হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রবেশে বিধিনিষেধ জারি
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের নতুন নিরাপত্তা নির্দেশিকায় সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে। নতুন এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, এখন থেকে সাংবাদিকদের পূর্বানুমতি ছাড়া প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এবং তাঁর শীর্ষ সহযোগীদের অফিসসহ ওয়েস্ট উইংয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কক্ষে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে থাকা সংগঠনগুলো এতে তীব্র সমালোচনা জানিয়েছে।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) জারি করা নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, 'আপার প্রেস' নামে পরিচিত রুম ১৪০-এ প্রবেশ করতে হলে সাংবাদিকদের আগে থেকে সময় নির্ধারণ করতে হবে। এনএসসি ও হোয়াইট হাউস যোগাযোগ টিমের হাতে থাকা সংবেদনশীল তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই এই কড়াকড়ির প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর ফলে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি অফিসের আশপাশের কিছু এরিয়া কার্যত বন্ধ হয়ে গেল যেখানে সাংবাদিকরা যেকোনো সময় লেভিট, তাঁর ডেপুটি স্টিভেন চুয়েংসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তাৎক্ষণিক তথ্য যাচাই বা মন্তব্য নিতে পারতেন।
তবে, হোয়াইট হাউস প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দেখান। ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি স্টিভেন চুয়েং 'এক্স' (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে জানান, কিছু সাংবাদিক অনুমতি ছাড়া অফিসের ভিডিও ও অডিও ধারণ করেছে, এমনকি সংবেদনশীল তথ্যের ছবি তুলেছে।
এছাড়াও সাংবাদিকরা কেউ কেউ সীমাবদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করে, বন্ধ দরজার মিটিংয়ে আড়ি পাতার চেষ্টা করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি আরো বলেন, কিছু সাংবাদিক মন্ত্রিসভার সদস্যদের দপ্তরের বাইরে অপেক্ষা করে "অ্যামবুশ প্রশ্ন" করে থাকে।
এই বিধিনিষেধকে সংবেদনশীল উপকরণ ও কর্মীদের সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য বলে উল্লেখ করে হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা।
এই ঘটনায় হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (WHCA) তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ওয়েইজিয়া জিয়াং বলেন, "হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিভাগের ঐতিহ্যগতভাবে উন্মুক্ত এলাকাগুলোতে সাংবাদিকদের প্রবেশ সীমিত করা স্বচ্ছতা ও সরকারের দায়বদ্ধতার জন্য বড় ধাক্কা।"
তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রেস সেক্রেটারির অফিসে প্রবেশাধিকার সরকারকে জবাবদিহির আওতায় রাখতে অপরিহার্য।
যদিও সাংবাদিকরা এখনও হোয়াইট হাউসের অন্য একটি নির্দিষ্ট কর্মস্থলে প্রবেশ করতে পারবেন, যেখানে নিম্নস্তরের যোগাযোগকর্মীরা কাজ করেন, তবুও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিক প্রবেশাধিকার রদ হওয়াকে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করেন ডব্লিউএইচসিএ।
অক্টোবরের শুরুতে শুরুতে পেন্টাগনের নতুন মিডিয়া নীতির পরপরই এই নির্দেশনা আসে। তবে রয়টার্স, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও ব্লুমবার্গসহ অন্তত ৩০টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সেই শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, এবং এটিকে তারা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি সরাসরি হুমকি বলে মন্তব্য করে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ক্ষুন্না এটাই প্রথম নয়। ১৯৯৩ সালে বিল ক্লিনটন প্রশাসন সাময়িকভাবে ওয়েস্ট উইংয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ সীমিত করেছিল, কিন্তু জনমতের চাপে দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের আগের মেয়াদে রয়টার্স ও এপির মতো বড় সংবাদ সংস্থাগুলোকে স্থায়ী প্রেস পুল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
সাংবাদিকতা স্বাধীনতা রক্ষাকারী সংগঠনগুলো হোয়াইট হাউসকে এই বিধিনিষিধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিক ও প্রশাসনের সম্পর্কের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং জনগণের জানার অধিকারকে সীমিত করবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।