চামড়ার ঘামাচি: শরীরের সতর্ক সংকেত, নাকি ত্বকের প্রতিরোধ ব্যবস্থা!

চামড়ার ঘামাচি: শরীরের সতর্ক সংকেত, নাকি ত্বকের প্রতিরোধ ব্যবস্থা!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গরমের দিনে গায়ে ছোট ছোট ফুসকুড়ি, লালচে দানা, কিংবা অস্বস্তিকর চুলকানি, এই উপসর্গগুলোই সাধারণভাবে আমরা বলি "ঘামাচি"। কিন্তু জানেন কি, এই অস্বস্তিকর বিষয়টি আসলে শরীরের এক প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া? ঘামাচি বা Heat Rash (বৈজ্ঞানিক নাম Miliaria) হচ্ছে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার এক ফল, যা আমাদের ত্বক ও ঘামগ্রন্থির সূক্ষ্ম ব্যবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।

আমাদের ত্বকের নিচে আছে লাখো sweat gland (ঘামগ্রন্থি), যেগুলো শরীর ঠান্ডা রাখতে ক্রমাগত কাজ করে। গরমে বা শারীরিক পরিশ্রমে ঘাম তৈরি হলে তা রন্ধ্র (pores) দিয়ে বেরিয়ে আসে। কিন্তু যখন গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে এই রন্ধ্রগুলো বাধাপ্রাপ্ত বা বন্ধ হয়ে যায়, তখন ঘাম বের হতে না পেরে ত্বকের ভেতরেই আটকে যায়। এর ফলে সৃষ্ট হয় ক্ষুদ্র প্রদাহ, লালচে দানা, আর চুলকানিময় অস্বস্তি, যেটাকে আমরা বলি ঘামাচি। গবেষণা বলছে, ঘামাচির প্রধান কারণ হলো ঘামগ্রন্থির বাধা ও অতিরিক্ত ঘাম, তবে এর সঙ্গে যুক্ত আরও কিছু কারণ হলো:

⇨ অতিরিক্ত আঁটসাঁট পোশাক পরা

⇨ ধুলাবালি ও ত্বকের মৃত কোষ জমে থাকা

⇨ দীর্ঘ সময় গরম, আর্দ্র জায়গায় থাকা

⇨ অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজার বা তৈলাক্ত ক্রিম ব্যবহার

 

বিজ্ঞানীরা ঘামাচিকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করেন-

☞ Miliaria Crystallina: সবচেয়ে হালকা ধরন। ছোট, স্বচ্ছ ফুসকুড়ি হয়, ব্যথা বা চুলকানি কম।

☞ Miliaria Rubra: মাঝারি মাত্রার, যেখানে লালচে ফুসকুড়ি ও জ্বালাভাব বেশি দেখা যায়।

☞ Miliaria Profunda: তীব্র তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় থাকলে হয়। গভীর ত্বকস্তরে ঘাম জমে গিয়ে ঘাম উৎপাদনই কমিয়ে দিতে পারে, ফলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে এবং ক্লান্তি আসে।
 

ঘামাচি শরীরের এক প্রতিরোধমূলক সংকেত। ঘামাচি কেবল ত্বকের রোগ নয়, এটি শরীরের একটি থার্মো-রেগুলেটরি সিগন্যাল (Thermoregulatory Signal)। অর্থাৎ, শরীর জানাতে চায় যে তার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছে। ঘাম বের হতে না পারলে, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে Heat Exhaustion বা এমনকি Heat Stroke পর্যন্ত হতে পারে। তাই ঘামাচি হলো শরীরের সতর্কবার্তা, যেন আমরা বিশ্রাম নিই, ঠান্ডা জায়গায় যাই, এবং শরীরের তাপ কমাই।
 

চিকিৎসা নয়, বরং প্রতিরোধই সেরা উপায়-

ঘামাচির চিকিৎসা সাধারণত জটিল নয়, তবে উপেক্ষা করলে সংক্রমণ বা প্রদাহ বাড়তে পারে। প্রতিরোধমূলক কিছু বৈজ্ঞানিক উপায় হলো—

⇨ ঢিলেঢালা, তুলার কাপড় পরা

⇨ অতিরিক্ত গরম বা রোদে বেশি সময় না থাকা

⇨ ত্বক পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখা

⇨ হালকা ঠান্ডা পানিতে গোসল করা

⇨ ত্বকে অ্যান্টি-পার্সপিরান্ট জাতীয় পণ্য না লাগানো
⇨ ঘরে থাকলে ফ্যান বা এয়ার সার্কুলেশন ব্যবহার করা

⇨ ঘামাচির সময় শরীরের পানির ভারসাম্য (Hydration) বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাপমাত্রা বাড়লে শরীর দ্রুত পানি হারায়।
 

ঘরোয়া সমাধান-

কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ঘামাচির জ্বালাভাব ও প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে-

⇨ অ্যালোভেরা জেল: ত্বক ঠান্ডা রাখে ও প্রদাহ কমায়।

⇨ স্যান্ডালউড পাউডার: অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে।

⇨ ওটমিল বা বেকিং সোডা বাথ: ত্বকের জ্বালা প্রশমিত করে।
 

তবে, এসব ব্যবহার করার আগে নিশ্চিত হতে হবে যে উপাদানগুলোতে কোনো রাসায়নিক সংযোজন নেই এবং ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি করছে না।

ঘামাচি মূলত ত্বকের মাধ্যমে শরীরের এক "সতর্ক ঘন্টা",যেটি বলে দেয়- শরীর অতিরিক্ত গরমে বিপদে পড়ছে। তাই এটি শুধু একটি অস্বস্তি নয়; এটি শরীরের এক বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা আমাদের তাপমাত্রা, ত্বকের স্বাস্থ্য ও পানির ভারসাম্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ