শতবর্ষে আরএসএসঃ ভারতের রাজনীতিতে উগ্র হিন্দুত্বের দখল
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) সম্প্রতি তাদের শতবর্ষ উদযাপন করেছে। মহারাষ্ট্রের নাগপুরে আরএসএস-এর সদর দপ্তরে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে বাঁশের লাঠি হাতে, দেশাত্মবোধক সঙ্গীত গেয়ে ইউনিফর্ম পরিহিত হাজারো সদস্যের শোভাযাত্রার মাধ্যমে সংগঠনটির তাদের বিশাল সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করে।
বার্তা সংস্থা এএফপি-র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি আজও ভারতের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব বিস্তার করে আছে। উল্লেখ্য ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র আদর্শিক ও সাংগঠনিক ভিত্তি আরএসএস ।
শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে নাগপুরে সাদা শার্ট, বাদামি প্যান্ট ও কালো টুপি পরিহিত আরএসএস কর্মীরা সুশৃঙ্খলভাবে পদযাত্রা, ব্যায়াম এবং মুষ্টিযুদ্ধ প্রদর্শন করেন। এ সময় তারা 'আমার জীবন উৎসর্গ হোক তোমার সেবায়' এবং 'চিরকাল তোমায় প্রণাম করি, প্রিয় মাতৃভূমি!' এ ধরনের দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন।
আরএসএস নিজেদেরকে 'বিশ্বের বৃহত্তম সংগঠন' দাবি করে, যদিও তারা সদস্য সংখ্যা প্রকাশ করে না। তাদের আদর্শ হলো 'হিন্দুত্ব' যা হিন্দু ধর্মকে শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় পরিচয় হিসেবে নয়, বরং ভারতের প্রকৃত জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে।
আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেন, সংখ্যালঘুরা 'গ্রহণযোগ্য', তবে তাদের 'বিভাজন সৃষ্টি করা উচিত নয়'।
অন্যদিকে, ইতিহাসবিদ মৃদুলা মুখার্জি সতর্ক করে বলেন, আরএসএস তাদের পথে আসা সংখ্যালঘু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান বা ভিন্নমতাবলম্বী হিন্দু যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধেই লড়তে প্রস্তুত।
আরএসএস এর বিতর্কিত ইতিহাস এবং রাজনৈতিক উত্থান
ব্রিটিশ শাসনামলে আরএসএস প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলনের থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছিল। নেহরু একবার এই সংগঠনটিকে 'স্বভাবতই ফ্যাসিবাদী' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
ইতিহাসবিদ মুখার্জির মতে, আর্কাইভগুলোতে ইউরোপের ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের সঙ্গে আরএসএসের যোগসূত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৯৪৭ সালের বিভাজনের সময় সংগঠনটি একটি সশস্ত্র হিন্দু মিলিশিয়ার ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতার পর, ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধী হত্যাকাণ্ডে এক সাবেক আরএসএস সদস্যের সম্পৃক্ততার জেরে প্রায় দুই বছর এটি নিষিদ্ধ ছিল।
নিষিদ্ধাদেশ উঠে যাওয়ার পর তারা 'শাখা' নামে স্থানীয় ইউনিট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্রুত বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে দেশজুড়ে প্রায় ৮৩ হাজার শাখা, ৫০ হাজারের বেশি বিদ্যালয় ও ১ লাখ ২০ হাজার সামাজিক প্রকল্প পরিচালনার দাবি করে আরএসএস।
আরএসএস-এর রাজনৈতিক উত্থান ঘটে ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ইস্যুকে কেন্দ্র করে। এই সহিংস আন্দোলন সফলভাবে ধর্মীয় আবেগকে রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তর করে, যা পরে মুসলিমবিরোধী রূপ নেয়।
মোদি আমলে প্রভাব
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি-যে নিজেও একসময় আরএসএসের 'প্রচারক' ছিল, ক্ষমতায় আসার পর ভারতের রাজনীতিতে আরএসএসের প্রভাব বেড়ে যায়।
সমালোচকগণ বলেন, মোদি সরকারের নীতি দেশের প্রায় ২২ কোটি মুসলমানকে প্রান্তিক করে তুলছে।
মার্কিনভিত্তিক গবেষক রাকিব হামিদ নায়েকের দাবি, মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে সহিংসতা, গণপিটুনি ও ঘৃণামূলক বক্তব্যের পরিমাণ স্পষ্টভাবে বেড়েছে।
তবে আরএসএস প্রধান ভাগবত এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
আরএসএস বিষয়ে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক স্বপন দাশগুপ্তের মতে, মোদির আমলে আরএসএস ভারতীয় সমাজকে আরো জাতীয়তাবাদী ও কম পাশ্চাত্যধর্মী পথে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা দাবি করে, তাদের মূল লক্ষ্য হলো 'একতাবদ্ধ দেশের জন্য' ভালো মূল্যবোধ শেখানো।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।