ট্রাম্পের নির্দেশে ভাঙ্গা হচ্ছে হোয়াইট হাউজের একাংশ

ট্রাম্পের নির্দেশে ভাঙ্গা হচ্ছে হোয়াইট হাউজের একাংশ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির দাপ্তরিক বাসভবন হোয়াইট হাউজে নতুন বলরুম নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে, যার ফলে ঐতিহাসিক ভবনটির পূর্বাংশ বা ইস্ট উইংয়ের কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। সোমবার নির্মাণকর্মীরা ইস্ট উইংয়ের একটি ঢেকে দেওয়া প্রবেশপথ ও জানালার বৃহৎ অংশ ভেঙে ফেলে বলরুমের জন্য স্থান প্রস্তুতের কাজ শুরু করেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে হোয়াইট হাউজের অবকাঠামোতে “সম্পূর্ণ আধুনিকীকরণ” আনা হবে, তবে মূল ভবনের স্থাপত্য ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রাখা হবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত হতে যাওয়া বলরুমটি বিদ্যমান কাঠামোর “কাছাকাছি” হবে, কিন্তু ভবনের মূল অংশে কোনো পরিবর্তন আনবে না। তাঁর ভাষায়, “এটি আমার প্রিয় স্থান এবং এর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে কাজটি করা হবে।” ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, “অত্যন্ত প্রয়োজনীয়” বলরুম নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে, যা ১৫০ বছরের পুরোনো এক স্বপ্ন পূরণ করবে। তাঁর দাবি, মার্কিন ইতিহাসে সব প্রেসিডেন্টই হোয়াইট হাউজে একটি পূর্ণাঙ্গ বলরুমের আশা করেছিলেন।

ট্রাম্প বলেন, এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছেন “অনেক উদার দেশপ্রেমিক,” যদিও হোয়াইট হাউজ এখনো অর্থদাতাদের নাম প্রকাশ করেনি। ইস্ট উইং, যা ১৯০২ সালে নির্মিত ও ১৯৪২ সালে সংস্কার করা হয়েছিল, দীর্ঘ সময় পর এই প্রথম বড় পরিবর্তনের মুখে পড়ছে। বিবিসি জানিয়েছে, ইস্ট উইংয়ের দক্ষিণ অংশে বড় নির্মাণযন্ত্র ও মার্কিন পতাকা-সজ্জিত সরঞ্জাম দেখা যাচ্ছে, যা চলমান প্রকল্পের ইঙ্গিত বহন করছে।

হোয়াইট হাউজের সংলগ্ন এলাকা পরিচালনা করে ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস (এনপিএস), তবে ভবনের সংস্কার ও নির্মাণসংক্রান্ত সিদ্ধান্তে প্রেসিডেন্টের রয়েছে বিস্তৃত ক্ষমতা। এনপিএসের সাবেক প্রধান ইতিহাসবিদ রবার্ট কে. সাটন বিবিসিকে বলেন, “হোয়াইট হাউজে যেকোনো পরিবর্তন জনগণের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে, কারণ এটি কেবল একটি ভবন নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতীক।” তিনি চলমান প্রকল্পে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, বিশেষ করে বলরুমের নকশা, আকার ও ঐতিহাসিক ধারা রক্ষার বিষয়ে।

সাটনের মতে, “হোয়াইট হাউজ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী ভবন, কিন্তু আমরা এখনো জানি না প্রকৃতপক্ষে কী ঘটছে।” তিনি আরও বলেন, নতুন বলরুমে ৬০০ থেকে ৯০০ জন পর্যন্ত ধারণক্ষমতা থাকতে পারে, যা এর নিরাপত্তা এবং ভবনের কাঠামোগত স্থায়িত্বের জন্যও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

প্রকল্পটির নকশা ও নির্মাণ পরিচালনা করছে ক্লার্ক কনস্ট্রাকশন, আর ডিজাইন করেছে ম্যাকক্রি আর্কিটেক্টস। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, সিক্রেট সার্ভিস ভবনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় পরিবর্তনে সহযোগিতা করবে। প্রকাশিত তথ্যানুসারে, বলরুমটিতে শত শত সোনালী ঝাড়বাতি ও বিলাসবহুল অভ্যন্তরসজ্জা থাকবে, যা এর সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যকে একত্রে প্রতিফলিত করবে।

তবে প্রকল্পটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক স্থাপত্য সংস্থা সোসাইটি অফ আর্কিটেকচারাল হিস্টোরিয়ানস। তাদের মতে, “এটি গত ৮৩ বছরে হোয়াইট হাউজের বহির্ভাগে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হতে যাচ্ছে, যা গভীরভাবে পর্যালোচনার দাবি রাখে।” একইভাবে, আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেক্টসও স্বচ্ছ তদন্ত ও পরিকল্পনার আহ্বান জানিয়েছে।

ইতিহাস বলছে, হোয়াইট হাউজে পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টরাও ব্যক্তিগত রুচি অনুযায়ী কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন। বারাক ওবামা টেনিস কোর্টকে বাস্কেটবল কোর্টে রূপান্তর করেছিলেন; রিচার্ড নিক্সনের আমলে প্রেস রুম স্থাপিত হয়েছিল সাবেক ইনডোর সুইমিং পুলের স্থানে। হ্যারি ট্রুম্যানের আমলে ১৯৪৮-১৯৫২ সালে হয়েছিল ভবনের সবচেয়ে বড় পুনর্নির্মাণ, যা হোয়াইট হাউজের স্থায়িত্ব ও ঐতিহ্য নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিল।

ইতিহাসবিদদের মতে, ট্রাম্পের এই উদ্যোগও হোয়াইট হাউজে স্থায়ী পরিবর্তনের অংশ হয়ে থাকবে, যদিও এর ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তারা মনে করেন, ভবনটি শুধু প্রেসিডেন্টের বাসভবন নয়, এটি “পিপলস হাউজ”, যা যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের প্রতীক।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ