জানেন কি? মস্তিষ্ক কেন সুখের চেয়ে নেতিবাচকতাকে বেশি মনে রাখে!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানুষের মস্তিষ্ক এক আশ্চর্য যন্ত্র। এটি প্রতিদিন অসংখ্য তথ্য গ্রহণ করে, কিন্তু সব কিছু মনে রাখে না। তবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, নেতিবাচক বা ভয়াবহ খবর আমরা ইতিবাচক খবরের চেয়ে অনেক দ্রুত ও দীর্ঘ সময়ের জন্য মনে রাখি।এর কারণ কেবল মানসিক নয়, গভীরভাবে জৈবিক (biological) ও বিবর্তনগত (evolutionary)।
মনোবিজ্ঞানে একটি সুপরিচিত ধারণা আছে Negativity Bias।
এর মানে হলো, আমাদের মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবেই নেতিবাচক তথ্যের প্রতি বেশি সংবেদনশীল।এর মূল কারণ বিবর্তনের ইতিহাসে লুকিয়ে আছে।
প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষকে টিকে থাকতে হতো বিপদ, হিংস্র প্রাণী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে। যে মস্তিষ্ক বিপদ বা নেতিবাচক সংকেত দ্রুত বুঝত, তারাই বেঁচে থাকত এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই বৈশিষ্ট্য উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। অর্থাৎ, ভয় ও সতর্কতার প্রতিক্রিয়া ছিল এক ধরনের টিকে থাকার কৌশল (Survival Mechanism)।
আমাদের মস্তিষ্কে একটি ছোট্ট অংশ আছে, নাম Amygdala। এটি মূলত আবেগ প্রক্রিয়াকরণ ও বিপদের সিগনাল শনাক্ত করার কাজ করে।
যখন আমরা কোনো নেতিবাচক খবর দেখি, যেমন :দুর্ঘটনা, সহিংসতা বা দুর্যোগ—তখন অ্যামিগডালা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং শরীরকে সতর্ক করে দেয়। এই অবস্থায় শরীরে কর্টিসল (Cortisol) ও অ্যাড্রেনালিন (Adrenaline) হরমোন নিঃসৃত হয়,যা আমাদের মস্তিষ্ককে বলে, "এই ঘটনাটা গুরুত্বপূর্ণ—মনে রাখো!" ফলস্বরূপ, নেতিবাচক খবরগুলো দীর্ঘমেয়াদে স্মৃতিতে থেকে যায়, কিন্তু ইতিবাচক ঘটনা দ্রুত মুছে যায়।
বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী রায় বাউমাইস্টারের (Roy Baumeister) গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মস্তিষ্ক একই মাত্রার একটি ভালো ও খারাপ ঘটনার মধ্যে খারাপ ঘটনাকে প্রায় পাঁচগুণ বেশি প্রভাবশালীভাবে মনে রাখে।
এ কারণেই কোনো খারাপ সংবাদ, মন্তব্য বা অভিজ্ঞতা আমাদের মনে অনেক গভীর দাগ ফেলে, যেখানে ভালো খবরের স্মৃতি তুলনামূলকভাবে দ্রুত মিলিয়ে যায়
বর্তমান সময়ের ২৪ ঘণ্টার নিউজ সাইকেল ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদম এই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
যেহেতু নেতিবাচক খবর বেশি ক্লিক, ভিউ ও শেয়ার পায়, তাই সেটিই বেশি প্রচারিত হয়।ফলে আমরা প্রতিনিয়ত ভয়, সংকট ও বিপদের গল্পে ঘেরা থাকি, যা মস্তিষ্কে একধরনের 'চিরস্থায়ী সতর্কতা অবস্থা (Chronic Stress State)' তৈরি করে।
যদিও নেতিবাচক খবর সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়, তবে কিছু উপায় মস্তিষ্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে—
⇨ সচেতন সংবাদগ্রহণ: দিনে নির্দিষ্ট সময় সংবাদ দেখা বা পড়া, সারাক্ষণ নয়।
⇨ ইতিবাচক খবরের চর্চা: বিজ্ঞান, সাফল্য বা উদ্ভাবনের খবরও দেখা, যা মস্তিষ্কের ভারসাম্য রক্ষা করে।
⇨ ধ্যান ও সচেতনতা অনুশীলন (Mindfulness): অ্যামিগডালার অতিরিক্ত সক্রিয়তা কমিয়ে শান্ত চিন্তায় সহায়তা করে।
⇨ নিজেকে প্রশ্ন করুন: "এই খবর আমাকে কী শেখাচ্ছে, না শুধু ভয় দিচ্ছে?"
মস্তিষ্কের কাজই হলো আমাদের রক্ষা করা, আনন্দ দেওয়া নয়।
তাই এটি স্বাভাবিকভাবেই বিপদের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়, যাতে আমরা বেঁচে থাকতে পারি। কিন্তু আধুনিক যুগে, যেখানে তথ্যের প্রবাহ অনবরত, এই প্রাকৃতিক প্রবণতা আমাদের মাঝে অপ্রয়োজনীয় চাপ, উদ্বেগ ও হতাশা বাড়াতে পারে। তাই নেতিবাচক খবর মনে রাখা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক প্রবণতা হলেও, কীভাবে সেটির প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই মানসিক সচেতনতাই আজকের যুগে সবচেয়ে বড় দক্ষতা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।