ব্রয়লার মুরগিতে ভয়ংকর ‘চিকেন অ্যানিমিয়া ভাইরাস’ শনাক্ত

ব্রয়লার মুরগিতে ভয়ংকর ‘চিকেন অ্যানিমিয়া ভাইরাস’ শনাক্ত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

দেশের পোলট্রি শিল্পে নতুন এক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে ‘চিকেন অ্যানিমিয়া ভাইরাস’ (Chicken Anemia Virus বা CAV)-এর নতুন প্রজাতি। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ভাইরাসটির ‘Genotype IIIb’ শনাক্ত করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। বিষয়টি সম্প্রতি নিশ্চিত করেছেন বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলজার হোসেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মারজানা আকতার এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সম্পন্ন করেন।

‘বাংলাদেশে মুরগির চিকেন অ্যানিমিয়া ভাইরাসের আণবিক অনুসন্ধান ও জিনগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রকল্পটি অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC)। গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক American Society for Microbiology-এর আন্তর্জাতিক জার্নাল Microbiology Spectrum-এ।

অধ্যাপক গোলজার হোসেন জানান, বিগত বছরগুলোতে ব্রিডার ফ্লকে নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রমের ফলে দেশে ভাইরাসটির তেমন কোনো প্রাদুর্ভাব ছিল না। তবে ২০২৩ সালে নরসিংদী জেলার একটি বাণিজ্যিক ব্রয়লার খামারে হঠাৎ করে রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, যা পরে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি গবেষকদের আরও গভীর অনুসন্ধানে উদ্বুদ্ধ করে।

গবেষক মারজানা আকতার বলেন, আক্রান্ত মুরগির মধ্যে রক্তশূন্যতা, ফ্যাকাশে ঝুঁটি এবং নীলচে ডানার মতো উপসর্গ দেখা যায়। ময়নাতদন্তে থাইমাস, প্লীহা, বার্সা, যকৃৎ ও অস্থি মজ্জায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পরীক্ষাগারে নমুনা বিশ্লেষণের পর সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং করে নিশ্চিত করা হয় যে ভাইরাসটি Genotype IIIb প্রজাতির, যা বাংলাদেশে পূর্বে কখনও সনাক্ত হয়নি।

গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন সনাক্ত এই ভাইরাসের জিনগত গঠন চীনের একটি স্ট্রেইনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ধারণা করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক পোলট্রি বাণিজ্যের মাধ্যমে ভাইরাসটি দেশে প্রবেশ করেছে। এছাড়া ভাইরাসটির VP3 প্রোটিনে কিছু নতুন মিউটেশন সনাক্ত হয়েছে, যা রোগের তীব্রতা ও ইমিউনোসাপ্রেশন ক্ষমতা বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।

অধ্যাপক গোলজার বলেন, এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্থানীয় ভাইরাস প্রজাতির জিনোম বিশ্লেষণ করে টিকা উন্নয়ন, রোগ নির্ণয়ের নির্ভুলতা বৃদ্ধি এবং জাতীয় পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তৈরি করা। তিনি আরও জানান, চিকেন অ্যানিমিয়া ভাইরাস মুরগির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এবং খামারিদের জন্য বড় অর্থনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করে।

গবেষক দল সতর্ক করে বলেছে, নতুন এই জেনোটাইপের বিস্তার রোধে এখনই জাতীয় পর্যায়ে ভাইরোলজিক্যাল মনিটরিং, ব্রিডার ফ্লক ভ্যাকসিনের হালনাগাদ এবং খামার পর্যায়ে বায়োসিকিউরিটি জোরদার করা জরুরি। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পোলট্রি খাত বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ