপি (প্রায় ৪–৫ জনের জন্য)
উপকরণ:
⇨ শুকনো ছোলা (চিকপি) – ২ কাপ (রাতভর ভিজিয়ে রাখবেন)
⇨ পেঁয়াজ – ১ টি মাঝারি, কুঁচি করা
⇨ রসুন – ৩ কোয়া
⇨ পার্সলে – ১/২ কাপ কুঁচি করা
⇨ ধনেপাতা – ১/৪ কাপ কুঁচি করা
⇨ জিরা গুঁড়া – ১ চা চামচ
⇨ ধনে গুঁড়া – ১ চা চামচ
⇨ লবণ – স্বাদমতো
⇨ বেকিং সোডা – ১/২ চা চামচ (ভাজার সময় ফালাফেল নরম রাখতে সাহায্য করে)
⇨ তেল – ভাজার জন্য
প্রস্তুত প্রণালী:
⇨ ছোলা ভিজিয়ে রাখা: শুকনো ছোলা রাতভর পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন।
⇨ মিশ্রণ তৈরি: ভিজানো ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, পার্সলে, ধনেপাতা ও মসলা (জিরা, ধনে গুঁড়া, লবণ) ব্লেন্ডারে কুঁচি করুন। লক্ষ্য: মিশ্রণ একদম মিহি, কিন্তু পেস্টের মতো তরল নয়।
⇨ মিশ্রণে বেকিং সোডা যুক্ত করা: বেকিং সোডা নরম টেক্সচার নিশ্চিত করবে।
⇨ গোল গোল ভাজা বল তৈরি: হাত ভেজা রেখে ছোট ছোট বল তৈরি করুন।
⇨ ভাজা: পাত্রে পর্যাপ্ত তেল গরম করুন। তেল মাঝারি আঁচে গরম রাখতে হবে। ফালাফেল বলগুলো ডুবিয়ে ভাজুন যতক্ষণ না সোনালি খাস্তা হয় (~৩–৫ মিনিট)।
পরিবেশন:
পিটা ব্রেডের মধ্যে সালাদ ও তাহিনি সস দিয়ে পরিবেশন করতে পারেন। চাইলে দই বা লেবুর রস যোগ করে আরও স্বাদ বাড়ানো যায়।
আধুনিক রূপ ও স্বাস্থ্যসম্মত টিপস!
⇨ ওভেনে বেক করা ফালাফেল: তেল কমাতে ২০০°সেলসিয়াসে ২০ মিনিট বেক করা যায়।
⇨ হালকা তেলের ব্যবহার: ফ্রায়িংয়ের পরিবর্তে এয়ার ফ্রায়ার ব্যবহার করলে স্বাদ একই থাকে, কিন্তু ক্যালরি কমে।
⇨ বিভিন্ন মসলা ব্যবহার: লেবুর খোসার কুঁচি, মরিচের গুঁড়া বা গরম মসলা যোগ করলে স্বাদ বৈচিত্র্য আসে।
ফালাফেল কেবল একটি খাবার নয়; এটি ইতিহাস, পুষ্টি, বিজ্ঞান ও স্বাদের এক অনন্য মেলবন্ধন। চিকপি-ভিত্তিক এই খাবার স্বাস্থ্যকর, প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং সহজে তৈরি। বাইরের খাস্তা স্তর, ভেতরের নরমতা এবং মসলার সুবাস! সবমিলিয়ে ফালাফেলকে করে বিশ্বজুড়ে ভেগান এবং নিরামিষভোজীদের প্রিয় খাবার।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।