মানুষের চোখে প্রযুক্তির বিপ্লব স্মার্ট লেন্স খুলে দিচ্ছে নতুন যুগের দরজা !

মানুষের চোখে প্রযুক্তির বিপ্লব স্মার্ট লেন্স খুলে দিচ্ছে নতুন যুগের দরজা !
ছবির ক্যাপশান, মানুষের চোখে প্রযুক্তির বিপ্লব স্মার্ট লেন্স খুলে দিচ্ছে নতুন যুগের দরজা !
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

কল্পনা করুন! -কোনো মোবাইল বা স্মার্ট ঘড়ি ছাড়াই, আমাদের চোখেই দেখা যাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা, চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ হারে চলমান কিছু ডেটা। এই ভবিষ্যতের প্রযুক্তিই ধাপে ধাপে হয়ে উঠছে বাস্তব - স্মার্ট কন্ট্যাক্ট লেন্স নামে পরিচিত একধরনের উন্নত লেন্স, যা শুধু দৃষ্টির শোধনাই নয়, তথ্য ও স্বাস্থ্য বিচারে এক নতুন দিগন্ত খুলছে।

স্মার্ট লেন্স কী?

সাধারণ কন্ট্যাক্ট লেন্সের মতোই এটি চোখের সামনে বসানো হয়, তবে এর ভেতরে ন্যানো-স্কেলের সেন্সর, চিপ, ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন মডিউল ও জৈব উপাদানের সমাহার থাকে। 

প্রযুক্তিগত ভিত্তি ও কাজের ধরণ-

১. বায়ো–সেন্সর (Biosensors): এই লেন্সগুলো চোখের পানি  থেকে প্রতিনিয়ত প্রাপ্ত জীবামূলক সূচক পরিমাপ করতে পারে।  যেমন - গ্লুকোজ, ল্যাকটেট, ইলেকট্রোলাইট, প্রোটিন ইত্যাদি। 

২. ইনট্রা–অকুলার চাপ (IOP) মাপা: গ্লুকোমা রোগে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ উঠেছে কি না, তা সময়মতো জানতে হলে IOP পরিমাপ জরুরি। স্মার্ট লেন্স স্থায়ীভাবে এই চাপ মাপতে পারে, যা রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। 

৩. তথ্য প্রদর্শন (Display / AR): কিছু উন্নত স্মার্ট লেন্সে ন্যানো ডিসপ্লে রাখা যেতে পারে, যা চোখের ভেতরেই তথ্যকে "হলিউড স্টাইলে" দেখা যাবে, কাছাকাছি একটি ভার্চুয়াল স্ক্রিনের মতো।
এই ডিসপ্লেতে সিগন্যাল, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অ্যালার্ম, নেভিগেশন নির্দেশিকা ইত্যাদি দেখানো হতে পারে একটি চশমার ডিসপ্লে বা স্মার্টগ্লাসের চেয়ে অনেক বেশি স্বল্প পথে ও সূক্ষ্মভাবে। 

৪. শক্তি ও যোগাযোগ (Power & Communication): এই লেন্সকে কাজ করাতে শক্তি লাগবে। প্রচলিত ব্যাটারি অপশন কঠিন হবে, তাই গবেষকরা শক্তি হারভেস্টিং পন্থা (চোখের পানি থেকে বিদ্যুৎ, পলস ক্ষুদ্র আন্দোলন থেকে শক্তি) বা ন্যানো–আকৃতি রিসিভার কুণ্ডলী  ব্যবহার নিয়ে কাজ করছেন। তথ্য প্রেরণ করা হবে ওয়্যারলেস (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক coupling) প্রযুক্তির মাধ্যমে। 

সম্ভাবনা -

⇨ রোগের আগে ধরা, যেমন- চোখের পানি থেকেও দেহের অবস্থা জানা যাবে। উদাহরণ - ডায়াবেটিস, হ্রদরোগ, খাদ্যনালার ব্যাধি ইত্যাদি।

⇨ রোগ পরিচালনায় সুবিধা অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে তথ্য পাওয়া যাবে। উদাহরণ - গ্লুকোজ, চাপ বা চোখের অগ্নিকোষের অবস্থা, সেটা হাসপাতালে না গিয়েই জানা।

⇨ যেসব কাজগুলোর জন্য চোখের সামনে তথ্য লাগবে, যেমন - নেভিগেশন, বার্তা, রিয়েল টাইম তথ্য, সেসব চোখ থেকেই দেখা যাবে। 

চ্যালেঞ্জ :

⇨ লেন্সের উপাদান চোখের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে - রোগ, জ্বালা বা অ্যালার্জি সৃষ্টি করবে না।

⇨ ক্ষুদ্র আয়তনে সেন্সর, চিপ ও শক্তি ইউনিট বসানো ও কার্যকর দক্ষতার সঙ্গে চালানো বড় চ্যালেঞ্জ।

⇨ চোখ ও দেহের অন্যান্য অংশ দিয়ে তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণে হস্তক্ষেপ কম রাখতে হবে।

⇨ চিকিৎসাগত পরীক্ষার মানদণ্ড পূরণ করা, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অফিসিয়াল অনুমোদন ( FDA, EMA) পেতে হবে।

⇨ কোন তথ্য সংগ্রহ হবে, কীভাবে সংরক্ষণ হবে, প্রত্যেক ব্যক্তির গোপন তথ্য রক্ষা করাও অপরিহার্য।

ভবিষ্যতের দৃশ্য-

একাধিক স্টার্টআপ ও গবেষণাগোষ্ঠী স্মার্ট লেন্সে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে।

একটি প্রতিষ্ঠান "Xpanceo" গত বছরই ২৫০ মিলিয়ন ডলার তহবিল উত্তোলন করেছে এরকম লেন্স উন্নয়নের উদ্দেশ্যে। আর আরও সাম্প্রতিকভাবে, MXene-ভিত্তিক স্মার্ট লেন্স তৈরি হচ্ছে এগুলো নমনীয় ও অত্যন্ত পরিবাহক (conductive) উপাদান ব্যবহার করে হবে, এবং এই ধরণের লেন্সে গ্লুকোজ, চাপ, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কার্যাবলী একত্রিত করার সম্ভাবনা আছে। 

স্মার্ট লেন্স হলো চোখের নতুন বিবর্তন, শুধু দেখার যন্ত্র নয়, সঙ্গে স্বাস্থ্য, তথ্য ও প্রযুক্তির সেতুবন্ধ। যদিও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং গবেষণা প্রয়াসের একযোগে, সোনার দিনের মতো এক-দিন হবে যখন চোখই আমাদের ডেটা স্ক্রিন ও স্বাস্থ্য স্টেশন।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ