অ্যালোভেরা তেল তৈরির প্রক্রিয়া: ঘরেই বানান সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্যের প্রাকৃতিক সঙ্গী!

অ্যালোভেরা তেল তৈরির প্রক্রিয়া: ঘরেই বানান সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্যের প্রাকৃতিক সঙ্গী!
ছবির ক্যাপশান, অ্যালোভেরা তেল তৈরির প্রক্রিয়া: ঘরেই বানান সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্যের প্রাকৃতিক সঙ্গী!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

অ্যালোভেরা, যাকে বাংলায় ঘৃতকুমারী বলা হয়, হাজার বছরের পুরনো এক ভেষজ উদ্ভিদ। প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায় একে বলা হতো 'অমরতার উদ্ভিদ'। এর শীতল জেল ও নিরাময় ক্ষমতা আজও সমানভাবে জনপ্রিয়, আর সেই জেল থেকেই তৈরি হয় ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্য রক্ষার এক বিস্ময়কর উপাদান অ্যালোভেরা তেল। এই তেল শুধুমাত্র সৌন্দর্যচর্চায় নয়, বরং প্রদাহ কমানো, ত্বক আর্দ্র রাখা, রোদে পোড়া ত্বক সারানো এবং চুল পড়া রোধে এক অসাধারণ প্রাকৃতিক প্রতিকার। নিচে রয়েছে ঘরোয়া উপায়ে অ্যালোভেরা তেল তৈরির ধাপে ধাপে বিস্তারিত প্রক্রিয়া।

প্রয়োজনীয় উপকরণ

অ্যালোভেরা তেল তৈরিতে উপকরণ খুব বেশি লাগে না, তবে প্রতিটি উপাদানের গুণের ওপর নির্ভর করে তেলের কার্যকারিতা। সাধারণত যা লাগবে:

⇨ টাটকা অ্যালোভেরা পাতা ২-৩টি

⇨ক্যারিয়ার অয়েল (যেমন নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, জোজোবা অয়েল বা বাদাম তেল)

⇨ কাঁচের বোতল সংরক্ষণের জন্য

অ্যালোভেরা পাতাগুলো যেন রাসায়নিকমুক্ত হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ কীটনাশক বা কৃত্রিম সারের অবশিষ্টাংশ তেলের গুণাগুণ নষ্ট করতে পারে।

তৈরির প্রক্রিয়া

১️. প্রথমে অ্যালোভেরা পাতাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন। তারপর ধারালো ছুরি দিয়ে পাতা কেটে ভেতরের স্বচ্ছ জেলটি চামচের সাহায্যে বের করুন। পাতার সবুজ বাইরের অংশের ঠিক নিচে থাকে একধরনের হলদে তরল যা ল্যাটেক্স নামে পরিচিত। এটি অনেকের ত্বকে জ্বালাপোড়া করতে পারে, তাই সেটি ফেলে দিতে হবে।

২️. একটি কাচের বা স্টিলের পাত্রে দুই কাপ নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল নিন। তাতে সদ্য সংগ্রহ করা অ্যালোভেরা জেল যোগ করুন। অনুপাত সাধারণত হয় ২ কাপ তেলে ১ কাপ জেল।

৩️. এখন এই মিশ্রণটি খুব অল্প আঁচে ১৫–৩০ মিনিটের মতো গরম করুন। কখনও ফুটতে দেবেন না, কারণ উচ্চ তাপে অ্যালোভেরার এনজাইম ও ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে নেড়ে দিন যাতে জেল ও তেল ভালোভাবে মিশে যায়। গরম করার সময় ঘন গন্ধ বের হতে শুরু করবে, এটাই সংকেত যে সক্রিয় উপাদানগুলো তেলে মিশে গেছে।

৪️. ঠান্ডা হলে পরিষ্কার পাতলা কাপড় বা ছাঁকনি দিয়ে তেলটি ছেঁকে নিন। তাতে যেন জেলের কোনো অংশ না থাকে, নইলে দ্রুত নষ্ট হবে। ছেঁকে নেওয়া তেলটি কাচের বোতলে ভরে শুকনো ঠান্ডা স্থানে রাখুন। চাইলে রেফ্রিজারেটরেও রাখতে পারেন। সাধারণত এ তেল ৬ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।

উপকারিতা-

অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন A, C, E, এনজাইম, এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান।

➤ ত্বকের যত্নে: এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, রোদে পোড়া ত্বক সারায়, ব্রণ ও একজিমার জ্বালা কমায়।

➤ চুলের যত্নে: চুলের গোড়া মজবুত করে, খুশকি প্রতিরোধ করে, এবং স্কাল্পে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

➤ প্রদাহ ও ক্ষত নিরাময়ে: অ্যালোভেরার পলিস্যাকারাইড যৌগ ত্বকের ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কাজ করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালোভেরা তেল ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করে, যা বয়সজনিত বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।

ব্যবহারের উপায়-

◑ ত্বকে ব্যবহার করার আগে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।

◑ চুলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে তেল হালকা গরম করে স্কাল্পে মালিশ করুন, তারপর ১ ঘণ্টা পর মৃদু শ্যাম্পুতে ধুয়ে ফেলুন।

◑ প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে অল্প পরিমাণে মুখে লাগালে ত্বক নরম ও উজ্জ্বল থাকে।

অ্যালোভেরা তেল এক পূর্ণাঙ্গ ভেষজ ওষুধ। এতে প্রকৃতির বিশুদ্ধ গুণ, কোনো রাসায়নিক পদার্থের ছোঁয়া নেই। নিজের হাতে তৈরি এই তেল ত্বক, চুল ও মন - সবকিছুকেই করবে সতেজ ও প্রাণবন্ত। আজকের ব্যস্ত জীবনে, যেখানে প্রায় প্রতিটি পণ্যেই রাসায়নিক উপাদান থাকে, সেখানে অ্যালোভেরা তেল হতে পারে আপনার ঘরের সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর সৌন্দর্য-সহচর।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ