সম্পর্ক নষ্ট বা ক্যারিয়ার আটকে? সম্ভবত আপনার EI-এর ঘাটতি!
 
                                        
                                    - Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আজকের পৃথিবীতে শুধু ডিগ্রি বা জ্ঞানই সাফল্যের মাপকাঠি নয়,যিনি নিজের আবেগকে বুঝতে জানেন, তিনিই আসলে জীবনের খেলায় এগিয়ে। অফিসের টানটান পরিবেশে, সম্পর্কের জটিলতায় কিংবা কঠিন সিদ্ধান্তে—সব জায়গায় জয়ী হয় সেই মানুষ, যিনি ঠান্ডা মাথায় অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আর এই ক্ষমতার নামই হলো ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স (Emotional Intelligence বা EQ)—যা এখন বিশ্বজুড়ে সফলতার নেপথ্যে "নীরব শক্তি" হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স কী?
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স মানে হলো নিজের আবেগ চিনে তা নিয়ন্ত্রণ করা এবং অন্যের আবেগ বুঝে সহানুভূতির সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানানো। মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল গলম্যান EQ-কে মানুষের মানসিক দক্ষতা ও আচরণগত পরিপক্বতার সূচক হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। EQ-এর মূল পাঁচটি উপাদান
১️। Self-awareness (নিজেকে জানা) – নিজের আবেগ ও প্রতিক্রিয়ার উৎস বোঝা।
২। Self-regulation (আবেগ নিয়ন্ত্রণ) – রাগ, ভয় বা উদ্বেগের সময় স্থির থাকা।
৩। Motivation (অভ্যন্তরীণ প্রেরণা) – ব্যর্থতার মধ্যেও লক্ষ্যপানে এগিয়ে চলা।
৪️। Empathy (সহানুভূতি) – অন্যের অনুভূতিকে বুঝে সম্মান দেওয়া।
৫️। Social skills (সম্পর্ক দক্ষতা) – সুন্দর যোগাযোগ, সহযোগিতা ও নেতৃত্বে পারদর্শিতা।
কর্মজীবনে EQ-এর অপরিহার্যতা-
আজকের কর্মজীবনে, যেখানে প্রতিযোগিতা প্রতিদিনের বাস্তবতা, সেখানে EQ-ই নির্ধারণ করে কে নেতৃত্ব দেবে, আর কে শুধু অনুসরণ করবে।
একজন ম্যানেজার যিনি টিমের মানসিক অবস্থা বুঝে কাজ ভাগ করেন,একজন কর্মী যিনি ব্যর্থতায় ভেঙে না পড়ে সমাধান খোঁজেন, কিংবা একজন উদ্যোক্তা যিনি নিজের ভয়ের ওপর জয় পান—সবাই-ই উচ্চ EQ-র উদাহরণ।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের ৭০% নির্ভর করে EQ-এর ওপর, IQ-এর নয়। কারণ, প্রযুক্তি শেখানো যায় কিন্তু আবেগ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা গড়ে তুলতে হয় সময় ও চেতনার মাধ্যমে।
সম্পর্কের জগতে EQ-এর ভূমিকা-
EQ কেবল কর্মজীবনে নয়, ব্যক্তিগত সম্পর্কেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ EQ-সম্পন্ন মানুষ
⇨ সম্পর্কের বিরোধে আবেগ নয়, বোঝাপড়াকে অগ্রাধিকার দেয়,
⇨ভুল হলে ক্ষমা চাইতে ও অন্যকে ক্ষমা করতে পারে এবং
⇨ নিজের অনুভূতি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে জানে।
পরিবার, বন্ধুত্ব কিংবা দাম্পত্য সব সম্পর্কেই EQ এমন এক মানসিক ভারসাম্য এনে দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা ও ভালোবাসা বজায় রাখে।
স্নায়ুবিজ্ঞানে প্রমাণ মিলেছে যে, আমাদের মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা অংশটি আবেগের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। উচ্চ EQ সম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স সক্রিয় থাকে, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ধৈর্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।এ কারণেই EQ-সম্পন্ন মানুষরা চাপে পড়লেও আতঙ্কিত না হয়ে যুক্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান খোঁজে।
EQ বাড়ানোর কিছু কার্যকর উপায়-
☞ প্রতিদিন নিজের আবেগ সম্পর্কে সচেতন থাকা ও জার্নাল লেখা।
☞ রাগ বা উদ্বেগের মুহূর্তে এক মিনিট নীরব থাকা।
☞ অন্যের অবস্থান থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা।
☞ ধ্যান বা মাইন্ডফুলনেস চর্চা।
☞ নেতিবাচক চিন্তা চিহ্নিত করে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া গড়ে তোলা।
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স কোনো বইয়ের সূত্র নয়, এ এক মানসিক পরিপক্বতার যাত্রা। যিনি নিজের রাগের আগুনকে শান্তির আলোয় পরিণত করতে পারেন, তিনিই প্রকৃত জ্ঞানী। ক্যারিয়ারের সাফল্য হোক বা জীবনের সম্পর্ক যেখানে হৃদয় ও যুক্তি একসঙ্গে কাজ করে, সেখানেই জন্ম নেয় প্রকৃত প্রজ্ঞা। তাই আজকের প্রশ্ন একটাই—আমরা কি কেবল বুদ্ধিমান, নাকি আবেগীয়ভাবেও সচেতন!
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।
 
                                 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    