যে খাবারগুলো বার্ধক্য ঠেকায়! জানুন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গোপন শক্তি
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমাদের শরীর প্রতিনিয়ত এক অদৃশ্য যুদ্ধে লিপ্ত; যেখানে প্রতিপক্ষ হলো 'ফ্রি র্যাডিকেলস', আর রক্ষাকারী সৈনিক 'অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট'। এই লড়াই চোখে দেখা যায় না, কিন্তু প্রভাব পড়ে প্রতিটি কোষে, প্রতিটি শ্বাসে, এমনকি আমাদের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াতেও। আধুনিক বিজ্ঞানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টকে বলা হয় 'প্রাকৃতিক ঢাল', যা শরীরকে অকালে বার্ধক্য, হৃদরোগ, ক্যানসার ও নানা ক্রনিক রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কীভাবে কাজ করে!
শরীরে বিপাকক্রিয়ার সময় কিংবা দূষণ, ধূমপান, মানসিক চাপ, অনিদ্রা ইত্যাদির কারণে তৈরি হয় ক্ষতিকর অণু, যাদের বলে ফ্রি র্যাডিকেল।
এই অণুগুলো কোষের ডিএনএ, প্রোটিন ও চর্বির ক্ষতি করে, যাকে বলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই ফ্রি র্যাডিকেলকে নিষ্ক্রিয় করে, যেন কোষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সংক্ষেপে, এটি কোষের "প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা" হিসেবে কাজ করে একধরনের কোষরক্ষী যোদ্ধা।
কোন খাবারে থাকে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট?
১. ফলমূল: ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, আঙুর, ডালিম, কমলা, পেয়ারা- এসব ফল অ্যান্থোসায়ানিন, ভিটামিন সি ও ফ্ল্যাভোনয়েডে সমৃদ্ধ।
২. সবজি: ব্রকোলি, পালং শাক, গাজর, টমেটো, লাল বেল পেপার- সবগুলোতেই রয়েছে বেটা-ক্যারোটিন, লাইকোপিন ও লুটিন।
৩. বাদাম ও বীজ: আলমন্ড, আখরোট, সূর্যমুখীর বীজ ও ফ্ল্যাক্সসিড শরীরে ভিটামিন ই ও ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যোগায়, যা কোষের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে।
৪. পানীয়: গ্রিন টি ও কফিতে উপস্থিত পলিফেনলস শরীরে ফ্রি র্যাডিকেলের প্রভাব কমায়।
৫. মসলা ও ভেষজ উপাদান: হলুদে থাকা কারকিউমিন, দারুচিনিতে সিনামালডিহাইড দুটোই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে পরিচিত।
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত, যেসব মানুষ নিয়মিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে
◑ হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ৩০% কম,
◑ ত্বকের বার্ধক্য প্রক্রিয়া ধীরগতি হয় এবং
◑ ইমিউন সিস্টেম অধিক সক্রিয় থাকে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে যেমন রক্ষা করে, তেমনি মানসিক চাপজনিত হরমোনের ভারসাম্যও বজায় রাখে।
তবে অতিরিক্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট নেওয়া বিপরীত ফল দিতে পারে।আর তাই ভারসাম্যই মূল চাবিকাঠি! বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দেন, "পুষ্টি আসুক প্রকৃতি থেকে, প্যাকেট থেকে নয়।" অর্থাৎ, ফল, সবজি ও প্রাকৃতিক খাবার থেকেই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর উপায়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোনো জাদু নয়, এটি আমাদের শরীরের ভেতর চলমান এক বৈজ্ঞানিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
যে খাবারে রঙ, ঘ্রাণ ও প্রাকৃতিক সতেজতা বেশি, সেগুলিতেই লুকিয়ে থাকে এই শক্তি। তাই প্রতিদিনের প্লেটে যদি থাকে কিছু সবুজ শাক, রঙিন ফল ও এক কাপ গ্রিন টি, তবে সেটিই হবে শরীরের জন্য সবচেয়ে প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা-কবচ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।