জেনে নিন কোন ফুলগাছ সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করে

জেনে নিন কোন ফুলগাছ সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করে
ছবির ক্যাপশান, জেনে নিন কোন ফুলগাছ সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করে
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ফুলগাছ মানেই রঙ, গন্ধ আর সৌন্দর্যের পরশ। কিন্তু জানেন কি? এই সুন্দর ফুলগাছগুলোর অনেকেই নিঃশব্দে আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে। তারা দিনে-রাতে অক্লান্তভাবে অক্সিজেন উৎপাদন করে আমাদের পরিবেশকে রাখছে শ্বাসযোগ্য। আজকের দুষণ, নগরায়ণ ও কৃত্রিম জীবনের ভিড়ে, এই ফুলগাছগুলো হয়ে উঠছে এক একটি প্রাকৃতিক অক্সিজেন কারখানা। তবে প্রশ্ন হলো কোন ফুলগাছটি সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন দেয়? বিজ্ঞানীরা তার উত্তর খুঁজেছেন আলো, গ্যাস বিনিময় ও ফটোসিনথেসিস হার বিশ্লেষণ করে।

কীভাবে গাছ অক্সিজেন তৈরি করে

প্রতিটি সবুজ গাছই ফটোসিনথেসিস নামের প্রক্রিয়ায় সূর্যালোক ব্যবহার করে
কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন (O₂) নির্গত করে। ফুলগাছও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে যেসব ফুলগাছের—

পাতার পরিমাণ বেশি, স্টোমাটা বা বায়ু-ছিদ্রের সংখ্যা বেশি, আর যেগুলো দিনে–রাতে উভয় সময় কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে, তাদের অক্সিজেন উৎপাদনের হার তুলনামূলক অনেক বেশি।

সর্বাধিক অক্সিজেন উৎপাদক ফুলগাছের তালিকা

১. জুঁই ফুল (Jasmine):  গন্ধে যেমন মনমুগ্ধকর, তেমনি এটি অন্যতম উচ্চ অক্সিজেন উৎপাদনকারী ফুলগাছ। জুঁই রাতে আংশিকভাবে ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়, যার ফলে এটি রাতেও সামান্য পরিমাণ অক্সিজেন দেয়, যা খুবই বিরল বৈশিষ্ট্য। এছাড়া এটি বায়ু থেকে বেনজিন ও টলুইন নামের বিষাক্ত যৌগ শোষণ করে বায়ুমণ্ডল পরিশুদ্ধ রাখে।

২. গারবেরা (Gerbera Daisy): এই রঙিন ফুলগাছটি NASA'র ক্লিন এয়ার স্টাডিতেও অন্যতম শীর্ষস্থানে। গারবেরা রাতে অক্সিজেন ছাড়ে এবং কার্বন মনোক্সাইড ও ট্রাইক্লোরোইথিলিন শোষণ করে। তাই শোবার ঘরে রাখার জন্য এটি সবচেয়ে আদর্শ ফুলগাছগুলোর একটি।

৩. অর্কিড (Orchid):  অর্কিড গাছ CAM (Crassulacean Acid Metabolism) প্রক্রিয়ায় শ্বাস নেয়, যার মানে- এটি দিনে নয়, রাতেই অক্সিজেন নির্গত করে। এই কারণেই এটি ইনডোর প্লান্ট হিসেবে জনপ্রিয়। 

৪. গোলাপ (Rose):  রূপে যেমন অনন্য, তেমনি এটি অক্সিজেন উৎপাদনের হারেও উল্লেখযোগ্য। গোলাপগাছ দিনে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন নির্গত করে এবং বাতাসের ধূলিকণা ধরে রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, একটি পূর্ণবয়স্ক গোলাপগাছ দিনে প্রায় ১৫–২০ লিটার অক্সিজেন নির্গত করতে পারে।

৫. সূর্যমুখী (Sunflower): এই ফুল শুধু সূর্যের দিকে মুখ রাখে না, সূর্যালোককেও পুরোপুরি কাজে লাগায়। এর বিশাল পাতাগুলো আলো শোষণ করে প্রচুর ফটোসিনথেসিস সম্পন্ন করে,
যার ফলে এটি উচ্চ হারে অক্সিজেন ছাড়ে। একটি বড় সূর্যমুখী গাছ দিনে প্রায় ২০–৩০ লিটার অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারে।

৬. পিস লিলি (Peace Lily): যদিও এটি শোভাগাছ হিসেবে বেশি পরিচিত, তবে এর সাদা ফুল এটিকে ফুলগাছের তালিকায়ও রাখে। এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়াও অ্যামোনিয়া, ফরমালডিহাইড ও বেনজিন শোষণ করে বায়ু পরিশুদ্ধ রাখে।

৭. টিউব রোজ বা রাজনিগন্ধা (Tuberose): রাজনিগন্ধা শুধু সুগন্ধ নয়, বরং রাতের সময়ও ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায় আংশিক সক্রিয় থাকে। এটি ঘরের বাতাসে থাকা বিষাক্ত পদার্থ হ্রাস করে ঘুমের মান উন্নত করে।

সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন উৎপাদনকারী গাছ কোনটি?

বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণে, সূর্যমুখী (Sunflower) ও গারবেরা (Gerbera Daisy) ফুলগাছ দুটি সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করে বলে জানা যায়। সূর্যমুখীর বড় পাতার এলাকা ও উচ্চ ক্লোরোফিল ঘনত্ব একে অক্সিজেন উৎপাদনে শীর্ষে রাখে।অন্যদিকে, গারবেরা রাতে অক্সিজেন দেয়। অর্থাৎ একসঙ্গে দুটি ফুলগাছ রাখলে ঘরের বায়ু দিন–রাতই থাকবে সতেজ ও বিশুদ্ধ।

NASA'র ১৯৮৯ সালের Clean Air Study তে দেখা যায়, অন্দরমহলের বাতাসে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক যেমন ফরমালডিহাইড, জাইলিন, বেনজিন ও ট্রাইক্লোরোইথিলিন- এসব যৌগ দূর করতে কিছু ফুলগাছ কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাদের পাতায় থাকা মাইক্রোবায়োটিক উপাদান ও স্টোমাটাল কার্যক্রম বায়ুর মান উন্নত করে।

যেখানে রাখবেন এই ফুলগাছগুলো-

⇨ শোবার ঘরে: গারবেরা, অর্কিড, রাজনিগন্ধা

⇨ ড্রইংরুমে: গোলাপ, জুঁই, পিস লিলি

⇨ বারান্দায় বা জানালার পাশে: সূর্যমুখী, টিউলিপ, জুঁই

⇨ অফিস ডেস্কে: ছোট অর্কিড বা মিনি জুঁই গাছ

এভাবে আপনি একদিকে ঘর সাজাতে পারবেন, অন্যদিকে অক্সিজেনের মানও বাড়াতে পারবেন।

আজকের শহুরে জীবনে কংক্রিট আর দূষণের মাঝেও একফোঁটা তাজা বাতাসের দাম অপরিসীম। ফুলগাছ শুধু চোখে সুন্দর লাগে না, তারা নিঃশব্দে আমাদের জীবন বাঁচায়, বাতাস পরিশুদ্ধ রাখে। তাই বাড়ির এক কোণে যদি জায়গা থাকে, একটি সূর্যমুখী বা জুঁই গাছ লাগান; আপনি শুধু একটি গাছই লাগাবেন না, বরং পৃথিবীতে আরও কিছু অক্সিজেন ও প্রশান্তির শ্বাস যোগ করবেন।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ