ছেলেদের আত্মসম্মান ভাঙছে নিঃশব্দে;সমাজের প্রত্যাশাই কি এই মানসিক বিপর্যয়ের মূল কারণ!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আত্মসম্মান বা Self-Esteem হলো নিজের প্রতি বিশ্বাস, নিজেকে মূল্যবান মনে করার অনুভূতি। এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য, সম্পর্ক, এবং ক্যারিয়ার উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। কিন্তু সমাজে প্রায়ই দেখা যায়, ছেলেদের মধ্যে Low Self-Esteem বা আত্মসম্মান বোধের ঘাটতি খুব সাধারণ। এটি প্রায়ই অচেতনভাবে তাদের আচরণ, সিদ্ধান্ত এবং জীবনধারায় গভীর প্রভাব ফেলে।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ছেলেদের আত্মসম্মান অনেকটাই প্রাথমিক শৈশব ও কৈশোরের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। শিশুকাল থেকেই বাবা-মা, শিক্ষক বা সহপাঠীর সাথে তুলনা করলে আত্মসম্মান ক্ষুণ্ন হয়।
Amygdala ও Prefrontal Cortex হলো মস্তিষ্কের অংশ যারা আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও নিজের মূল্যায়ন করে। সঠিক মানসিক উদ্দীপনা না পেলে Low Self-Esteem তৈরি হয়।স্ব-সমালোচনা, ব্যর্থতার ভয়, বা সামাজিক প্রত্যাখ্যানের অভিজ্ঞতা এই অনুভূতিকে বাড়িয়ে তোলে।
ছেলেদের Low Self-Esteem বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে:
⇨ সামাজিক লজ্জা ও লাজুক আচরণ করা।গ্রুপে কথা বলা বা নতুন বন্ধু বানানো এড়িয়ে চলা।
⇨ নিজেকে ছোট করা। নিজের দক্ষতা বা সাফল্যকে গুরুত্ব না দেওয়া।
⇨অতিরিক্ত আত্মসমালোচনা করা। নিজের ভুলকে অতি বড় মনে করা।
⇨ বিচ্ছিন্নতা বা একা থাকার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া। সামাজিক কার্যকলাপে অংশ না নেওয়া।
⇨ আগ্রাসন বা রাগের প্রকটতা বৃদ্ধি। অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাকে ঢাকতে রাগ বা আক্রমণাত্মক আচরণ।
প্রভাব-
Low Self-Esteem শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা নয়; এটি ছেলেদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে:
⇨ শিক্ষা ও ক্যারিয়ার: আত্মবিশ্বাস কম থাকায় নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হিমশিম খায়।
⇨সম্পর্ক: বন্ধুত্ব, প্রেম বা কাজের সম্পর্ক পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ে।
⇨ মানসিক স্বাস্থ্য: ডিপ্রেশন, উদ্বেগ এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
⇨স্বাস্থ্যচর্চা: নিজের যত্ন নেওয়া কম হয়, যেমন সঠিক খাওয়া, ব্যায়াম বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা এড়িয়ে চলা।
Low Self-Esteem এর মূল কারণ:
⇨ পরিবারিক পরিবেশ: অতিরিক্ত সমালোচনা, তুলনা বা বাবা-মার মধ্যে বিরোধ।
⇨ শিক্ষা ও সহপাঠীর চাপ: পরীক্ষার ফলাফল, প্রতিযোগিতা এবং বন্ধুর সাথে তুলনা।
⇨ মিডিয়ার প্রভাব: সামাজিক মিডিয়াতে অপরের সাফল্য দেখা এবং নিজেকে কম দেখা।
⇨ বৈশিষ্ট্যগত চরিত্রগত সমস্যা: কিছু ছেলে স্বভাবগতভাবে সংবেদনশীল বা introvert হয়, যা তাদের আত্মসম্মানকে প্রভাবিত করতে পারে।
সমাধান ও কৌশল:
Low Self-Esteem কমাতে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কিছু কৌশল রয়েছে:
১. ধনাত্মক আত্ম-চিন্তা (Positive Self-Talk)-
নিজের প্রতি সদয় কথা বলা। যেমন: "আমি চেষ্টা করেছি, আমি সক্ষম।"
২. ছোট সাফল্যকে উদযাপন- দৈনন্দিন ছোট লক্ষ্য অর্জনেও নিজেকে প্রেরণা দিন।
৩. সামাজিক দক্ষতা ও যোগাযোগ বৃদ্ধি- বন্ধু তৈরি করা, দলগত কাজ করা এবং সমাজে সক্রিয় থাকা।
৪. সেল্ফ-হেল্প ও থেরাপি- Cognitive Behavioral Therapy (CBT) আত্মসমালোচনার ধরন পরিবর্তনে সাহায্য করে।Group therapy বা mentorship প্রোগ্রাম আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
৫. শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা- নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্য।পর্যাপ্ত ঘুম এবং mindfulness বা meditation।
ছেলেদের Low Self-Esteem কেবল মানসিক সমস্যা নয়, এটি তাদের শিক্ষা, সম্পর্ক, স্বাস্থ্য ও ক্যারিয়ারকে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করে।সঠিক পরিচর্যা, পরিবার ও সমাজের সমর্থন, ধনাত্মক অভ্যাস এবং থেরাপি বা সেল্ফ-হেল্প কৌশল গ্রহণ করলে ছেলেরা নিজের প্রতি বিশ্বাস ফিরে পেতে পারে।আত্মসম্মান হলো জীবনের ভিত্তি। ছেলেরা যদি নিজেকে মূল্যবান মনে করতে শিখে, তবে তাদের জীবন, সম্পর্ক এবং ক্যারিয়ার সব ক্ষেত্রেই উন্নতি সম্ভব।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।