চমকপ্রদ গ্লো পেতে ক্রিম নয়,চন্দনই ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতার আসল জাদু!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
চন্দন গাছের ব্যবহার ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ৪,০০০ বছর পুরনো। প্রাচীন আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও সিদ্ধ চিকিৎসাশাস্ত্রে চন্দনকে বলা হয় "শরীর ও মন ঠান্ডা রাখার প্রাকৃতিক উপাদান"। তবে আধুনিক বিজ্ঞানও আজ এই দাবির সত্যতা প্রমাণ করছে।চন্দনের কাঠে পাওয়া যায় α-santalol এবং β-santalol নামের দুটি সক্রিয় যৌগ, যা মূলত প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক পদার্থ। এই দুটি যৌগই ত্বকের কোষে জমে থাকা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে।
আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা নির্ভর করে তিনটি প্রধান উপাদানের ওপর:
⇨ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি: চন্দনের ঠান্ডা প্রভাব ত্বকের মাইক্রো-সার্কুলেশন বাড়ায়, ফলে ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ ও পুষ্টি পৌঁছে যায় সহজে।
⇨ মেলানিন নিয়ন্ত্রণ: চন্দনের উপাদান মেলানোসাইট কোষে অতিরিক্ত মেলানিন উৎপাদন রোধ করে, যার ফলে ত্বকের রঙ সমান থাকে।
⇨ কোষ পুনর্গঠন: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণে মৃত কোষ ঝরে গিয়ে নতুন কোষ জন্ম নেয়, ত্বক হয় মসৃণ ও দীপ্তিময়।
গবেষণায় দেখা গেছে, স্যান্টালল যৌগ ত্বকের এপিডার্মাল স্তরে সাইটোকাইন (Cytokine) নামক প্রদাহ সৃষ্টিকারী প্রোটিনের কার্যকারিতা কমায়। এর ফলে ব্রণ, র্যাশ বা অ্যালার্জির প্রবণতা হ্রাস পায়।একই সঙ্গে এটি সান ড্যামেজ বা অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবেও সুরক্ষা দেয়। সূর্যালোকের কারণে কোষে যে "Reactive Oxygen Species (ROS)" তৈরি হয়, চন্দনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তা নিষ্ক্রিয় করে ত্বককে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে।
বিভিন্ন ত্বকের ধরন অনুযায়ী ব্যবহার:
সব ত্বকের ধরন এক নয়, তাই চন্দনের প্রভাবও কিছুটা ভিন্ন হয়
◑ তৈলাক্ত ত্বক: চন্দন পেস্টের সঙ্গে গোলাপজল বা টক দই মিশিয়ে লাগালে অতিরিক্ত তেল শোষিত হয়, ছিদ্র পরিষ্কার থাকে।
◑ শুষ্ক ত্বক: চন্দন পেস্টের সঙ্গে দুধ বা মধু মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
◑ সংবেদনশীল ত্বক: অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে লাগালে প্রদাহ কমে, ত্বকে ঠান্ডা অনুভূতি আসে।প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে এটি রাসায়নিক ক্রিমের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।
চন্দনের প্রভাব শুধু ত্বকে নয়, মনেও পড়ে।স্যান্টালল-এর সুগন্ধ মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিন নিঃসরণ বাড়িয়ে প্রশান্তি এনে দেয়। তাই প্রাচীন কালে ধ্যান বা যোগব্যায়ামের সময় চন্দন তেল ব্যবহারের প্রথা ছিল।ত্বক ও মানসিক প্রশান্তির এই দ্বৈত প্রভাবই চন্দনকে আজও অনন্য রাখে।
আজকের বিশ্বে "Natural Beauty Movement"-এর উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে কসমেটিক ইন্ডাস্ট্রি আবার ফিরছে প্রাকৃতিক উপাদানে। অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড তাদের সিরাম ও মাস্কে "Sandalwood Extract" যোগ করছে কারণ এটি রাসায়নিক ব্লিচ ছাড়াই ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, সিনথেটিক ক্রিমে থাকা hydroquinone বা paraben-এর পরিবর্তে চন্দন নির্যাস ব্যবহার করলে ত্বকের কোষের ক্ষতি না করেই উজ্জ্বলতা অর্জন সম্ভব।
ব্যবহারিক পদ্ধতি -
১. চন্দন-মধু ফেস প্যাক: এক চামচ চন্দন গুঁড়োর সঙ্গে আধা চামচ মধু মিশিয়ে লাগান। এটি ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
২. চন্দন-দুধ প্যাক: শুষ্ক ত্বকের জন্য দুধের সঙ্গে চন্দন পেস্ট মিশিয়ে লাগান। এটি কোষে প্রোটিন সরবরাহ করে।
৩. চন্দন-লেবু প্যাক: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এটি ব্ল্যাকহেড দূর করে।
এই প্যাকগুলো সপ্তাহে দুই–তিনবার ব্যবহার করলেই দৃশ্যমান পরিবর্তন আসে।
সতর্কতা:
বিশুদ্ধ চন্দন গুঁড়ো বা কাঠ ব্যবহার করাই ভালো, কারণ বাজারে অনেক সময় সিনথেটিক চন্দন পাউডার বিক্রি হয়।প্রথমবার ব্যবহারের আগে ত্বকের ছোট অংশে পরীক্ষা করে নিন। চোখের চারপাশে সরাসরি লাগাবেন না।
চন্দন কেবল প্রসাধনী নয়; এটি এক জীবন্ত বৈজ্ঞানিক উপাদান, যা প্রকৃতির নিরাময় ক্ষমতাকে ত্বকের প্রতিটি স্তরে পৌঁছে দেয়। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শক্তি, প্রদাহনাশক প্রভাব ও মানসিক প্রশান্তি, সব মিলিয়ে এটি এক অনন্য 'Natural Skin Therapy'।প্রকৃতি যখন নিজেই হয়ে ওঠে ত্বকের চিকিৎসক, তখন চন্দনের ছোঁয়া শুধু উজ্জ্বলতা নয়, এনে দেয় এক প্রশান্ত দীপ্তি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।