ত্বক ও চুলের যত্নে দামি প্রসাধন নয়,প্রয়োজন শুধু স্ট্রেস-ডিটক্স!

ত্বক ও চুলের যত্নে দামি প্রসাধন নয়,প্রয়োজন শুধু স্ট্রেস-ডিটক্স!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আয়নায় নিজের ক্লান্ত মুখ, নিস্তেজ ত্বক বা ঝরে পড়া চুল দেখে কি কখনও ভেবেছেন,এর পেছনে আপনার মানসিক চাপই কি দায়ী নয়! আজকের ব্যস্ত জীবনে স্ট্রেস আমাদের এমন এক নীরব সঙ্গী, যা শুধু মনের ভার বাড়ায় না; শরীর, ত্বক, এমনকি চুলের প্রতিটি কোষেও রেখে যায় তার ছাপ।অন্যদিকে, যখন আমরা মানসিকভাবে প্রশান্ত থাকি, তখন আমাদের শরীরের ভেতরের হরমোনগুলোর ভারসাম্য ত্বক ও চুলে আনে নতুন উজ্জ্বলতা।

স্ট্রেস ত্বক ও চুলে কীভাবে প্রভাব ফেলে?

মানবদেহে স্ট্রেস হলেই মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত হয় কর্টিসল (Cortisol) নামক হরমোন।এই হরমোন স্বাভাবিক পরিমাণে উপকারী হলেও দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চমাত্রায় থাকলে এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার মধ্যে সবচেয়ে আগে দেখা দেয় ত্বক ও চুলে নেতিবাচক প্রভাব।

কর্টিসল হরমোন কোলাজেন উৎপাদন কমিয়ে দেয়, ফলে ত্বক ঢিলে ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। স্ট্রেসে ত্বকের রক্তসঞ্চালন কমে যায়, ফলে পুষ্টি ও অক্সিজেন পৌঁছায় না ঠিকভাবে।এর ফলে অকাল বলিরেখা, ব্রণ, র‍্যাশ, ফুসকুড়ি, এমনকি ত্বকের শুষ্কতা।
 

অতিরিক্ত মানসিক চাপ হেয়ার ফলিকল (Hair Follicle) বা চুলের গোড়া দুর্বল করে দেয়।দেখা যায় চুল ঝরে যাওয়া, আগেভাগেই পাকা শুরু হওয়া, বা চুলের ঘনত্ব কমে যাওয়া। অনেক সময় টেলোজেন এফ্লুভিয়াম (Telogen Effluvium) নামের অবস্থা দেখা দেয়, যেখানে হঠাৎ অনেক চুল ঝরে পড়ে।
 

স্ট্রেস কমলে যেভাবে ত্বক ও চুলে আসে উন্নতি-

যখন স্ট্রেস কমে, তখন শরীর "রিপেয়ার মোডে" চলে যায়। এই সময় মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত হয় এন্ডোরফিন, সেরোটোনিন ও অক্সিটোসিন—এই তিন হরমোন মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়, আর একই সঙ্গে শরীরে শুরু হয় কোষ পুনর্গঠনের কাজ।
 

ত্বকের ক্ষেত্রে সুফল-

রক্তসঞ্চালন বেড়ে যায়, ফলে কোষে পুষ্টি ও অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়।কোলাজেন ও ইলাস্টিন উৎপাদন বাড়ে, যা ত্বককে টানটান ও উজ্জ্বল রাখে।ত্বকের তৈলাক্ততা স্বাভাবিক থাকে, ফলে ব্রণ বা একনে কমে। রিঙ্কেল বা অকাল বয়সের ছাপ পড়তে সময় নেয় বেশি।
 

চুলের ক্ষেত্রে সুফল-

চুলের গোড়া বা ফলিকল পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়, ফলে চুল পড়া কমে।মেলানিন উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা চুলের প্রাকৃতিক রঙ বজায় রাখতে সাহায্য করে। চুল হয় আরও নরম, মজবুত ও ঘন।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা মাইন্ডফুলনেস চর্চা করেন, তাদের ত্বকের আর্দ্রতা ও ইলাস্টিসিটি অন্যদের তুলনায় বেশি। একইভাবে, ঘুমের মান ভালো হলে শরীরে কর্টিসল কমে, যা ত্বককে স্বাভাবিকভাবে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, "ত্বক ও মস্তিষ্কের সংযোগ একটি দ্বিমুখী রাস্তা,মন ভালো থাকলে ত্বকও ভালো থাকে।"

 

যেভাবে কমাবেন স্ট্রেস-

◑ পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম দিন।

◑ গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাস: দিনে কয়েকবার ৫ মিনিটের জন্য ধীরে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন।

◑ ধ্যান ও যোগব্যায়াম: মস্তিষ্ককে শান্ত করে, কর্টিসল হরমোন নিয়ন্ত্রণে আনে।

◑ নিয়মিত ব্যায়াম: শরীরে এন্ডোরফিন বাড়ায়, যা প্রাকৃতিক "মুড বুস্টার"।

◑ সুষম খাদ্যাভ্যাস: ওমেগা-৩, ভিটামিন সি, ই, ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার খান-যা ত্বক ও চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করে।

◑ ডিজিটাল ডিটক্স: নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফোন বা সামাজিক মাধ্যম থেকে বিরতি নিন।

 

ত্বক ও চুলের যত্ন শুধুই বাহ্যিক নয়,এর মূল শিকড় লুকিয়ে আছে মানসিক স্বাস্থ্যে। আর স্ট্রেস কমানো মানে শুধু মানসিক শান্তি নয়, বরং শরীরের প্রতিটি কোষে নতুন প্রাণ সঞ্চার করা।মন যখন প্রশান্ত, তখনই ত্বক ও চুল তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরে পায়।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ