শাহজালাল বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ কে দেবে?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপুল পরিমাণ পণ্য ও কাঁচামাল পুড়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে। তবে সরকারি তদন্ত কমিটি এখনও ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) জানায়, আগুনের ঘটনায় বিদেশি ক্রেতা ও আমদানিকারকদের মধ্যে পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। সংগঠনটি বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ রপ্তানিমুখী বিভিন্ন শিল্প সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত। ইএবির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “সব মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে।”
ওষুধ শিল্প সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শনিবারের আগুনে তাদের ৩২টি কোম্পানির ২০০ কোটি টাকার বেশি কাঁচামাল পুড়ে গেছে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ শেষ হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেক আমদানিকারক ও প্রতিষ্ঠান এখনও জানেন না তারা ক্ষতিপূরণ পাবেন কি না।
এদিকে আগুনের পর বিমানবন্দরে নতুন করে আগত বিপুল পরিমাণ পণ্য সংরক্ষণের সংকট দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে ৯ নম্বর গেটে একটি অস্থায়ী শেড তৈরি করেছে নতুন পণ্য রাখার জন্য। কাস্টমসের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেদিন পণ্য আসবে, সেদিনই খালাসের ব্যবস্থা করা হবে। তবে সিএন্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, এ ব্যবস্থা খুবই সীমিত এবং খোলা জায়গায় রাখা পণ্য বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিএন্ডএফ এজেন্টদের অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম মিঠু বলেন, “ক্ষতির চিত্র বা ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখনো আমাদের কিছু জানানো হয়নি। এমনকি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাতেও প্রবেশের অনুমতি পাইনি।”
অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া পণ্যের বড় অংশ ছিল তৈরি পোশাক, ওষুধের কাঁচামাল, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, এবং ই-কমার্স পণ্য। বিজিএমইএ জানিয়েছে, তাদের সদস্যদের প্রায় ১০০ কোটি ডলারের পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইনামুল হক বলেন, “উচ্চমূল্যের পণ্য ও জরুরি শিপমেন্টগুলো পুড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা ক্ষুণ্ণ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।”
ওষুধ শিল্পের উদ্যোক্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, কাঁচামালের ঘাটতি দেখা দিলে দেশীয় বাজারে ওষুধ সংকট দেখা দিতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের জন্য দ্রুত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তার মতে, যাদের বিমা সুবিধা নেই তাদের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরাও হতাশা প্রকাশ করেছেন। স্কাই বাই বিডি’র কর্ণধার রাসেল বিন আহাদ জানান, তার ছয় টন আমদানিকৃত পণ্য সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে। “মাল ছাড়ানোর সব প্রক্রিয়া শেষ ছিল, কিন্তু আগুনে সব শেষ হয়ে গেল,” বলেন তিনি।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতির সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণের পর ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হবে। আপাতত শুল্ক পরিশোধের পর দ্রুত পণ্য খালাসের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সরকারি পর্যায়ে আগুনের কারণ অনুসন্ধানে স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষতির পূর্ণ চিত্র জানা যাবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অগ্নিকাণ্ড দেশের রপ্তানি খাত ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। ইএবি’র সভাপতি হাতেম বলেন, “যেসব কাঁচামাল পুড়ে গেছে, সেগুলো দিয়ে তৈরি পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে না। এতে বাজারের অবস্থান হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।”
বর্তমানে বিমানবন্দরের পুরো ইমপোর্ট সেকশন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে নতুন পণ্য আসার পর সংরক্ষণের সংকট তৈরি হয়েছে। সিএন্ডএফ ও আমদানিকারকরা সতর্ক করে বলেছেন, খোলা আকাশের নিচে রাখা নতুন পণ্যগুলো বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অগ্নিকাণ্ড শুধু তাত্ক্ষণিক নয়, বরং বাংলাদেশে বিদেশি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থায়ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা মোকাবিলায় সরকারের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।