বারান্দার টবেই মরিচ চাষে মাস্টার হোন—সহজ টিপস যা কেউ বলে না!

বারান্দার টবেই মরিচ চাষে মাস্টার হোন—সহজ টিপস যা কেউ বলে না!
ছবির ক্যাপশান, বারান্দার টবেই মরিচ চাষে মাস্টার হোন—সহজ টিপস যা কেউ বলে না!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

শহুরে জীবন মানেই ছোট্ট ফ্ল্যাট, ইট–কংক্রিট আর সীমিত সবুজ। তবু একটু যত্ন, সামান্য সূর্যালোক আর মমতা থাকলেই সেই বারান্দাই হয়ে উঠতে পারে এক টুকরো কৃষিক্ষেত। টবে জন্মানো মরিচ গাছ এখন অনেকের ঘরের অপরিহার্য অংশ। কারণ এটি শুধু রান্নাঘরের স্বাদ বাড়ায় না, বরং প্রতিদিনের তাজা ফসলের আনন্দও দেয়।

মরিচের বৈজ্ঞানিক নাম Capsicum annuum। এটি Solanaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, যেই পরিবারে টমেটো, বেগুন ও আলুও রয়েছে। মরিচে রয়েছে Capsaicin নামের রাসায়নিক উপাদান, যা ঝাল তৈরি করে এবং মানবদেহে এন্ডরফিন নিঃসরণ বাড়িয়ে মন ভালো রাখে, ব্যথা উপশমেও সহায়তা করে।

টবে মরিচ চাষের উপযুক্ত পরিবেশ-

⇨  মরিচ গাছের জন্য প্রতিদিন অন্তত ৫–৬ ঘণ্টা সরাসরি রোদ প্রয়োজন। যদি তোমার বারান্দা দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্বমুখী হয়, তাহলে সেটি সবচেয়ে উপযুক্ত।

⇨ ২০°C থেকে ৩২°C তাপমাত্রা মরিচ চাষের জন্য আদর্শ। ঠান্ডা বা অতিরিক্ত বৃষ্টিতে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং ফুল ঝরে পড়তে পারে।

⇨ টবে লাগানো গাছের আশেপাশে যেন বাতাস চলাচল করতে পারে, তা নিশ্চিত করা জরুরি, এতে ছত্রাক সংক্রমণ কম হয়।

টব ও মাটি প্রস্তুত করার নিয়ম-

⇨  ১০–১২ ইঞ্চি গভীর টব সবচেয়ে ভালো। নিচে অবশ্যই পানি নিষ্কাশনের ছিদ্র থাকতে হবে, নইলে শিকড় পচে যেতে পারে।

⇨  মাটির গুণগত মান মরিচ চাষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আদর্শ মিশ্রণ হবে 

◑  ৫০% দোআঁশ মাটি

◑ ২৫% পচা গোবর বা কম্পোস্ট

◑ ২০% বালি বা নারকেলের ছোবড়া গুড়া

◑ ৫% ছাই (পটাশের উৎস হিসেবে)

এই মিশ্রণটি রোদে শুকিয়ে ২–৩ দিন রেখে তারপর টবে ভরতে হবে।

চারা রোপণ ও যত্ন

⇨  সুস্থ, সবুজ এবং ৪–৫ পাতাওয়ালা চারা রোপণ করো। চারা ৫–৬ ইঞ্চি দূরত্বে লাগানো ভালো।

⇨ অতিরিক্ত পানি মরিচ গাছের সবচেয়ে বড় শত্রু। মাটি শুকিয়ে গেলে তবেই পানি দেবে। সকালে বা বিকেলে হালকা সেচ সবচেয়ে উপযুক্ত।

⇨ মাসে একবার জৈব সার (গোবর, ভার্মি কম্পোস্ট) দেওয়া ভালো। ফুল ফোটার সময় তরল সার (liquid fertilizer) বা কলার খোসা ভেজানো পানি প্রয়োগ করা যায়।

⇨ প্রথম দিকের কয়েকটি ফুল তুলে ফেললে গাছ আরও শক্তিশালী হয় এবং পরবর্তীতে বেশি ফল দেয়।

পোকামাকড় ও রোগব্যাধি প্রতিরোধ:

টবে চাষ করা গাছও রোগমুক্ত নয়। তবে রাসায়নিক কীটনাশক না ব্যবহার করাই ভালো।
এর পরিবর্তে ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রতিরোধ করা যায়-

☞ রসুন + মরিচ + সাবান মিশ্রণ স্প্রে: ৫টি রসুন, ২টি মরিচ, অল্প তরল সাবান ও পানি মিশিয়ে ছেঁকে নিলে প্রাকৃতিক কীটনাশক পাওয়া যায়।

☞ নিমপাতার নির্যাস স্প্রে: নিমপাতা ভিজিয়ে তৈরি নির্যাস পোকা প্রতিরোধে কার্যকর।

☞ পাতা শুকিয়ে গেলে বা দাগ পড়লে: আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করো এবং টবটি রোদে রাখো

ফসল তোলা ও সংরক্ষণ

রোপণের প্রায় ৬০–৭৫ দিন পর মরিচ তোলা যায়। ফল সবুজ বা লাল,  দুটি অবস্থাতেই সংগ্রহ করা সম্ভব। কাঁচা মরিচ সংরক্ষণে— কাগজে মুড়ে ফ্রিজের সবজি ট্রেতে রাখলে ১০–১২ দিন টাটকা থাকে। শুকিয়ে রাখলে ৩–৪ মাস সংরক্ষণযোগ্য থাকে।

কিছু অতিরিক্ত টিপস-

ফুল ফোটার সময় গাছ ঝাঁকিয়ে দিলে পরাগায়ন ভালো হয়। গাছকে সপ্তাহে একবার "সূর্যালোক + ছায়া" পরিবেশে ঘুরিয়ে রাখলে ভারসাম্য বজায় থাকে। শীতকালে টব ঘরের ভেতর রাখলে গাছ বেঁচে যায়।

বারান্দার ছোট্ট টবে মরিচ চাষ শুধু শখ নয়,  এটি একধরনের সবুজ থেরাপি।
দিনের শুরুতে গাছের পাতায় জমা শিশির দেখা, অথবা দুপুরে নিজের লাগানো মরিচ তুলে রান্নায় ব্যবহার,  এ আনন্দ টাকার মাপের নয়। শহরের কংক্রিট দেয়ালের মাঝেও এই একফোঁটা সবুজই মানুষের মনকে সতেজ করে রাখে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ