মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার সহজ, প্রাকৃতিক উপায়;বাগানে লাগান এই বিশেষ গাছগুলো!

মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার সহজ, প্রাকৃতিক উপায়;বাগানে লাগান এই বিশেষ গাছগুলো!
ছবির ক্যাপশান, মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার সহজ, প্রাকৃতিক উপায়;বাগানে লাগান এই বিশেষ গাছগুলো!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গরম, আর্দ্র আবহাওয়া আর বাগানের আশেপাশে পানি জমে থাকা—এই তিনেই মশার বংশবৃদ্ধির আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু বাইরে বসে সময় কাটানো বা গাছের যত্ন নেওয়া মশার উপদ্রবে প্রায়ই কষ্টকর হয়ে ওঠে। বাজারের কয়েল বা স্প্রে সাময়িক আর রাসায়নিকভিত্তিক সমাধান দেয়, কিন্তু প্রকৃতির মধ্যেই আছে এমন কিছু গাছ, যেগুলোর সুবাস ও তেলজাতীয় যৌগ মশাকে স্বাভাবিকভাবেই দূরে রাখে। বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে এই গাছগুলোর পাতায় বা ফুলে থাকে লিমোনিন, সিট্রোনেলাল, ইউক্যালিপটল ও জেরানিওল, যা মশার ঘ্রাণগ্রাহক কোষকে বিভ্রান্ত করে, ফলে তারা মানুষের গন্ধ শনাক্ত করতে পারে না।

যে গাছগুলো কার্যকর মশা প্রতিরোধক:

১. সিট্রোনেলা (Citronella Grass): সবচেয়ে পরিচিত প্রাকৃতিক মশা প্রতিরোধক গাছ। এর তেল থেকে তৈরি হয় অনেক মশা-নাশক মোমবাতি ও বডি স্প্রে।

ব্যবহার টিপস: বাগানের চারপাশে সারি করে লাগান। পাতায় হালকা ভাঁজ দিলে সুবাস ছড়িয়ে মশা দূরে রাখে।

২. লেমনগ্রাস (Lemongrass): লেমনগ্রাসে থাকে সিট্রাল ও লিমোনিন, যা মশার ঘ্রাণ সেন্সরকে বাধা দেয়।

ব্যবহার টিপস: চায়ের পাতার মতো পাতাগুলো কেটে শুকিয়ে বাগানের কোণে রাখলে মশা আসে না।

৩. তুলসি (Basil): তুলসির তীব্র ঘ্রাণ মশা ও পোকামাকড় দুটোই দূরে রাখে।

ব্যবহার টিপস: জানালার পাশে বা দরজার কাছে লাগান,মশা প্রবেশ কমে যাবে।

৪. ল্যাভেন্ডার (Lavender): এর ফুলের সুবাস শুধু মন শান্ত করে না, মশা ও মাছি দুটোকেই দূরে রাখে।

ব্যবহার টিপস: বাগানের কোণ বা বসার জায়গার পাশে রাখুন, সন্ধ্যায় সুবাসে মশা উধাও হয়ে যাবে।

৫. পুদিনা (Mint):পুদিনার পাতায় থাকা মেনথল যৌগ মশার সংবেদনশীল অ্যান্টেনা নিস্ক্রিয় করে।
ব্যবহার টিপস: পাতাগুলো হালকা করে ঘষে বাগানের চেয়ারের নিচে বা টেবিলের চারপাশে রাখুন।

৬. গাঁদা ফুল (Marigold): গাঁদা ফুলে থাকা Pyrethrum প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে কাজ করে। ব্যবহার টিপস: বাগানের সীমান্তে সারি করে লাগালে মশা, মাছি ও কিছু ক্ষতিকর পোকাও দূরে থাকে।

কীভাবে বাগানে ব্যবহার করবেন?

১. বৃত্তাকার বিন্যাসে গাছ লাগানো: বসার জায়গা বা পাথওয়েকে ঘিরে সিট্রোনেলা, গাঁদা ও তুলসি রাখলে মশা প্রবেশ করতে পারে না।

২. গন্ধের স্তর তৈরি: মশা সাধারণত কম উচ্চতার ঘ্রাণে প্রতিক্রিয়া দেয়। তাই নিচে পুদিনা ও তুলসি, মাঝখানে গাঁদা বা লেমনগ্রাস, আর পেছনে ল্যাভেন্ডার লাগান। এতে গন্ধের স্তর তৈরি হবে যা মশাকে বিভ্রান্ত করবে।

৩. পাতা চেপে ঘ্রাণ ছড়ানো: সন্ধ্যার আগে পাতাগুলো হালকা ভাঁজ করে নিলে সুগন্ধ তীব্র হয়—এটি মশা প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক সাহায্য করে।

৪. পানির সঠিক নিষ্কাশন: মশার ডিম ফোটে স্থির জলে। তাই টব বা পাত্রের নিচে পানি জমতে দেবেন না।

৫. নাইট লাইটের পাশে গাছ রাখুন: মশা আলো ও তাপের দিকে আসে, তাই আলোযুক্ত জায়গায় এই গাছগুলো রাখলে প্রভাব আরও বাড়ে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সিট্রোনেলা বা লেমনগ্রাসের তেল বাষ্প আকারে ছড়ালে ৭০–৮০% মশা দূরে থাকে অন্তত ২ ঘণ্টা পর্যন্ত। অন্যদিকে তুলসি ও ল্যাভেন্ডারের নির্যাস ৪০ মিনিটেরও বেশি কার্যকর সুরক্ষা দেয়।
তবে এই প্রভাব বজায় রাখতে গাছগুলোর যত্ন নেওয়া জরুরি, কারণ সুবাসের তীব্রতা নির্ভর করে পাতার তেল নিঃসরণের ওপর, যা রোদ ও আর্দ্রতায় কমে যেতে পারে।

 মশা প্রতিরোধে টেকসই বাগান ডিজাইন- 

⇨  বাগানের চারপাশে গাঁদা ও সিট্রোনেলা দিয়ে "গ্রীন ফেন্স" বানান।

⇨ বসার জায়গার চারপাশে ল্যাভেন্ডার ও তুলসি রাখুন। প্রকৃতি ও ঘ্রাণে ভরা পরিবেশে মশা টিকবে না।

⇨ রাতে  সিট্রোনেলা তেল মিশিয়ে মোমবাতি জ্বালালে বাগানের পরিবেশ হবে মশামুক্ত ও আরামদায়ক।

রাসায়নিক প্রতিরোধক হয়তো দ্রুত কাজ করে, কিন্তু ত্বক ও শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষতি করতে পারে। এর পরিবর্তে প্রকৃতির এই সহজ সমাধানগুলো দীর্ঘস্থায়ী, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব।মশা দূর করার লড়াইটা যদি প্রকৃতির ঘ্রাণেই জেতা যায়, তবে কেনই বা রাসায়নিকের আশ্রয় নেব! প্রতিদিনের আউটডোর জীবন হোক আরও স্বস্তিদায়ক-গাছের সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ