নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন, শক্তিশালী হচ্ছে মানবাধিকার কমিশন
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে নতুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটির অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সভা শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী মানবাধিকার কমিশন কার্যত দন্তহীন একটি প্রতিষ্ঠান ছিল, যেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ত্রুটি, সীমিত এখতিয়ার এবং নেতৃত্বের দুর্বলতা প্রতিষ্ঠানটিকে অকার্যকর করে তুলেছিল। নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে সেই সীমাবদ্ধতা দূর করে কমিশনকে সত্যিকারের ক্ষমতাসম্পন্ন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নতুন কাঠামো অনুযায়ী কমিশনে একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সার্বক্ষণিক সদস্য থাকবেন। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা নিশ্চিত করতে আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন আহ্বান ও প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের পর বাছাই কমিটি সুপারিশ করবে। আইন উপদেষ্টা জানান, এ পদ্ধতির মাধ্যমে অভিজ্ঞ, যোগ্য এবং মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় ব্যক্তিরাই কমিশনে স্থান পাবেন।
ড. আসিফ নজরুল আরও জানান, নতুন অধ্যাদেশে কমিশনের এখতিয়ার বহুলাংশে বিস্তৃত করা হয়েছে। এখন থেকে শৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাতেও কমিশন তদন্ত করতে পারবে। পূর্ববর্তী আইনে এ বিষয়ে গুরুতর সীমাবদ্ধতা থাকলেও এবার সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করা হয়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার ছাড়াও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি ও প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত অধিকারগুলোও কমিশনের এখতিয়ারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা আইনসহ মানবাধিকার রক্ষাসংশ্লিষ্ট সব আইনের বাস্তবায়নের দায়িত্বও কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। এর ফলে আলাদা করে কোনো ‘গুম কমিশন’ গঠনের প্রয়োজন হবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে কমিশনের আদেশ প্রতিপালনকে আইনি বাধ্যবাধকতার আওতায় আনা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, “এখন থেকে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ উপেক্ষা করা যাবে না; এর আইনি বাধ্যবাধকতা স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়েছে।”
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। আইন উপদেষ্টার ভাষ্যমতে, নতুন অধ্যাদেশটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি আরও দৃঢ় ভিত্তি পাবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।