নিজেকে খুঁজে পাবার সবচেয়ে সহজ পথ!এবার জার্নালিংয়ে নিজের অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচন করুন

নিজেকে খুঁজে পাবার সবচেয়ে সহজ পথ!এবার জার্নালিংয়ে নিজের অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচন করুন
ছবির ক্যাপশান, নিজেকে খুঁজে পাবার সবচেয়ে সহজ পথ!এবার জার্নালিংয়ে নিজের অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচন করুন
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমরা প্রায়ই অন্যকে বুঝতে চাই, কিন্তু নিজেকে বোঝা সেটা সবচেয়ে কঠিন কাজ। আধুনিক মনোবিজ্ঞানে এখন এক নতুন প্রবণতা জোর পাচ্ছে-"Self-Discovery Journaling" বা নিজেকে জানার জন্য লেখা। এটি শুধু একটি ডায়েরি রাখার অভ্যাস নয়; বরং নিজের অনুভূতি, ভয়, আশা, এবং সিদ্ধান্তগুলোকে শব্দে প্রকাশ করার মাধ্যমে মনের গভীর স্তরগুলো উন্মোচনের একটি বৈজ্ঞানিক উপায়।

মানুষ যখন লিখে ফেলে নিজের চিন্তা, তখন মস্তিষ্ক সেটিকে প্রক্রিয়াজাত করে যা মনের মধ্যে জমে থাকা বিশৃঙ্খলা বা আবেগের ভার হালকা করে দেয়। এই কারণেই জার্নালিংকে অনেকে বলে থাকেন "কাগজের ওপর মনের থেরাপি।"

মনোবিজ্ঞান অনুযায়ী, আমাদের আবেগ ও যুক্তি পরিচালনা করে দুটি প্রধান অংশ Amygdala যা ভয়, রাগ, উদ্বেগের মতো আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে। এবং Prefrontal Cortex যা যুক্তি, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে।

যখন আমরা কোনো অনুভূতি লিখে ফেলি, তখন এই দুই অংশের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, লিখে প্রকাশ করলে মস্তিষ্কের Amygdala-র অতিরিক্ত কার্যকলাপ কমে যায়, ফলে মানসিক চাপ হ্রাস পায়, এবং prefrontal cortex যুক্তিনির্ভরভাবে অনুভূতিগুলো বিশ্লেষণ করতে শেখে। অর্থাৎ, "লেখা" হয়ে ওঠে এক প্রকার মানসিক শোধন প্রক্রিয়া (cognitive cleansing)।

জার্নালিংয়ের মানসিক ও শারীরিক উপকারিতা

⇨ নিজের চিন্তা লিখলে বুঝতে পারা যায় কোন বিষয় আপনাকে অস্বস্তি দেয়, আবার কোনটি শান্তি এনে দেয়। এভাবে লেখা আপনাকে নিজের 'mental pattern' সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।

⇨ মানসিক চাপ জমে থাকে অচেতন মনে। লিখে ফেললে সেটি "বাইরে" চলে আসে। ফলে মন হালকা হয়, ঘুমের মান বাড়ে, এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

⇨ নিজের চিন্তা ও অনুভূতির দায় স্বীকার করা এক ধরনের পরিণত মানসিকতা।
জার্নালিং মানুষকে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে আরও স্থির ও পরিপক্ব করে তোলে।

⇨ গবেষণায় প্রমাণিত, নিয়মিত জার্নালিং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। কারণ, এটি stress hormone cortisol হ্রাস করে।

কীভাবে শুরু করবেন 'Self-Discovery Journaling'!

জার্নালিং শুরু করার জন্য কোনো বিশেষ সাহিত্যিক যোগ্যতা দরকার নেই। শুধু দরকার নিজের সঙ্গে সৎ হওয়ার সাহস।

☞ প্রথম ধাপ: একটি নোটবুক বা ডিজিটাল জার্নাল বেছে নিন। নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন, যেমন ঘুমানোর আগে ১০ মিনিট।

☞ দ্বিতীয় ধাপ: বিষয়ভিত্তিকভাবে শুরু করতে পারেন

আজ আমি কেমন বোধ করছি? 

আজকের দিনটা আমাকে কী শিখিয়েছে? 

আমি কিসে সবচেয়ে কৃতজ্ঞ?
আমার ভয়টা ঠিক কী নিয়ে?

☞ তৃতীয় ধাপ: যতটা সম্ভব নির্ভয়ে লিখুন। ব্যাকরণ, শুদ্ধতা, সুন্দর বাক্য,কিছুই জরুরি নয়। এই লেখা শুধু আপনার, অন্য কারও নয়।

☞ চতুর্থ ধাপ: সপ্তাহ শেষে নিজের লেখা পড়ে দেখুন। আপনি খুঁজে পাবেন এমন কিছু ভাবনা, যা হয়তো কখনো মুখে বলেননি, কিন্তু কলমের নিচে নীরবে বেরিয়ে এসেছে।

কেন এটি 'Self-Discovery'-এর চাবিকাঠি?

আমরা প্রতিদিন বাইরে পৃথিবী দেখি, কিন্তু নিজেদের মানসিক জগৎকে দেখতে ভুলে যাই। জার্নালিং সেই অভ্যন্তরীণ আয়না খুলে দেয়, যেখানে নিজের বাস্তব চিত্র দেখা যায়-  ভালো-মন্দ, ভয়-আশা, দুর্বলতা-শক্তি,সবকিছুই পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ে। এই আত্ম-উপলব্ধিই হল মানসিক উন্নয়নের প্রথম ধাপ, যা একসময় আত্মসম্মান, আত্মনিয়ন্ত্রণ, এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গঠনে সাহায্য করে।

জার্নালিং কোনো আধুনিক ট্রেন্ড নয়; এটি আত্ম-প্রকাশ ও মানসিক ভারসাম্যের প্রাচীন কৌশল। এটি শেখায়- নিজের আবেগ থেকে পালিয়ে নয়, বরং সেগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সংলাপ করাই মানসিক মুক্তির পথ। প্রতিদিন কয়েকটি বাক্য লিখে রাখলেই মনের গভীরে এক নতুন জানালা খুলে যায়। সেই জানালা দিয়ে দেখা যায়- নিজের এক নতুন সংস্করণ, আরও শান্ত, সচেতন, এবং পরিপূর্ণ।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ