মানব সভ্যতার পরবর্তী গন্তব্যের দরজা খুলে দিচ্ছে এলন মাস্কের মহা পরিকল্পনা!
 
                                        
                                    - Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মহাকাশ, এক সময় যা ছিল কেবল কল্পকাহিনির পৃষ্ঠা আর চলচ্চিত্রের দৃশ্য আজ সেটিই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে SpaceX–এর উচ্চাভিলাষী প্রকল্প Starship-এর মাধ্যমে। এটি কেবল একটি রকেট নয়, বরং মানবজাতির পরবর্তী যাত্রার বাহন, যেখানে গন্তব্য হতে পারে চাঁদ, মঙ্গল কিংবা আরও দূরের কোনো গ্রহ।স্টারশিপ-এর লক্ষ্য হলো মহাকাশ ভ্রমণকে ব্যয়বহুল ও সীমিত সুযোগের পরিবর্তে "নিয়মিত, টেকসই এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য" করে তোলা।
স্টারশিপ প্রকল্পটি পরিচালনা করছে মার্কিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান SpaceX, যার প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক মনে করেন,"মানব জাতিকে বহুগ্রহীয় জীব হিসেবে টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের মঙ্গলগ্রহে পৌঁছাতেই হবে।"এই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় স্টারশিপের ধারণা একটি সম্পূর্ণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান, যা একবারে ১৫০ টন পর্যন্ত মালপত্র বা ১০০ জন মানুষ বহন করতে পারবে।
এই রকেটটির বিশেষত্ব হলো-এর দুটি ধাপই (Super Heavy Booster এবং Starship spacecraft) পুনরায় ব্যবহারযোগ্য, অর্থাৎ পৃথিবীতে ফিরে এসে আবারও যাত্রার জন্য প্রস্তুত করা যায়। এটি ভবিষ্যতের মহাকাশ ভ্রমণ খরচকে কয়েকগুণ কমিয়ে দেবে।
প্রযুক্তিগত বিস্ময়: কীভাবে কাজ করে স্টারশিপ!
স্টারশিপের দুটি প্রধান অংশ
১. Super Heavy Booster:এটি নিচের অংশ, যা উৎক্ষেপণের সময় শক্তিশালী ঠেলা (thrust) তৈরি করে মহাকাশে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ৩৩টি Raptor ইঞ্জিন, যা তরল মিথেন ও তরল অক্সিজেন (LOX) দ্বারা চালিত-এই জ্বালানি ব্যবস্থাই ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহেও ব্যবহার করা যাবে, কারণ মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে থাকা CO₂ থেকে মিথেন তৈরি সম্ভব।
২. Starship Spacecraft:এটি উপরের অংশ, যেখানে থাকবে ক্রু (মানুষ) বা কার্গো (পণ্য)।মহাকাশে পৌঁছানোর পর এটি আলাদা হয়ে নিজের কক্ষপথে অবস্থান নেয় এবং কাজ শেষে পৃথিবীতে ফিরে আসে পুনঃব্যবহারযোগ্যভাবে, যেন এটি আকাশে উঠা কোনো বিমান, আবার নেমে আসে নিরাপদে।
SpaceX ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, NASA-এর Artemis Program-এর অংশ হিসেবে স্টারশিপ ২০২৬ সালের মধ্যে মানুষকে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করাবে।এরপরই মূল লক্ষ্য-মঙ্গলগ্রহে মানব বসতি স্থাপন।স্টারশিপের মডুলার নকশা এমনভাবে তৈরি, যাতে এটি মঙ্গলের পৃষ্ঠে নেমে স্থানীয় সম্পদ (যেমন বরফ, কার্বন ডাই-অক্সাইড) ব্যবহার করে জ্বালানি উৎপাদন করতে পারে।এই ধারণাটিই পরিচিত "In-Situ Resource Utilization (ISRU)" নামে,যা মহাকাশে আত্মনির্ভরতা গড়ে তোলার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
অর্থনৈতিক বিপ্লব: কম খরচে মহাকাশ ভ্রমণ!
একটি প্রচলিত রকেট উৎক্ষেপণে যেখানে শত কোটি ডলার ব্যয় হয়, সেখানে স্টারশিপের পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ব্যয় নামিয়ে আনা যাবে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মধ্যে। এটি শুধু সরকারি সংস্থা নয়, ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত মহাকাশ পর্যটন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উপগ্রহ স্থাপনেও বিপ্লব ঘটাবে।মহাকাশে পণ্য সরবরাহ, এমনকি পৃথিবীর দুই প্রান্তের মধ্যে দ্রুত যাত্রাতেও স্টারশিপ ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন- নিউ ইয়র্ক থেকে টোকিও মাত্র ৩০ মিনিটে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
তাৎপর্য ও চ্যালেঞ্জ-
স্টারশিপ নির্মাণের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো,তাপ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (heat shield), কারণ মহাকাশ থেকে ফিরে আসার সময় যানের গায়ে কয়েক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা তৈরি হয়। SpaceX এজন্য ব্যবহার করছে stainless steel alloy 301, যা তাপ শোষণ করে গলে না গিয়ে প্রতিফলিত করে দেয়।অন্যদিকে, এর ন্যাভিগেশন সিস্টেমে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক autonomous flight control, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে নিজে থেকেই অবতরণ করতে সক্ষম।
স্টারশিপ কেবল প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়,এটি মানব সভ্যতার টিকে থাকার এক সম্ভাবনা।পৃথিবীর সম্পদ সীমিত, জলবায়ু পরিবর্তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ বাড়ছে। এলন মাস্কের মতে, "মানবজাতি যদি বিলুপ্তির ঝুঁকি এড়াতে চায়, তাহলে আমাদের একাধিক গ্রহে বাস করতে হবে।"স্টারশিপ সেই পথের প্রথম ধাপ, যা ভবিষ্যতের "মাল্টিপ্ল্যানেটারি লাইফ" বাস্তবে রূপ দিতে পারে।
যেভাবে রাইট ব্রাদার্সের বিমান মানব ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় খুলেছিল, ঠিক তেমনভাবেই SpaceX Starship হতে পারে মহাকাশযাত্রার সেই নতুন সূচনা।এটি আমাদের শুধু তারার দিকে তাকাতে শেখাচ্ছে না বরং সেখানে পৌঁছানোর উপায়ও দিচ্ছে।স্টারশিপ হয়তো আগামী শতাব্দীর সবচেয়ে বড় স্মারক হয়ে থাকবে, যেখানে পৃথিবীর সীমা শেষ হয়ে, শুরু হবে মানবতার পরবর্তী অধ্যায়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।
 
                                 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    