বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি: দুই দিনেই টিকা নিয়েছে ৩২ লাখের বেশি শিশু

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে শুরু হয়েছে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি, যা দেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত দুই দিনে সারা দেশে ৩২ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি শিশু, কিশোর ও কিশোরী এই টিকা গ্রহণ করেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, এই টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কার্যকর, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কর্তৃক যাচাই করা এবং সৌদি হালাল সেন্টার থেকে হালাল সনদপ্রাপ্ত। টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে WHO এবং ইউনিসেফ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যাতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের টিকা দিতে আগ্রহী হন এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রভাব থেকে দূরে থাকেন।
তবে এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বা শিশুদের টিকা না দিতে উৎসাহিত করছেন, যার ফলে কিছু অভিভাবকের মনে দ্বিধা তৈরি হয়েছে। “এখনই টিকা দেওয়া ঠিক হবে কি না” বা “পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে কি না” , এমন নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এসব উদ্বেগকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন। তাদের মতে, টাইফয়েড টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং দীর্ঘমেয়াদে শিশুদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কোভিড-পরবর্তী সময়ে টিকা নিয়ে জনগণের একাংশের মধ্যে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, সেটিই এই বিভ্রান্তির মূল কারণ।
ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) প্রোগ্রামের ম্যানেজার ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, “আমরা দেখছি কিছু অভিভাবক প্রথম দিকে একটু অপেক্ষা করছেন,দেখি অন্যদের কী হয়। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই এই দ্বিধা কেটে যাবে। আমরা আশাবাদী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব শিশুকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে।”
সরকারের লক্ষ্য, ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশু-কিশোরকে বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকা প্রদান করা। পুরো টিকাদান কার্যক্রম চলবে ১৮ দিনব্যাপী,১৩ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই টিকাদান কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন হলে বাংলাদেশে টাইফয়েড জ্বরের সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে, যা এখনো দেশের শিশুদের মধ্যে অন্যতম প্রধান সংক্রমণজনিত রোগ হিসেবে বিবেচিত।
সরকারের এই ঐতিহাসিক উদ্যোগ দেশের জনস্বাস্থ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সচেতন নাগরিকরা বলছেন, এখন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্যের পরিবর্তে সঠিক সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার,যাতে প্রতিটি শিশু নিরাপদ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যেতে পারে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।