গণমাধ্যমে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে বিচার পাওয়া নারী কর্মীর সংখ্যা 'শূন্য'
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে বিচার পাওয়া কোনো নারী কর্মীর নজির নেই। সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা স্ট্রিম’-এর নারী কর্মী স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের মৃত্যু এই বাস্তবতাকে আবারও সামনে এনেছে। যৌন হয়রানির অভিযোগের পরও কোনো গণমাধ্যম এখন পর্যন্ত আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। হাইকোর্ট ২০০৯ সালে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল, তবে তা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি।
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বিষয়টি নিয়ে বলেন, দেশে যখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন গণমাধ্যমেও পরিবর্তন আসবে। সরকারের দায়িত্ব আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করা, কিন্তু কোনো সরকারই এই নির্দেশ বাস্তবায়নের পথে হাঁটেনি। দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ মনে করেন, প্রেস কাউন্সিল আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে ভূমিকা নিতে পারত, কিন্তু কার্যত কেউ তদারকির দায়িত্ব নিচ্ছে না।
গত শনিবার ঢাকার ধানমন্ডিতে নিজ বাসা থেকে ঢাকা স্ট্রিম-এর গ্রাফিক ডিজাইনার স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হলেও ঘটনার পেছনে কর্মক্ষেত্রে মানসিক নির্যাতন বা হয়রানির বিষয়টি তদন্তে এসেছে। জানা যায়, গত জুলাইয়ে ঢাকা স্ট্রিম-এর বাংলা কনটেন্ট এডিটর আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ করেন সাতজন নারী কর্মী। মোট ২৮ জনের স্বাক্ষরিত সেই অভিযোগে নারী কর্মীরা স্পষ্টভাবে হয়রানির বর্ণনা দেন।
অভিযোগের পর আলতাফ শাহনেওয়াজকে নিউজরুম থেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ, তবে অভিযোগকারীদের মধ্যে তিনজন পরবর্তীতে চাকরিচ্যুত হন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন নারী কর্মী উর্মি শর্মা, যিনি অভিযোগকারীদের অন্যতম। তিনি জানান, অভিযোগের পরেও আলতাফ শাহনেওয়াজ আরও ক্ষমতাবান হয়ে অফিসে ফিরে আসেন এবং তার আচরণ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তার মতে, চাকরি হারানোর আশঙ্কায় অধিকাংশ নারী কর্মী নীরব থাকতে বাধ্য হন।
ঢাকা স্ট্রিম-এর সম্পাদক ইফতেখার মাহমুদ দাবি করেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে নিউজরুম থেকে প্রত্যাহার করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠান তখন নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় থাকায় শ্রম আইনের পূর্ণ শর্ত অনুযায়ী কমিটি গঠন সম্ভব হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন।
স্বর্ণময়ীর মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবার বলছে, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চায় তারা। আত্মহত্যার পেছনে অফিসের মানসিক চাপ বা হয়রানির যোগসূত্র থাকলে তা উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
অন্যদিকে, আলতাফ শাহনেওয়াজের স্ত্রী সাংবাদিক ফাতেমা আবেদীন নাজলা বলেছেন, তিনি নিরপেক্ষ তদন্ত চান। তার স্বামী দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত শাস্তি হোক, তবে পরিবারকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে যে কুৎসা রটানো হচ্ছে, তারও প্রতিকার চান তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় সাংবাদিকতা পেশায় নারীরা আজও নিরাপত্তাহীন। ৩০টি টেলিভিশনের মধ্যে মাত্র তিনটিতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি আছে। অধিকাংশ নারী কর্মী ভয় ও অনিশ্চয়তার কারণে অভিযোগ তুলতে সাহস পান না।
এই পরিস্থিতিতে স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের মৃত্যু গণমাধ্যমে নারীর নিরাপত্তা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
তথ্য সূত্রঃ ডি ডব্লিউ
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।