NASA-এর সুপারিশকৃত এই গাছগুলো দূষণ কমাবে আর ফুসফুসকে দেবে নতুন শক্তি!

NASA-এর সুপারিশকৃত এই গাছগুলো দূষণ কমাবে আর ফুসফুসকে দেবে নতুন শক্তি!
ছবির ক্যাপশান, NASA-এর সুপারিশকৃত এই গাছগুলো দূষণ কমাবে আর ফুসফুসকে দেবে নতুন শক্তি!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

প্রতিদিন আমরা শ্বাস নিচ্ছি এমন বাতাসে যা হয়তো অদৃশ্যভাবে আমাদের শরীরকে বিষাক্ত করে তুলছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিরাপদ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ধোঁয়া, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, ফরমালডিহাইড, টলুইন, বেনজিন, অ্যামোনিয়া এসব ক্ষতিকর উপাদান নিঃশব্দে প্রবেশ করছে আমাদের ফুসফুসে, মস্তিষ্কে ও রক্তে। কিন্তু এই ভয়াবহ বাস্তবতার মধ্যেই প্রকৃতি আমাদের দিয়েছে এক অবাক করা প্রতিরোধ, গাছ। বিশেষ কিছু উদ্ভিদ ঘরের বা বাইরের বাতাস থেকে এই বিষাক্ত উপাদানগুলো শোষণ করে ফেলে, বাতাসকে করে তোলে বিশুদ্ধ ও শ্বাসযোগ্য। আর এই সত্যটিই প্রমাণ করেছে নাসার ঐতিহাসিক গবেষণা যা আজও পরিবেশবিজ্ঞান ও স্থাপত্যে একটি যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত।

১৯৮৯ সালে নাসা ও মার্কিন স্পেস রিসার্চ সেন্টার এক যৌথ প্রকল্পে ঘরের বায়ু বিশুদ্ধ করার প্রাকৃতিক উপায় খুঁজতে শুরু করে। মূল লক্ষ্য ছিল মহাকাশযানের ভেতরে সীমিত পরিবেশে বায়ুর মান বজায় রাখা। নাসা দেখতে চায়, কিছু নির্দিষ্ট উদ্ভিদ কি ঘরের বাতাস থেকে টক্সিন ও রাসায়নিক দূষণ শোষণ করতে পারে কি না। প্রায় ১০০ টিরও বেশি উদ্ভিদ পর্যবেক্ষণের পর তারা আবিষ্কার করেন, কিছু সাধারণ ইনডোর গাছ আশ্চর্য দক্ষতায় ফরমালডিহাইড, বেনজিন, অ্যামোনিয়া ও ট্রাইক্লোরোইথিলিন শোষণ করতে পারে। গবেষণাটি পরবর্তীতে "NASA Clean Air Study" নামে পরিচিত হয় এবং বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে।

কীভাবে তারা দূষণ শোষণ করে?

প্রতিটি গাছই এক জীবন্ত রাসায়নিক কারখানা। তাদের পাতায় থাকা ক্ষুদ্র ছিদ্র (stomata) দিয়ে তারা বাতাস টেনে নেয় এবং এর ভেতর থাকা গ্যাস ও টক্সিনগুলোকে শোষণ করে। এরপর শিকড়ের আশেপাশের ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব সেই টক্সিনগুলোকে রাসায়নিকভাবে ভেঙে ফেলে নিরাপদ যৌগে পরিণত করে। এই পুরো প্রক্রিয়াকে বলা হয় Phytoremediation অর্থাৎ, উদ্ভিদের মাধ্যমে দূষণ শোষণ ও বিশুদ্ধিকরণ। গাছ বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন নিঃসরণ করে,এটা আমরা জানি। কিন্তু অনেকে জানেন না, অনেক উদ্ভিদ রাতেও ক্ষতিকর গ্যাস টেনে নেয়, এমনকি কিছু প্রজাতি নাইট শিফটের মতো কাজ করে!

যেসব গাছ দূষণ শোষণে সবচেয়ে কার্যকর-

নাসার মতে, নিচের কিছু গাছ বায়ু দূষণ পরিশোধনে বিশেষভাবে কার্যকর

১।  স্পাইডার প্ল্যান্ট (Spider Plant) – কার্বন মনোক্সাইড ও জাইলিন শোষণে দক্ষ।

২। স্নেক প্ল্যান্ট (Snake Plant / Mother-in-law's Tongue) – রাতেও অক্সিজেন ছাড়ে এবং ফরমালডিহাইড শোষণ করে।

৩।  পিস লিলি (Peace Lily) – ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া কমায়, বেনজিন ও টলুইন শোষণে কার্যকর।

৪। অ্যালোভেরা (Aloe Vera) – শুধু ত্বক নয়, বাতাস থেকেও বিষাক্ত গ্যাস ফিল্টার করে।

৫। আরেকা পাম (Areca Palm) – প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বাড়ায় এবং অ্যামোনিয়া শোষণ করে।

৬। মানি প্ল্যান্ট (Money Plant) – ফরমালডিহাইড ও বেনজিন অপসারণে অত্যন্ত কার্যকর।

৭। রাবার প্ল্যান্ট (Rubber Plant) – বায়ু থেকে টক্সিন শোষণ করে, পাশাপাশি ঘরের অক্সিজেনের ভারসাম্য রাখে।

এই উদ্ভিদগুলো কেবল সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং ঘরের অভ্যন্তরে এক প্রাকৃতিক ফিল্টার হিসেবে কাজ করে।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ১৮০ বর্গফুটের ঘরে ৬ থেকে ৮টি এই ধরনের গাছ রাখলে বায়ুর গুণমান ৪০–৬০ শতাংশ পর্যন্ত উন্নত হতে পারে। শুধু তাই নয়

⇨ কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা কমে যায়।

⇨ মাথাব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি হ্রাস পায়।

⇨ ঘরের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।

এগুলো কেবল বাড়ির সাজসজ্জাই নয়, বরং ঘরের অভ্যন্তরে এক নীরব 'এয়ার পিউরিফিকেশন সিস্টেম'।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, শহুরে জীবনযাপনে যেহেতু আমরা ক্রমশ কৃত্রিম বদ্ধ স্থানে বাস করছি—অফিস, অ্যাপার্টমেন্ট, শপিং মল- তাই "ইনডোর এয়ার কোয়ালিটি" এখন এক গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য ইস্যু। নাসার গবেষণা এই ইঙ্গিত দিয়েছে যে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকা মানেই শুধু মানসিক প্রশান্তি নয়। এটি জীববিজ্ঞানের দিক থেকেও এক কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থা।

যেখানে যন্ত্র, গাড়ি, কারখানা আর শহুরে ধোঁয়ায় বায়ু প্রতিনিয়ত বিষাক্ত হচ্ছে, সেখানে এক টুকরো সবুজ গাছই হতে পারে আমাদের প্রাণরক্ষাকারী ঢাল। গাছ শুধু ছায়া দেয় না, বরং শ্বাসের অধিকার রক্ষা করে। একটি স্পাইডার প্ল্যান্ট বা পিস লিলি হয়তো কোনো বড় কারখানার চিমনি থামাতে পারবে না, কিন্তু সেটি আপনার ঘরের বাতাসে ফেলে যাওয়া বিষ নিঃশেষ করে দিতে পারে নিঃশব্দে। নাসার গবেষণা আমাদের মনে করিয়ে দেয়— "প্রকৃতি আমাদের বিরুদ্ধে নয়; বরং এখনো আমাদের জন্যই কাজ করছে।" তাই এখনই সময় ঘরে ফিরিয়ে আনি সেই সবুজ যোদ্ধাদের, যারা প্রতিটি নিঃশ্বাসে আমাদের জীবনকে রাখছে একটু বেশি নির্মল, একটু বেশি জীবন্ত।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ