গোলাপি রঙের এই গাছই ঘরে আনবে প্রাণ ও প্রশান্তি জানুন 'পিংক লেডি'-র রহস্য !

গোলাপি রঙের এই গাছই ঘরে আনবে প্রাণ ও প্রশান্তি জানুন 'পিংক লেডি'-র রহস্য !
ছবির ক্যাপশান, গোলাপি রঙের এই গাছই ঘরে আনবে প্রাণ ও প্রশান্তি জানুন 'পিংক লেডি'-র রহস্য !
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ঘরের প্রতিটি কোণ, বারান্দা বা ডেস্ক যেখানে রাখা হয় পিংক লেডি প্ল্যান্ট, সেই জায়গা মুহূর্তেই হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত ও রঙিন। গোলাপি-সবুজ পাতার এই সাক্যুলেন্ট শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়, বরং ঘরের বাতাসেও প্রাকৃতিক সতেজতা আনে। তবে এই সৌন্দর্য ধরে রাখতে এবং গাছকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন সঠিক যত্ন, পর্যাপ্ত আলো ও বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়া।

পিংক লেডি মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার শুষ্ক এলাকায় জন্ম নেয়। এটি Crassulaceae পরিবারের সাক্যুলেন্ট, যার পাতায় জল সংরক্ষণের ক্ষমতা রয়েছে। পাতার কিনারা গোলাপি বা লালাভ, মাঝখান সবুজ। এই রঙের বৈচিত্র্য আলো এবং তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। যথেষ্ট সূর্যালোক এবং কম আর্দ্রতা থাকলে পাতার গোলাপি রঙ আরও উজ্জ্বল হয়। পাতার আকার ছোট, সামান্য দাগযুক্ত ও ঘন যা গাছটিকে দারুণ নান্দনিকতা দেয়। সঠিক যত্নে গাছ বছরের পর বছর ঘরে প্রাণ ধরে রাখতে পারে।

পিংক লেডি ভালোভাবে বাড়ে উজ্জ্বল কিন্তু সরাসরি না পড়া আলোতে। জানালার পাশে রাখলে সকালের নরম রোদ পুরো গাছকে প্রাণবন্ত করে। বাহিরে রাখলে আংশিক ছায়াযুক্ত স্থান নির্বাচন করা জরুরি, কারণ দুপুরের তীব্র রোদ পাতাকে পোড়াতে পারে। পর্যাপ্ত আলো না পেলে পাতার গোলাপি রঙ ফিকে হয়ে সবুজ হয়ে যায়। গাছকে রঙিন রাখতে নিয়মিত আলো পাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

পিংক লেডি হলো সাক্যুলেন্ট, পাতার ভেতর পানি জমে থাকে। পুরো মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিতে হবে। অতিরিক্ত পানি দিলে মূল পচে যেতে পারে। শীতে পানি দেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে, কারণ গাছের বৃদ্ধি ধীর হয়। "Soak and Dry" পদ্ধতি মানলে গাছ সুস্থ থাকে, মাটিকে পুরোপুরি ভিজিয়ে শুকিয়ে রাখার চক্রে পানি দেয়া।

মাটি ও পাত্র-

বেলে দোআঁশ মাটি, পার্লাইট এবং সামান্য জৈব সার। মাটি নিঃসৃত (well-draining) হতে হবে। প্রতি ১.৫–২ বছর পর মাটি পরিবর্তন বা বড় পাত্রে স্থানান্তর করলে গাছ নতুন প্রাণ পায়।

তাপমাত্রা ও পরিবেশ-

পিংক লেডি ২০–৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালো বৃদ্ধি পায়। ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ঠান্ডা পরিবেশে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। বেশি আর্দ্র বা বর্ষাকালে গাছকে শুকনো, ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখা উচিত।

প্রজনন-

পাতা বা ডাল কেটে সহজেই নতুন গাছ তৈরি করা যায়। একটি সুস্থ পাতা বা ডাল কেটে ১–২ দিন শুকিয়ে নিন। শুকানোর পর বেলে দোআঁশ মাটিতে পুঁতে দিন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন মূল গজাবে এবং গাছ নতুনভাবে বৃদ্ধি পাবে।

সমস্যা-

অতিরিক্ত পানি বা আলো কমে গেলে পাতা ঝরে পড়ে। জল জমে থাকা বা ছত্রাকের কারণে পাতায় কালচে দাগ পড়ে। আলো কম বা পুষ্টি ঘাটতি হলে রঙ ফিকে হয়ে যায়।

সমাধান: পর্যাপ্ত আলো, মাটি শুকিয়ে পানি দেয়া, মাঝে মাঝে অল্প জৈব সার প্রয়োগ।

পাতার গোলাপি-লাল রঙের জন্য দায়ী অ্যান্থোসায়ানিন পিগমেন্ট, যা সূর্যালোকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রঙকে উজ্জ্বল করে। এই পিগমেন্ট গাছকে অতিরিক্ত সূর্যালোক থেকে রক্ষা করে। পাতার সবুজ অংশে থাকা ক্লোরোফিল ফটোসিন্থেসিসে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আলো, পানি ও পুষ্টির ভারসাম্য ঠিক থাকলে, গাছ শারীরিকভাবে ও রঙের দিক থেকে সবসময় সুস্থ থাকে।

পিংক লেডি প্ল্যান্ট শুধু একটি সাক্যুলেন্ট নয়; এটি ঘরের রাজকন্যা। সঠিক আলো, পানি ও মাটির যত্নে এই ছোট্ট গাছ বছরজুড়ে উজ্জ্বলতা ও প্রাণবন্ততা ধরে রাখে। পাতার গোলাপি রঙ, ঘন আকৃতি ও স্থায়ী সৌন্দর্য ঘরে যেমন আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ এনে দেয়, তেমনি একটি ছোট্ট বিজ্ঞান শেখায়- প্রকৃতির যত্ন নিলে সৌন্দর্য চিরকাল ধরে রাখা যায়।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ