মহাশূন্যে আগুনের গ্রহনৃত্য! বৃহস্পতির চাঁদ Io আবারও বিস্ফোরিত হচ্ছে নতুন শক্তিতে
 
                                        
                                    - Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
অসীম অন্ধকার মহাশূন্যে বৃহস্পতির চারপাশে ঘূর্ণায়মান এক উজ্জ্বল, জ্বলন্ত চন্দ্র Io (আইও)। এটি যেন এক মহাজাগতিক বিস্ময় এক চাঁদ, যার বুকের ভেতর ফুঁসছে আগুন, যার পৃষ্ঠে নিরন্তর বিস্ফোরিত হচ্ছে গলিত শিলা, আর যার প্রতিটি লাভার নদী যেন সৌরজগতের প্রাচীন ইতিহাসের প্রতিধ্বনি শোনায়। সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের নতুন পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে, এই Io এখনো ভূতাত্ত্বিকভাবে জীবন্ত, এবং এর আগ্নেয় বিস্ফোরণ এখনো তীব্র ও সক্রিয়। এই সন্ধান শুধু এক চাঁদের অগ্নিময় বাস্তবতাই নয়, বরং আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মহাবিশ্বের নীরবতা আসলে কখনোই সত্যিকারের নীরব নয়।
Io-র এই বিস্ময়কর আগ্নেয় ক্রিয়ার পেছনে রয়েছে এক জটিল কিন্তু মোহনীয় প্রক্রিয়া- জোয়ারীয় তাপ বা tidal heating। বৃহস্পতির বিশাল মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও তার প্রতিবেশী চাঁদ ইউরোপা ও গ্যানিমিডের টানাপোড়েনের ফলে Io-র অভ্যন্তর যেন এক "চাপা আগ্নেয়গিরি"র মতো প্রতিনিয়ত প্রসারিত ও সংকুচিত হয়। এই অবিরাম টানাপোড়েন থেকে উৎপন্ন ঘর্ষণ তাপ Io-র অভ্যন্তরে পাথর গলিয়ে দেয়, আর তার ফলেই গঠিত হয় আগুনে ভরা লাভার মহাসমুদ্র। বিজ্ঞানীরা বলেন, Io এমন একটি চাঁদ যেখানে হাজার হাজার সক্রিয় আগ্নেয়গিরি একসঙ্গে কাজ করছে একটি চলমান, জীবন্ত ল্যাবরেটরির মতো, যা সৌরজগতের গঠন ও বিকাশের রহস্য খুলে দিচ্ছে টুকরো টুকরো আগুনের আকারে।
নতুন ইনফ্রারেড পর্যবেক্ষণ ও টেলিস্কোপিক চিত্রে দেখা গেছে, Io-র দক্ষিণ অঞ্চলে তীব্র তাপমাত্রা পরিবর্তন ও গলিত শিলার নতুন প্রবাহ সৃষ্টি হচ্ছে। ইনফ্রারেড সেন্সরগুলো জানিয়েছে, এই তাপমাত্রা স্থির নয়, বরং প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। এর মানে, সেখানে নতুন আগ্নেয় বিস্ফোরণ ঘটছে এই মুহূর্তেও। কিছু লাভার প্রবাহ কয়েকশ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত, এবং গ্যাস নির্গত হচ্ছে শত শত কিলোমিটার উচ্চতায়। সেই গ্যাসে প্রধান উপাদান সালফার ডাইঅক্সাইড, যা সূর্যের আলোয় প্রতিক্রিয়া করে Io-র সেই বিখ্যাত কমলা-হলুদ আভা তৈরি করে, যেন এক বিশাল আগুনে মোড়া চাঁদ!
যেখানে পৃথিবীর আগ্নেয়গিরি শতাব্দীতে একবার জেগে ওঠে, সেখানে Io-র বুক চিরে প্রতিদিনই নতুন আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ ঘটছে। Io-র লাভার তাপমাত্রা ১,৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যা পৃথিবীর লাভার চেয়ে প্রায় ৪০০ ডিগ্রি বেশি। এর ফলে Io-র পৃষ্ঠে স্থায়ী কোনো গঠন টিকে থাকে না; প্রতিটি বিস্ফোরণে বদলে যায় তার ভূদৃশ্য, গঠিত হয় নতুন পর্বত, নতুন উপত্যকা এবং নতুন "লাভার নদী"— যেন এক চিরবহমান রূপান্তরের নাট্যমঞ্চ, যেখানে আগুনই একমাত্র ভাষা।
Io বিজ্ঞানীদের কাছে শুধু এক চাঁদ নয়, বরং এক প্রাকৃতিক জিওফিজিক্যাল ল্যাবরেটরি।
এখানে দেখা যায়, কীভাবে মহাকর্ষীয় শক্তি একটি নির্জীব পাথুরে উপগ্রহকে তপ্ত, চলমান ভূত্বকসমৃদ্ধ জগতে রূপান্তরিত করতে পারে। Io-র গবেষণা আমাদের জানাতে পারে
পৃথিবীর প্রাথমিক আগ্নেয় যুগে ভূত্বক কীভাবে তৈরি হয়েছিল এবং অন্যান্য দূরবর্তী গ্রহ বা এক্সোপ্ল্যানেটের ভেতরে কেমন তাপীয় গতি কাজ করছে। এছাড়া, Io-র চারপাশে নির্গত সালফার গ্যাস বৃহস্পতির ম্যাগনেটোস্ফিয়ারকে প্রভাবিত করে গঠন করছে এক উজ্জ্বল আয়ন বলয় - Io Plasma Torus, যা সৌরজগতের অন্যতম চমকপ্রদ ইলেকট্রিকাল গঠন।
Io আমাদের শেখায়- মহাবিশ্ব কখনো নিস্তব্ধ নয়। অন্ধকারের ভেতরেও কোথাও না কোথাও জ্বলছে গলিত আগুন, জন্ম নিচ্ছে নতুন জগৎ, আর ভেঙে যাচ্ছে পুরনো কাঠামো। এই চাঁদ যেন এক মহাজাগতিক হৃদস্পন্দন, যেখানে প্রতিটি আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ মনে করিয়ে দেয়, মহাশূন্য মানেই মৃত্যু নয়; বরং সেখানে চলছে এক অনন্ত শক্তির জীবনচক্র যা সৃষ্টি করে, ধ্বংস করে, আবার নতুন করে জেগে ওঠে আগুনের আলোয়।আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।
 
                                 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    