'লিচু টমেটো' নাম শুনেছেন? এই বিদেশি ফলেই আছে ত্বক ও রোগপ্রতিরোধের গোপন রহস্য

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
টমেটোর মতো দেখতে, লিচুর মতো রঙিন আর স্বাদে টক-মিষ্টির এক অনন্য মিশ্রণ, এই হচ্ছে লিচু টমেটো বা ট্যামারিলো (Tamarillo)। দক্ষিণ আমেরিকার অ্যান্ডিজ পর্বতমালার দেশগুলোতে বহুদিন ধরে এটি "গোল্ডেন অ্যাপল অব দ্য ইনকা" নামে পরিচিত। এখন ধীরে ধীরে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এমনকি এশিয়ার কিছু দেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই ফল। পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে ট্যামারিলো আজ হয়ে উঠছে আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞানের আলোচিত এক ফল।
ট্যামারিলো দেখতে অনেকটা ছোট টমেটোর মতো হলেও, এর খোসা মসৃণ ও চকচকে। ফলের রঙ হতে পারে গা লাল, কমলা, বা সোনালি হলুদ। প্রজাতি অনুযায়ী এদের ভিন্নতা দেখা যায়। এর ভেতরের শাঁস নরম, হালকা টক-মিষ্টি এবং সুগন্ধে ভরপুর। এর বৈজ্ঞানিক নাম Solanum betaceum, এটি টমেটো, বেগুন ও আলুর মতোই "নাইটশেড" পরিবারভুক্ত। ফলের ভেতরের অংশে অসংখ্য ক্ষুদ্র কালো বীজ থাকে, যা খাওয়ার উপযোগী। স্বাদে কেউ কেউ একে বলেন "টমেটো আর প্যাশন ফলের মিশ্রণ"।টক-মিষ্টির ভারসাম্যই এর প্রধান আকর্ষণ।
ট্যামারিলো শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিতেও ভরপুর।
যেন একটি পুষ্টিগুণের ভাণ্ডার! এতে থাকে-
☞ ভিটামিন C: প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে প্রায় ৩০–৩৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও ত্বকে কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে।
☞ ভিটামিন A: চোখের দৃষ্টি, ত্বক ও ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত রাখে।
☞ পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
☞ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Anthocyanin, Phenolic compounds): এগুলো কোষের ক্ষয় রোধ করে, বার্ধক্য বিলম্বিত করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।
☞ কম ক্যালোরি, উচ্চ ফাইবার: ডায়েটারি ফাইবার হজমে সাহায্য করে ও শরীরের চর্বি জমা কমায়।
এর স্বাস্থ্য উপকারিতা-
১️/ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। উচ্চ ভিটামিন সি কনটেন্ট শরীরে শ্বেত রক্তকণিকার কাজ বাড়িয়ে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। ঠান্ডা, জ্বর বা ভাইরাল সংক্রমণ থেকে দ্রুত সেরে উঠতেও সাহায্য করে।
২️/ হৃদরোগ প্রতিরোধে দারুণ ভূমিকা রাখে!
ট্যামারিলোতে থাকা পটাশিয়াম রক্তনালিকে শিথিল করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। পাশাপাশি ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট "খারাপ কোলেস্টেরল" (LDL) কমাতে সাহায্য করে।
৩️/ এটি ত্বক ও চুলের যত্নেও অনন্য! ভিটামিন A ও C ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সহায়ক, ফলে ত্বক থাকে উজ্জ্বল ও মসৃণ। চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায়, চুল পড়া রোধে সহায়তা করে।
৪️/ ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ট্যামারিলোতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার কিন্তু খুব কম ক্যালোরি। এটি ক্ষুধা কমায় এবং শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৫️/ চোখ ও দৃষ্টিশক্তির জন্য উপকারী
ভিটামিন A ও বিটা-ক্যারোটিন চোখের রেটিনা সুস্থ রাখে ও রাতকানা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
খাওয়ার উপায় ও ব্যবহার:
খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের শাঁস চামচে করে সরাসরি খাওয়া যায়। ফলটি সালাদ, স্মুদি, জুস বা ডেজার্টে চমৎকার মানিয়ে যায়। টক-মিষ্টি স্বাদের জন্য ট্যামারিলো দিয়ে জ্যাম, চাটনি বা সসও তৈরি করা হয়।
দক্ষিণ আমেরিকায় অনেক জায়গায় এটি "টমেটো জুসের বিকল্প" হিসেবেও জনপ্রিয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ট্যামারিলোর খোসা কিছুটা তিতকুটে স্বাদের, তাই খাওয়ার আগে খোসা ছাড়ানোই উত্তম।
গবেষণায় দেখা গেছে, ট্যামারিলোর লাল রঙের প্রজাতিতে অ্যান্থোসায়ানিনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, যা কোষে মুক্ত মূলক (free radical) নাশ করে। এছাড়া ফলটির বীজে প্রাকৃতিক তেল রয়েছে, যাতে ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে—যা মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের জন্য উপকারী। কিছু ল্যাব পরীক্ষায় আরও দেখা গেছে, ট্যামারিলো এক্সট্র্যাক্ট রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে—যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভবিষ্যৎ গবেষণার সম্ভাবনা জাগাচ্ছে।
চাষ ও প্রাপ্যতা:
ট্যামারিলো গাছ মূলত উষ্ণ-নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে ভালো জন্মে। বর্তমানে নিউজিল্যান্ড, পেরু, কলম্বিয়া, ভারত ও থাইল্যান্ডে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশেও পার্বত্য বা অল্প ঠান্ডা এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা সম্ভব, কারণ এটি মাটির গুণাগুণে খুব বেশি নির্ভরশীল নয়।
লিচু টমেটো বা ট্যামারিলো শুধু এক্সোটিক ফল নয়, এটি ভবিষ্যতের "সুপারফ্রুট" হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। মিষ্টি-টক স্বাদ, উজ্জ্বল রঙ ও প্রচুর ভিটামিন সি–এর সমন্বয়ে এই ফল একদিকে যেমন রসনাকে তৃপ্ত করে, অন্যদিকে শরীরেও আনে পুষ্টির ভারসাম্য। প্রকৃতির এমন এক ফল, যা চেনা-অচেনার সীমানা ভেঙে আমাদের খাদ্যতালিকায় জায়গা নিতে পারে নিঃসন্দেহে- রঙে টমেটো, স্বাদে লিচু, আর গুণে ভিটামিনের ভাণ্ডার!আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।