আগুন লেগেছে আমদানি কার্গোতে, রপ্তানি কার্গো পুরোপুরি নিরাপদঃ বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা

আগুন লেগেছে আমদানি কার্গোতে, রপ্তানি কার্গো পুরোপুরি নিরাপদঃ বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে শনিবার দুপুরে লাগা ভয়াবহ আগুন রাত পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও রবিবার সকাল পর্যন্ত পুরোপুরি নেভানো যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট টানা কয়েক ঘণ্টা কাজ করে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় সিভিল এভিয়েশন ও বিমান বাহিনীর ফায়ার ইউনিট। রবিবার সকালেও কার্গো ভিলেজের বিভিন্ন স্থানে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও উদ্ধার ও শীতলীকরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনো সুনিশ্চিত কোনো বক্তব্য দেয়নি ফায়ার সার্ভিস। সংস্থাটির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল শনিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাতাসের প্রভাব এবং কার্গো ভিলেজের খোপ খোপ ঘর ও খোলা স্থানে ছড়িয়ে থাকা পণ্যের কারণে আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। তিনি বলেন, “যেহেতু এলাকা খোলা ছিল, প্রচুর বাতাসে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া সেখানে রাসায়নিকজাত দ্রব্য থাকার আশঙ্কায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, যা নিয়ন্ত্রণে বিলম্ব ঘটায়।” 

আগুনের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে কোনো প্রাণহানির খবর না পাওয়া গেলেও ফায়ার সার্ভিস ও আনসার বাহিনীর কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আগুন লাগার পর বিমানবন্দরের কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করা হয়। ঢাকাগামী ফ্লাইটগুলো চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাঠানো হয় এবং ঢাকায় অবতরণের অপেক্ষায় থাকা কয়েকটি ফ্লাইট বিকল্প রুটে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর রাত সোয়া নয়টার দিকে বিমানবন্দরের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়।

রাতেই দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি জানান, আগুনের স্থানটি সম্পূর্ণ আমদানি কার্গো এলাকা এবং রপ্তানি কার্গো সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে। রবিবার দুপুরে আবারও বিমানবন্দর পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, “আগামী তিনদিনের মধ্যে যে সব নন-শিডিউল অতিরিক্ত ফ্লাইট আসবে, তাদের সমস্ত মাসুল ও খরচ আমরা মওকুফ করেছি।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ উদ্যোগে ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয় দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

শনিবার দুপুরে আগুন লাগার সময় পুরো বিমানবন্দর এলাকা ঘন কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়, যা স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক সৃষ্টি করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুনের পরপরই দুর্ঘটনা এড়াতে হ্যাঙ্গারে থাকা কয়েকটি বিমান দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনলাইনভিত্তিক আমদানিকারক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন, আগুনে তাদের বিপুল পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকেই দাবি করেছেন, আমদানি করা পণ্য মজুত থাকা গুদামগুলোতে আগুন লাগায় তাদের আর্থিক ক্ষতি কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে।

এ ঘটনায় দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। আগুনের কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং সম্ভাব্য দায় নির্ধারণে তদন্ত শুরু হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস টিম থেকে শনিবার রাতে পাঠানো এক বিবৃতিতে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, এসব অগ্নিকাণ্ড যদি নাশকতা বা আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তবে সরকার তাৎক্ষণিক ও কঠোর ব্যবস্থা নেবে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রতিটি ঘটনার গভীর তদন্ত করছে বলেও জানানো হয়।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ