নিজেকে নতুনভাবে বোঝার কৌশল-জেনে নিন বিস্তারিত
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানুষ সবসময়ই নিজের জীবনের অর্থ খুঁজতে চায় আমি কে, কেন এখানে, আমার জীবনের মূল্য কী? এই উত্তর খোঁজার যাত্রায় আত্মজীবনী (Autobiography) এক অসাধারণ আয়নার মতো কাজ করে। অন্যের জীবনের সত্যিকারের গল্প পড়তে পড়তে মানুষ অনেক সময় নিজের জীবনের প্রতিফলন দেখতে পায় সফলতা, ব্যর্থতা, ভয়, আশা, সংগ্রাম- সব কিছু নতুনভাবে ব্যাখ্যা করতে শেখে।
মনোবিজ্ঞানে একটি ধারণা আছে "Narrative Identity Theory"। এর মূল কথা হলো, মানুষ নিজের জীবনকেও এক প্রকার গল্প হিসেবে বোঝে। যখন আমরা অন্যের জীবনকাহিনি পড়ি, বিশেষ করে সত্যিকার আত্মজীবনী, তখন আমাদের মস্তিষ্ক নিজের জীবনকেও গল্প আকারে পুনর্লিখতে শুরু করে। একজন লেখক যখন তার জীবনের বেদনা, সংগ্রাম বা মোড় ঘোরানো মুহূর্তগুলো খোলামেলা ভাবে তুলে ধরেন, পাঠকের মস্তিষ্ক তখন অবচেতনেই সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় 'Narrative Resonance', যেখানে অন্যের গল্প আমাদের মনের ভেতর নিজের জীবনের প্রতিধ্বনি তোলে।
যখন কেউ নেলসন ম্যান্ডেলা, এ.পি.জে. আব্দুল কালাম, হেলেন কেলার বা সত্যজিৎ রায়ের আত্মজীবনী পড়েন, তখন তারা শুধু ঘটনাবলি নয়, বরং এক দৃষ্টিভঙ্গি শিখে নেন। কীভাবে ব্যর্থতা থেকে উঠে দাঁড়াতে হয়, কষ্টের মধ্যেও লক্ষ্য স্থির রাখতে হয় এসব বাস্তব অভিজ্ঞতা পাঠককে নিজের জীবনের অর্থ ও মূল্যবোধ পুনর্বিবেচনা করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মজীবনী পড়ার পর মানুষ সাধারণত নিজের প্রতি সহানুভূতি (Self-Compassion) এবং সহনশীলতা (Resilience) বাড়ায়। কারণ তারা বুঝতে শেখে- কষ্ট, ভুল বা পতন জীবনেরই অংশ, এবং এগুলোই মানুষকে পরিপূর্ণ করে তোলে।
মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে আত্মজীবনীর ভূমিকা-
১. জীবনের অগ্রাধিকার নির্ধারণে সহায়তা করে: অনেকেই আত্মজীবনী পড়ে উপলব্ধি করেন- জীবনে আসলেই কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, আর কোনগুলো কেবল সাময়িক বিভ্রান্তি।
২. নিজের সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিতে শেখায়: একজন বিখ্যাত ব্যক্তিও কেমনভাবে মানসিক ভাঙন, হতাশা বা ভুল সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়েছেন, তা জানলে পাঠক নিজের দুর্বলতাকেও স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে শেখে।
৩. অনুপ্রেরণার উৎস তৈরি করে: একজন সাধারণ মানুষ কীভাবে অধ্যবসায়, বিশ্বাস ও সাহস দিয়ে জীবন বদলে দিতে পারেন, এই উপলব্ধিই আত্মজীবনীর মূল শক্তি।
মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণায় আত্মজীবনীর প্রভাব-
◑ University of Toronto-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়মিত আত্মজীবনী পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে Self-awareness বা আত্ম-সচেতনতা ২৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
◑ Journal of Positive Psychology জানায়, অনুপ্রেরণামূলক আত্মজীবনী পড়া পাঠকের ডিপ্রেশন ও মানসিক অবসাদ মোকাবেলায় কার্যকর সহায়তা করে, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে।
◑ Harvard Human Flourishing Program–এর গবেষণায় দেখা গেছে, যারা আত্মজীবনী বা জীবনভিত্তিক গল্প বেশি পড়েন, তারা জীবনের প্রতি গড়ে ৩০% বেশি আশাবাদী মনোভাব পোষণ করেন।
আত্মজীবনী আমাদের শেখায়- প্রত্যেক জীবনেরই একক গল্প আছে। কখনো সেটা আলোয় ভরা, কখনো অন্ধকারে; তবুও প্রতিটি গল্পের ভেতরে থাকে এক মানবিক যাত্রা।এই যাত্রায় পাঠক নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পায়- কোথায় ভুল হয়েছে, কোথায় শিখেছে, কোথায় পরিবর্তন প্রয়োজন। এই আত্মবিশ্লেষণই মানুষকে করে তোলে আরও পরিণত, সহানুভূতিশীল ও বাস্তবমুখী।
আত্মজীবনী পড়া মানে কেবল অন্যের জীবন জানা নয়, বরং নিজের জীবনকে নতুন চোখে দেখা।এটি এক ধরনের মানসিক প্রতিফলন, যেখানে অন্যের গল্পের আলোয় নিজের গল্পের ছায়া স্পষ্ট হয়ে ওঠে।কেউ হয়তো অনুপ্রেরণা পায়, কেউ শান্তি খুঁজে পায়, আবার কেউ নতুন করে বাঁচার শক্তি খুঁজে নেয়।তাই, যে যত বেশি জীবন পড়ে, সে তত গভীরভাবে নিজের জীবন বুঝতে শেখে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।