দেশে ফিরতে চান পলাতক আসামী শেখ হাসিনা, দিলেন যেসকল শর্ত

দেশে ফিরতে চান পলাতক আসামী শেখ হাসিনা, দিলেন যেসকল শর্ত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তবে তিনি তার বিরুদ্ধে চলমান মামলাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন’ আখ্যা দিয়ে একাধিক শর্ত উপস্থাপন করেছেন। দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট-কে দেয়া এক বিরল সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) একটি ‘ছদ্ম আদালত’, যা তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রবিরোধী অভিযোগে বিচারাধীন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন, যার ফলে গত বছরের সহিংস বিক্ষোভে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন। প্রসিকিউটররা তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করেছে। তবে হাসিনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমি জাতি হিসেবে হারানো প্রতিটি সন্তান, ভাই-বোন ও বন্ধুর জন্য শোক করি, কিন্তু কাউকে হত্যার নির্দেশ আমি দিইনি।”

তিনি অভিযোগ করেন, “আইসিটি একটি ছদ্ম আদালত, যা অনির্বাচিত সরকারের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। এই সরকারের সদস্যরা আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং তারা আমাকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করতে বদ্ধপরিকর।” হাসিনা আরও বলেন, “আমার পরিবারের ইতিহাস রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে পূর্ণ। তাই আমি জানি এই রায়ও সেই ধারাবাহিকতার অংশ।”

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতের নির্বাসনে আছেন। তিনি জানান, দেশে ফেরার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও ন্যায়সঙ্গত বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করলেই তিনি ফিরে আসতে রাজি। তবে তিনি বলেছেন, “আমাকে যদি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তাতেও আমি বিস্মিত বা ভীত হব না।”

গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্র ধরে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই আন্দোলন পরিণত হয় সরকারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে, যেখানে লাখো মানুষ অংশ নেন। নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর দমননীতি বিশ্বজুড়ে নিন্দা কুড়ায়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আঞ্চলিক উপপরিচালক বাবুরাম পন্ত বলেন, “এই হত্যাযজ্ঞ বাংলাদেশের সরকারের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি চরম অসহিষ্ণুতার পরিচায়ক।” জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভল্কার টার্ক একে “অগ্রহণযোগ্য ও ভয়াবহ” বলে অভিহিত করেছিলেন।

হাসিনা ইন্ডিপেন্ডেন্টের সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, ওই সময়কার সহিংসতা ছিল “একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ”, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর মাঠপর্যায়ে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছিল। তিনি বলেন, “আমি নেতৃত্বের দায়ভার স্বীকার করি, কিন্তু সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ আমি দিইনি।” হাসিনা আরও জানান, তার সরকার প্রথম দফায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করেছিল, কিন্তু পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার তা বন্ধ করে দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষের (প্রসিকিউশন) প্রধান তাজুল ইসলাম হাসিনাকে “মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল পরিকল্পনাকারী” হিসেবে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে হাসিনা বলেন, “আদালতের সাক্ষ্য ও প্রমাণ বিকৃত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। মাঠপর্যায়ের সিদ্ধান্তগুলো নিরাপত্তা কর্মকর্তারা নিয়েছিলেন, যারা প্রচলিত নির্দেশনা অনুসরণ করছিলেন।”

নিজের দেশত্যাগ সম্পর্কে হাসিনা বলেন, “৫ আগস্ট আমি দেশ ছেড়েছিলাম একান্ত প্রয়োজনের কারণে। থাকলে শুধু আমার জীবন নয়, আশেপাশের মানুষের জীবনও ঝুঁকিতে পড়ত।” তিনি আরও বলেন, “আমার সরকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করেছিল, কিন্তু বর্তমান অনির্বাচিত সরকার আমার দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।”

নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তবে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে না। হাসিনা এ বিষয়ে বলেন, “শুধুমাত্র অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনই দেশকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করতে পারে।”

নিজের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি চাই ইতিহাস আমাকে সেই নেতা হিসেবে স্মরণ করুক যিনি ১৯৯০-এর দশকে সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলেন এবং কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছিলেন।” তবে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, তার অর্জনগুলো এখন ‘উল্টে যাওয়ার ঝুঁকিতে’ রয়েছে।

বর্তমানে আইসিটি তার অনুপস্থিতিতে রায় প্রস্তুত করছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রায় ঘোষণার আগেই শেখ হাসিনার দেশে ফেরার সম্ভাবনা নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার ওপর। তবে তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্টের সাক্ষাৎকারের শেষদিকে বলেন, “কোনো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতাকে দেশের সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব পালনের কারণে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত নয়।”

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ