আকস্মিক ও অপমৃত্যু থেকে রক্ষায় যে দোয়া শিখিয়েছেন নবী (সা.)

আকস্মিক ও অপমৃত্যু থেকে রক্ষায় যে দোয়া শিখিয়েছেন নবী (সা.)
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানুষের জীবনে মৃত্যু একটি অনিবার্য ও অপ্রতিরোধ্য সত্য। পৃথিবীর ইতিহাসে কেউই এই অমোঘ নিয়তির হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তবে হঠাৎ বা আকস্মিক মৃত্যু, যা মানুষকে প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়েই ছিনিয়ে নেয় দুনিয়ার জীবন, তা থেকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে আকস্মিক মৃত্যুকে একটি শঙ্কাজনক বিষয় হিসেবে দেখা হয়, বিশেষত তাদের জন্য, যারা তওবা ও আত্মশুদ্ধির সুযোগ পান না।

আলেমদের মতে, মুমিন ব্যক্তি মৃত্যুর পর আল্লাহর নিকটে ফিরে যান, যা তার জন্য কল্যাণ ও প্রশান্তির কারণ। মৃত্যুর মাধ্যমে সে দুনিয়ার কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করে এবং জান্নাতের পথে অগ্রসর হয়। সুনানে নাসায়িতে বর্ণিত এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, “মুমিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন সে দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে নিষ্কৃতি পায়।” পক্ষান্তরে, পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তি আকস্মিক মৃত্যুর মাধ্যমে অনুতাপ ও তওবার সুযোগ হারায় এবং আল্লাহর ক্রোধের মুখোমুখি হয়।

আয়েশা (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, আকস্মিক মৃত্যু মুমিনের জন্য মুক্তি হলেও পাপীর জন্য তা আফসোসের কারণ। (মুসাননাফ ইবনে আবি শায়বা, বায়হাকি) এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে এমন মৃত্যুর ভয় থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। সাহাবি উবাইদ ইবনে খালিদ সালামি (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, “হঠাৎ মৃত্যু আফসোসের পাকড়াও স্বরূপ।” (আবু দাউদ, হাদিস : ৩০৯৬)

তাছাড়া, আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর হাদিসে উল্লেখ আছে, “কিয়ামতের একটি আলামত হলো হঠাৎ মৃত্যুর বৃদ্ধি।” (তাবারানি, আস-সিলসিলাতুস সাহিহাহ) বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে, চিকিৎসা ও দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর হার বৃদ্ধির সঙ্গে এই হাদিসের তাৎপর্য নতুনভাবে অনুধাবন করা হচ্ছে।

নবী করিম (সা.) আকস্মিক মৃত্যুসহ বিভিন্ন বিপদ থেকে রক্ষার জন্য একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করতেন, যা সাহাবিরা হাদিসে সংরক্ষণ করেছেন। দোয়াটি হলো,

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَدْمِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّي، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْغَرَقِ وَالْحَرَقِ وَالْهَرَمِ، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ يَتَخَبَّطَنِي الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ فِي سَبِيلِكَ مُدْبِرًا، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ لَدِيغًا।

বাংলা অর্থে দোয়াটির সারাংশ হলো, “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই চাপা পড়ে, পড়ে গিয়ে, পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে বা বার্ধক্যে মৃত্যুবরণ থেকে। আশ্রয় চাই মৃত্যুর সময় শয়তানের প্রভাব থেকে, জিহাদ থেকে পলায়নপর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা থেকে এবং বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে মৃত্যুবরণ থেকে।” (আবু দাউদ, নাসায়ি, হাকিম)

ধর্মীয় বিশ্লেষকরা বলেন, এই দোয়ার মাধ্যমে মানুষ কেবল শারীরিক বিপদ থেকেই নয়, বরং আধ্যাত্মিক বিচ্যুতি থেকেও সুরক্ষার প্রার্থনা করে। এতে মুমিনের জীবনে সচেতনতা, আত্মসমালোচনা এবং মৃত্যুর প্রস্তুতির অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয়।

শেষে ইসলামী শিক্ষায় বলা হয়েছে, মৃত্যুর সময় যেন মানুষের মুখে থাকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, এই কামনা নিয়েই মুসলমানদের জীবন যাপন করা উচিত। আল্লাহ তাআলা যেন প্রত্যেক মুমিনকে ঈমান ও আমলের সঙ্গে উত্তম পরিণতি দান করেন, এ দোয়া করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ