বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়: ভবিষ্যৎ মানবতার টিকে থাকার রূপরেখা !

বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়: ভবিষ্যৎ মানবতার টিকে থাকার রূপরেখা !
ছবির ক্যাপশান, বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়: ভবিষ্যৎ মানবতার টিকে থাকার রূপরেখা !
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবী একদিকে যেমন প্রযুক্তির শিখরে, অন্যদিকে তেমনি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও নতুন সংক্রামক রোগের হুমকিতে ভরপুর। কোভিড-১৯ মহামারী ছিল সেই বাস্তবতার এক তীব্র স্মারক; যেখানে দেখা গেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একসাথে না চললে মানবসভ্যতা কতটা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। আজ বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যনিরাপত্তা, রোগনির্ণয়, তথ্যপ্রবাহ ও চিকিৎসা- সবক্ষেত্রেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়ই হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার।

যেকোনো মহামারী মোকাবেলার মূল চাবিকাঠি হলো রোগজীবাণুর দ্রুত সনাক্তকরণ ও বিশ্লেষণ।ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার জেনেটিক গঠন বোঝার জন্য আজ বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করছেন-

◑ জিনোম সিকোয়েন্সিং,

◑ বায়োইনফরমেটিকস বিশ্লেষণ এবং

◑ এআই-নির্ভর ডেটা মডেলিং।

কোভিডের সময় দেখা গেছে, ভাইরাসের জিনোম মাত্র কয়েক সপ্তাহে শনাক্ত করা সম্ভব হয়, যা ভ্যাকসিন তৈরির পথ খুলে দেয় দ্রুত।এর ফলে বোঝা যায়, বিজ্ঞান কেবল চিকিৎসা নয় বরং প্রতিরোধেরও ভিত্তিও।

মহামারীর সময় তথ্যের গতি মানেই জীবনের গতি। ডিজিটাল প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), বিগ ডেটা, ও ক্লাউড কম্পিউটিং—এই চারটি উপাদান আজ মহামারী নিয়ন্ত্রণের মূল স্তম্ভে পরিণত হয়েছে।

AI ভিত্তিক পূর্বাভাস মডেল এখন রোগের বিস্তার আগেভাগে শনাক্ত করতে সক্ষম। ড্রোন ও রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে স্যানিটাইজেশন ও ওষুধ বিতরণে।
টেলিমেডিসিন ও ভার্চুয়াল ক্লিনিক দূরবর্তী অঞ্চলে চিকিৎসা পৌঁছে দিচ্ছে। আর ডিজিটাল হেলথ পাস ও মোবাইল ট্র্যাকিং অ্যাপ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে উল্লেখযোগ্যভাবে।

এইসব উদ্যোগ দেখিয়েছে, প্রযুক্তি কেবল আধুনিকতার প্রতীক নয়; এটি মানবজীবন রক্ষার এক বাস্তব হাতিয়ার।

একসময় একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে লাগত ১০–১৫ বছর। কিন্তু কোভিড-১৯ আমাদের দেখিয়েছে,
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একসাথে কাজ করলে কয়েক মাসেই সম্ভব নতুন ভ্যাকসিন তৈরি।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে

⇨ mRNA প্রযুক্তি,

⇨ বায়োইনফরমেটিকস এবং

⇨ হাই-পারফরম্যান্স কম্পিউটিং।

এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন শুধু কোভিড নয়, ভবিষ্যতের অজানা ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধেও একটি দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা গড়ে তোলার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

মহামারী কোনো দেশের সীমানা মানে না। তাই রোগতত্ত্ব, ভ্যাকসিন ডেটা, চিকিৎসা পদ্ধতি, সব কিছুই আজ গ্লোবাল ডেটা নেটওয়ার্কে ভাগাভাগি হচ্ছে। WHO, GISAID, CDC-এর মতো আন্তর্জাতিক ডেটাবেইস গবেষকদের রিয়েল-টাইম তথ্য দিচ্ছে, যার ফলে ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ট্র্যাকিং ও বিশ্লেষণ দ্রুততর হয়েছে। এই সমন্বয়ই প্রমাণ করেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তখনই সফল, যখন তা ভাগাভাগি হয় মানবতার স্বার্থে।
তবে প্রযুক্তির ব্যবহার যতই জরুরি হোক, তার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে নৈতিক ও মানবিক ভারসাম্য। ডিজিটাল ট্র্যাকিং বা ডেটা সংগ্রহের সময় ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা,
AI নির্ভর সিদ্ধান্তে মানবীয় পর্যবেক্ষণ-এসব বিষয় না মানলে প্রযুক্তিই হয়ে উঠতে পারে বিপর্যয়ের কারণ। তাই আজকের চ্যালেঞ্জ কেবল রোগ নয়, প্রযুক্তিকে দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করাও।

বাংলাদেশও এই বিশ্বচলনের বাইরে নয়। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় স্থানীয়ভাবে তৈরি র‍্যাপিড টেস্ট কিট,
টেলিমেডিসিন প্ল্যাটফর্ম,
আইসিটি নির্ভর স্বাস্থ্য নজরদারি ব্যবস্থা,
এবং ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার - এইসব উদ্যোগ প্রমাণ করেছে যে প্রযুক্তিনির্ভর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি। দেশীয় গবেষণাগারগুলোও আজ ভাইরাস সিকোয়েন্সিং থেকে শুরু করে ডেটা বিশ্লেষণ পর্যন্ত কাজে যুক্ত হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ মহামারী প্রতিরোধে আমাদের প্রস্তুতি আরও মজবুত করবে।

বিজ্ঞান মানবতার আলোকবর্তিকা, আর প্রযুক্তি তার হাতিয়ার। যেখানে এ দুইয়ের সমন্বয় ঘটে, সেখানেই গড়ে ওঠে একটি প্রতিরোধক্ষম, জ্ঞাননির্ভর সমাজ। বৈশ্বিক মহামারী আমাদের শিখিয়েছে- কেবল চিকিৎসা নয়, তথ্য, গবেষণা, উদ্ভাবন ও সহযোগিতাই আগামী দিনের রক্ষাকবচ।মানবজাতির ভবিষ্যৎ টিকে থাকবে না ভয়ের উপর, বরং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও মানবতার সম্মিলিত বুদ্ধিমত্তার উপর।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ