নিজের সাফল্যকে মানতে পারছেন না ! এটাই হতে পারে ইমপোস্টার সিনড্রোম

নিজের সাফল্যকে মানতে পারছেন না ! এটাই হতে পারে ইমপোস্টার সিনড্রোম
ছবির ক্যাপশান, নিজের সাফল্যকে মানতে পারছেন না ! এটাই হতে পারে ইমপোস্টার সিনড্রোম
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আপনি কি কখনও নিজের অর্জন, সাফল্য বা প্রশংসা পেয়ে মনে করেছেন "আমি আসলে এর যোগ্য নই", "ভাগ্য ভালো ছিল, তাই হয়ে গেছে"?যদি এমন অনুভূতি পরিচিত লাগে, তবে সেটিই 'ইমপোস্টার সিনড্রোম' (Impostor Syndrome)। এমন এক মানসিক অবস্থা, যেখানে মানুষ নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা বা অর্জনকে ছোট করে দেখে, আর ভিতরে ভিতরে ভয় পায় "সবাই বুঝে ফেলবে আমি আসলে ততটা ভালো নই"।

মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, ইমপোস্টার সিনড্রোম হলো অন্তর্দ্বন্দ্বমূলক আত্ম-সন্দেহের এক রূপ, যেখানে ব্যক্তি নিজের সাফল্যকে নিজের পরিশ্রমের ফল হিসেবে নয়, বরং ভাগ্য, সাহায্য, বা কাকতালীয় কারণে হয়েছে বলে মনে করে। ১৯৭৮ সালে দুই মনোবিজ্ঞানী Pauline Clance ও Suzanne Imes প্রথম এই সিনড্রোমের ধারণা দেন। তাদের গবেষণায় দেখা যায়, বিশেষত উচ্চ সফল নারী পেশাজীবী, গবেষক, শিক্ষক, শিল্পী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই মানসিক অবস্থা বেশি দেখা যায়। তবে বর্তমানে এটি পুরুষ ও নারীর উভয়ের মধ্যেই সমানভাবে পাওয়া যায়।

মস্তিষ্কে যা ঘটে-

ইমপোস্টার সিনড্রোম কোনো মানসিক রোগ নয়, বরং স্ব-আত্মসম্মান (Self-Esteem) ও কগনিটিভ বায়াস (Cognitive Bias)-এর বিকৃত প্রতিফলন।
মস্তিষ্কের amygdala (ভয় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র) এবং prefrontal cortex (বিবেচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ কেন্দ্র) এর মধ্যে ভারসাম্যের ঘাটতি হলে আত্মবিশ্বাস কমে যায়।ফলে ব্যক্তি প্রতিনিয়ত নিজের কাজ, প্রতিভা ও অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে।এভাবে দীর্ঘদিন ধরে নেতিবাচক স্ব-বিশ্লেষণ (Negative Self-Evaluation) চলতে থাকলে মানসিক ক্লান্তি, উদ্বেগ (Anxiety) ও হতাশা (Depression) তৈরি হয়।

কেন হয় এই সিনড্রোম?

গবেষণায় দেখা গেছে, ইমপোস্টার সিনড্রোম তৈরি হওয়ার পেছনে কয়েকটি মানসিক ও সামাজিক কারণ কাজ করে—

⇨ পারফেকশনিজম (Perfectionism): "সবকিছু নিখুঁত করতে হবে"-এই মানসিক চাপ ব্যর্থতার ভয় বাড়ায়।

⇨ পরিবার বা সমাজের প্রত্যাশা: ছোটবেলা থেকে "সবসময় সেরা হতে হবে" এমন চাপ থাকলে আত্মমর্যাদা বাইরের স্বীকৃতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

⇨ সামাজিক তুলনা (Social Comparison): সোশ্যাল মিডিয়া বা কর্মক্ষেত্রে অন্যদের সাফল্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করা।

⇨ নতুন পরিবেশ বা পদোন্নতি: নতুন দায়িত্ব বা কাজ শুরু করলে অনেকেই ভাবে, "আমি হয়তো এর উপযুক্ত না।"

⇨ শিক্ষাগত বা সাংস্কৃতিক চাপ: বিশেষ করে যেখানে ভুল করা লজ্জার বিষয় মনে করা হয়, সেখানে আত্ম-সন্দেহ দ্রুত বেড়ে ওঠে।

লক্ষণ:

ইমপোস্টার সিনড্রোমের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো

নিজের কাজের সাফল্যকে ছোট করে দেখা-

⇨  প্রশংসা পেলে অস্বস্তি বা অপরাধবোধ হওয়া।

"আরও পরিশ্রম না করলে আমি ধরা পড়ে যাব" এমন ভয় থাকা।

⇨ ব্যর্থতার ভয় বা নতুন সুযোগ নিতে ভয় পাওয়া।

⇨ কাজের ছোট ভুলকে নিজের অযোগ্যতার প্রমাণ মনে করা।

⇨ মনে হওয়া, অন্যরা আমাকে অতিমূল্যায়ন করছে।

প্রভাব:

দীর্ঘ সময় ধরে এই মানসিক অবস্থা থাকলে এর প্রভাব পড়ে

⇨ আত্মবিশ্বাস ও কর্মক্ষমতা কমে যায়।

⇨ উদ্বেগ, নিদ্রাহীনতা ও মানসিক ক্লান্তি বাড়ে।

⇨ সৃজনশীলতা কমে যায়, কারণ ব্যক্তি ঝুঁকি নিতে ভয় পায়।

⇨ দলীয় কাজে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে, যা পেশাগত অগ্রগতিতে বাধা দেয়।

ইমপোস্টার সিনড্রোম কাটিয়ে ওঠার উপায়-

⇨ নিজের চিন্তা ধরুন: "আমি পারব না" এই ভাবনাটিকে প্রশ্ন করুন। বাস্তবে কতবার সফল হয়েছেন তা লিখে রাখুন।

⇨ ব্যর্থতাকে স্বাভাবিকভাবে নিন: ভুল করাই শেখার অংশ। এটি যোগ্যতার অভাব নয়, উন্নতির প্রক্রিয়া।

⇨ অন্যের প্রশংসা গ্রহণ করুন: "ভাগ্য ভালো ছিল" না বলে, বলুন "ধন্যবাদ, আমি পরিশ্রম করেছি।"

⇨ সহায়তা নিন: বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন।

⇨ নিজেকে তুলনা বন্ধ করুন: সবার পথ আলাদা নিজের উন্নতির সঙ্গে নিজেকেই তুলনা করুন।

⇨ স্ব-করুণা (Self-Compassion): নিজেকে দোষ না দিয়ে বুঝুন, ভুল করা মানুষ হওয়ার অংশ।

ইমপোস্টার সিনড্রোম কোনো দুর্বলতা নয়, এটি একটি মানসিক প্রতিক্রিয়া, যা অতিরিক্ত সচেতন, সংবেদনশীল ও পরিশ্রমী মানুষদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়।সচেতনতা, আত্ম-গ্রহণযোগ্যতা এবং বাস্তবতার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুললে এই সিনড্রোম থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। মনে রাখবেন, আপনার সাফল্য আপনারই অর্জন, সেটি কেবল সৌভাগ্যের নয়, বরং আপনার পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও সামর্থ্যের প্রতিফলন।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ