চিকিৎসকেরা বলছেন, এই একটি ভুলেই বাড়ছে নারীদের মৃত্যুঝুঁকি!

চিকিৎসকেরা বলছেন, এই একটি ভুলেই বাড়ছে নারীদের মৃত্যুঝুঁকি!
ছবির ক্যাপশান, চিকিৎসকেরা বলছেন, এই একটি ভুলেই বাড়ছে নারীদের মৃত্যুঝুঁকি!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গর্ভাশয়ের মুখে ক্যান্সার বা সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার (Cervical Cancer) এমনই এক নীরব ঘাতক, যা প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লাখো নারীর প্রাণ কেড়ে নেয়। আমাদের দেশে এটি নারীদের মধ্যে অন্যতম সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হওয়া ক্যান্সারগুলোর একটি, অথচ সচেতনতা, টিকাদান ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগকে প্রায় শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

যেভাবে হয় এই ক্যান্সার

গর্ভাশয়ের মুখে ক্যান্সারের মূল কারণ হলো হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) নামের এক ধরনের ভাইরাস সংক্রমণ। এই ভাইরাসটি প্রধানত যৌনসংস্পর্শের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে থাকে। তবে সব ধরনের HPV ক্ষতিকর নয়, প্রায় ১০০টিরও বেশি ধরনের ভাইরাসের মধ্যে কিছু উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ধরনের ভাইরাস (বিশেষ করে HPV-16 ও HPV-18) কোষের গঠন বদলে দিয়ে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় এটি কোনো দৃশ্যমান উপসর্গ দেখায় না, যার কারণে অনেক নারীই বুঝতে পারেন না যে তিনি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

প্রাথমিক লক্ষণ যেগুলো অবহেলা করবেন না-

গর্ভাশয়ের মুখে ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সূক্ষ্ম হলেও এগুলোই ভবিষ্যৎ বিপদের আগাম বার্তা

⇨অনিয়মিত যোনি রক্তপাত (বিশেষ করে যৌনমিলনের পর বা ঋতুচক্রের বাইরে)

⇨ তলপেটে বা কোমরে ব্যথা

⇨ দুর্গন্ধযুক্ত বা রক্তমিশ্র স্রাব

⇨ যৌনমিলনের সময় অস্বস্তি বা ব্যথা

⇨ শরীরের দুর্বলতা, ওজন হ্রাস

এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।

ঝুঁকির কারণ:

সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় এমন কিছু বিষয় রয়েছে

⇨ বাল্যবিবাহ ও অল্প বয়সে যৌনসম্পর্ক

⇨ একাধিক যৌনসঙ্গী বা সঙ্গীর একাধিক সম্পর্ক

⇨ HPV সংক্রমণ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা না করা

⇨ ধূমপান ও দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা

⇨ অপর্যাপ্ত পুষ্টি ও দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহার

এই কারণগুলো জানা থাকলে প্রতিরোধও সহজ হয়।

প্রতিরোধের পথ:

সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার এমন একটি রোগ, যা সচেতনতা ও বিজ্ঞান দুয়ের সমন্বয়ে প্রতিরোধযোগ্য।

⇨HPV টিকা (Vaccine): ৯–২৬ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য এই টিকাটি সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ। এটি শরীরে HPV ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

⇨ নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার (Pap Smear) বা ভায়া (VIA) টেস্ট: বছরে অন্তত একবার এই স্ক্রিনিং করালে কোষের অস্বাভাবিক পরিবর্তন আগেভাগে ধরা যায়। সময়মতো চিকিৎসা শুরু হলে সম্পূর্ণ আরোগ্য সম্ভব।

⇨ সুস্থ জীবনধারা: ধূমপান পরিহার, সুষম খাদ্য, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমায়।

চিকিৎসা ও আধুনিক অগ্রগতি- 

চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের স্তর ও কোষের ক্ষতির মাত্রার ওপর।
প্রাথমিক পর্যায়ে লেজার বা সার্জারির মাধ্যমে অস্বাভাবিক কোষ অপসারণ করা যায়। উন্নত পর্যায়ে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি বা সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি এই দুই আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতিও ব্যবহৃত হচ্ছে, যা তুলনামূলকভাবে শরীরের ক্ষতি কমায় এবং রোগমুক্তির হার বাড়ায়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, প্রতি বছর প্রায় ৮,০০০–৯,০০০ নারী সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে অনেকেই দেরিতে শনাক্ত হওয়ার কারণে জীবন হারান। সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা এখন HPV টিকাদান কর্মসূচি চালু করেছে স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের মধ্যে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে VIA স্ক্রিনিং সেবাও বাড়ানো হচ্ছে, যাতে প্রাথমিক স্তরেই ঝুঁকি ধরা যায়।

গর্ভাশয়ের মুখে ক্যান্সার কোনো অনিবার্য মৃত্যু নয়, বরং এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য বাস্তবতা। নারীর সামান্য সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাদান-এই তিনটি বিষয় মেনে চললেই অসংখ্য জীবন রক্ষা সম্ভব। আজকের দিনে নারীর শক্তি কেবল সমাজগঠনে নয়, নিজের শরীরের যত্নেও অপরিহার্য। স্মরণ রাখুন সচেতনতাই প্রথম ও সর্বোত্তম ওষুধ।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ