চোখে যা দেখো, সবই কি সত্যি? 'A Beautiful Mind' নিয়ে যায় মস্তিষ্কের বিভ্রমের জগতে !

চোখে যা দেখো, সবই কি সত্যি? 'A Beautiful Mind' নিয়ে যায় মস্তিষ্কের বিভ্রমের জগতে !
ছবির ক্যাপশান, চোখে যা দেখো, সবই কি সত্যি? 'A Beautiful Mind' নিয়ে যায় মস্তিষ্কের বিভ্রমের জগতে !
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত A Beautiful Mind শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি মস্তিষ্কের রহস্যময় বাস্তবতার গভীরে এক যাত্রা। বাস্তব জীবনের নোবেলজয়ী গণিতবিদ জন ফোর্বস ন্যাশ জুনিয়র–এর জীবন অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমা দেখায়, মানসিক অসুস্থতা ও প্রতিভা একে অপরের বিপরীত নয়; বরং কখনও কখনও তারা একই মস্তিষ্কে সহাবস্থান করে। জন ন্যাশ ছিলেন এমন এক ব্যক্তি, যিনি একদিকে অর্থনীতির জটিল গাণিতিক সমীকরণে বিপ্লব ঘটিয়েছেন, অন্যদিকে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে লড়েছেন নিজের তৈরি এক বিভ্রমজগতের সঙ্গে।

স্কিৎজোফ্রেনিয়া হলো এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী মানসিক ব্যাধি, যেখানে মস্তিষ্কের ডোপামিন ও গ্লুটামেট নামের নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে মস্তিষ্ক বাস্তবতা ও কল্পনার মধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। রোগী এমন কিছু "দেখতে" বা "শুনতে" পান যা বাস্তবে নেই,  একে বলে হ্যালুসিনেশন বা ভ্রম। এই অবস্থায় মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (যা সিদ্ধান্ত নেওয়া, যুক্তি বিশ্লেষণ ও বাস্তবতা যাচাইয়ের কাজ করে) তুলনামূলকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। ফলে রোগী নিজের চিন্তাকেই বাস্তব বলে ধরে নেয়।

A Beautiful Mind সিনেমার এক চমকপ্রদ দিক হলো,  দর্শকরাও জন ন্যাশের সঙ্গে সঙ্গে বিভ্রান্ত হয়। তাঁর "গুপ্তচর সংস্থা" বা "গোপন মিশন" সবই মস্তিষ্কের তৈরি বিভ্রম, যা তিনি বিশ্বাস করতেন নিখুঁত বাস্তবতা।

গবেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত সৃজনশীলতা বা বিশ্লেষণধর্মী চিন্তার সঙ্গে স্কিৎজোফ্রেনিয়ার কিছু মানসিক বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে। অতিমাত্রায় সক্রিয় নিউরাল সংযোগ কখনও কখনও মস্তিষ্কে নতুন ধারণা তৈরির পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় সংযোগও তৈরি করে, যা বিভ্রমের জন্ম দেয়। ন্যাশের ক্ষেত্রে এই 'হাইপার অ্যাসোসিয়েশন' তাঁকে একদিকে দিয়েছে সৃষ্টিশীল প্রতিভা, অন্যদিকে এনেছে মানসিক সংগ্রাম।

ন্যাশের জীবন প্রমাণ করে, মানসিক অসুস্থতা থাকা মানে জীবন শেষ নয়। চিকিৎসা, পরিবার ও সামাজিক সহায়তা- এই তিনটি উপাদান মানসিক পুনরুদ্ধারের মূল শক্তি। ন্যাশের স্ত্রী অ্যালিসিয়া তাঁর পাশে থেকেছেন অবিচলভাবে, যা সিনেমায় এক গভীর মানবিক বার্তা দেয় - ভালোবাসাই মানসিক আরোগ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী ওষুধ!

আজকের বিজ্ঞান বলছে, নিয়মিত চিকিৎসা, ওষুধ, থেরাপি ও সচেতন জীবনযাপন স্কিৎজোফ্রেনিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। অর্থাৎ, এটি অপ্রতিরোধ্য নয়, যদি সময়মতো সনাক্ত ও সহায়তা দেওয়া যায়।

১৯৯৪ সালে জন ন্যাশ নোবেল পুরস্কার পান অর্থনীতিতে। তাঁর "ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম" শুধু গেম থিওরি নয়, মানব আচরণের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে এক বৈপ্লবিক তত্ত্ব। সিনেমাটি মনে করিয়ে দেয় একজন মানসিক রোগীও বিশ্বকে বদলে দিতে পারে, যদি তাকে "রোগী" নয়, "মানুষ" হিসেবে দেখা হয়।

A Beautiful Mind হলো এক জীবন্ত প্রমাণ যে, মনের অন্ধকার মানেই জীবনের শেষ নয়। বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়া, মানসিক সহানুভূতি ও পারিবারিক ভালোবাসা মিলেই গড়ে ওঠে এক সুন্দর পুনর্জীবন। জন ন্যাশের মতো প্রতিটি মানুষই আমাদের শেখায়-প্রতিভা কখনও নিঃশেষ হয় না, কেবল বোঝাপড়ার অপেক্ষায় থাকে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ