চেরিমোয়া:যে ফলে মুগ্ধ হয়েছিলেন মার্ক টোয়েন! জানুন এর মিষ্টতা ও পুষ্টির গোপন রহস্য

চেরিমোয়া:যে ফলে মুগ্ধ হয়েছিলেন মার্ক টোয়েন! জানুন এর মিষ্টতা ও পুষ্টির গোপন রহস্য
ছবির ক্যাপশান, চেরিমোয়া:যে ফলে মুগ্ধ হয়েছিলেন মার্ক টোয়েন! জানুন এর মিষ্টতা ও পুষ্টির গোপন রহস্য
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ফল শুধুই পুষ্টি দেয় না, এটি আমাদের অনুভূতিতেও আনন্দ ছড়ায়। এমনই একটি ফল হলো চেরিমোয়া (Cherimoya)। এটি মিষ্টি, ক্রিমি এবং পুষ্টিতে ভরপুর। মার্ক টোয়েন একবার এটিকে "ফলমূলের রানি" বলে অভিহিত করেছিলেন। আজও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চেরিমোয়া তার স্বাদ, স্বাস্থ্যকর উপাদান এবং বহুমুখী ব্যবহার দিয়ে ফলপ্রেমীদের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয়।

চেরিমোয়া মূলত দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার ট্রপিকাল অঞ্চলে জন্মায়। এর বাইরের দিক সবুজ ও দানাপূর্ণ, যেন ছোট বাঁধাকপির মতো। ভিতরের মাংস মাখনের মতো ক্রিমি ও মধুর মতো মিষ্টি, যা খেতেই প্রায় সবাই মুগ্ধ হয়। তবে, কালো বীজগুলো বিষাক্ত, তাই কেবল মাংস ব্যবহার হয় খাদ্য হিসেবে।

এর স্বাদকে অনেকে "আপেল, কলা ও আনারসের মিশ্রণ" হিসেবে বর্ণনা করেন। চেরিমোয়া যত বেশি পাকা হয়, তত মিষ্টি, সুগন্ধী এবং ক্রিমি হয়।

চেরিমোয়া শুধুই মিষ্টি নয়, এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর।

এতে রয়েছে - 

◑ ভিটামিন সি- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও কোষকে রক্ষা করে।

◑ পটাশিয়াম- হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

◑ ডায়েটারি ফাইবার- হজমতন্ত্র সচল রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।

◑ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট- অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে বার্ধক্য ধীর করে এবং কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।

চেরিমোয়ার ক্রিমি টেক্সচার এবং মিষ্টি স্বাদ এটিকে ডেজার্টের বিকল্প হিসেবে বিশেষ জনপ্রিয়।

খাওয়ার উপায়-

চেরিমোয়া অনেকভাবে খাওয়া যায়

⇨ কাঁচা খাওয়া: পাকা চেরিমোয়া চামচ দিয়ে খাওয়া সবচেয়ে সহজ ও স্বাস্থ্যকর।

⇨ স্মুদি বা মিল্কশেক: দুধ, মধু বা অন্যান্য ফলের সঙ্গে ব্লেন্ড করলে স্বাস্থ্যকর পানীয় তৈরি হয়।

⇨ ডেজার্টে ব্যবহার: আইসক্রিম, সালাড, প্যানকেক বা পুডিংতে চেরিমোয়া মেলে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর স্বাদ।

চেরিমোয়া শুধুই স্বাদে নয়, এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড, পলিফেনল ও ভিটামিন হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান দেহের কোষকে ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে।

নিয়মিত চেরিমোয়া খেলে প্রদাহ কমে, হজমতন্ত্র ভালো থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এতে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিলিয়ে হাড় ও পেশীর স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

গবেষণায় দেখা গেছে, চেরিমোয়া মুড-বুস্টার হিসেবে কাজ করে, কারণ এতে ভিটামিন B6 ও অন্যান্য নিউরোট্রান্সমিটারকে সহায়ক উপাদান রয়েছে, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের নিঃসরণকে প্রভাবিত করে।

চেরিমোয়া শুধু দক্ষিণ আমেরিকাতেই নয়, আজ বিশ্বব্যাপী ফলপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয়। মার্ক টোয়েন এটিকে "ফলমূলের রানি" হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা ও এশিয়ার কিছু অংশে চেরিমোয়া গ্রীষ্মকালীন বিশেষ ডেজার্ট হিসেবে ব্যবহার হয়। বিশেষ রেসিপিতে চেরিমোয়া আইসক্রিম, কেক, স্মুদি এবং সালাডের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চেরিমোয়ার ইতিহাস, বৈজ্ঞানিক পুষ্টিগুণ এবং স্বাদ মিলিয়ে এটিকে বলা যায় ফলপ্রেমীদের এক অনন্য রত্ন।

সংরক্ষণ ও পাকা করার টিপস-

⇨ পাকা না হওয়া চেরিমোয়া রুম টেম্পারেচারে রেখে পাকা করা যায়।

⇨ পাকা হলে ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে ২–৩ দিন সতেজ থাকে।

⇨ বেশি পাকা হলে স্মুদি বা ডেজার্টে ব্যবহার করা উত্তম।


চেরিমোয়া কেবল মিষ্টি ও ক্রিমি স্বাদের জন্য নয়, এটি স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও সুখের এক অনন্য সংমিশ্রণ। মার্ক টোয়েনের প্রিয় ফল হিসেবে পরিচিত এই ফল আজও বিশ্বজুড়ে তার স্বাদ, পুষ্টিগুণ এবং বহুমুখী ব্যবহার দিয়ে ফলপ্রেমীদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী পছন্দ। চেরিমোয়া প্রকৃতির মিষ্টি উপহার, যা আমাদের জীবনের স্বাদ ও স্বাস্থ্য উভয়ই সমৃদ্ধ করে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ