মালিককে দেখলেই কেন লেজ দুলায় কুকুর!চমকপ্রদ কারণ উন্মোচন
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
প্রায় প্রত্যেক কুকুরপ্রেমীর কাছে এটি অজানা নয়-যে মুহূর্তে তারা বাড়ি ফেরেন, কুকুরগুলো আনন্দে লেজ নাড়তে থাকে। তবে কি কেবল এটি "আনন্দের প্রকাশ"! বিজ্ঞান বলছে, লেজ নাড়ার পেছনে অনেক বেশি জটিল মনোবিজ্ঞান এবং স্নায়ুবৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে।
লেজ নাড়া = আবেগের ভাষা
কুকুররা মানুষের মতো কথা বলতে পারে না, তাই তাদের প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম হলো শরীরের ভাষা।লেজের নড়াচড়া কুকুরের আবেগের সূচক।
লেজের দিক, গতিবিধি ও গতির তীব্রতা দ্বারা কুকুরের মনের অবস্থা বোঝা যায়। ডানদিকে লেজ নড়লে কুকুর আনন্দিত বা বন্ধুপ্রবণ।বাঁদিকে নড়লে তারা প্রায়শই সতর্ক বা দ্বিধান্বিত।উচ্চ গতিতে লেজ ঘোরানো মানে অতি উচ্ছ্বাস।এটি প্রমাণ করে যে, লেজ নাড়া কেবল আনন্দ প্রকাশ নয়,একটি জটিল সামাজিক সংকেত যা অন্যান্য কুকুর বা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার হয়।
কুকুর প্রজাতির মধ্যে বিশেষভাবে মানব-কেন্দ্রিক সৃষ্টিশীলতা দেখা যায়।অক্সিটোসিন হরমোন বা "ভালোবাসার হরমোন" কুকুর এবং মালিক উভয়ের মস্তিষ্কে লেভেল বৃদ্ধি পায় যখন তারা একে অপরকে দেখে।এই হরমোন উভয়ের মধ্যে আনন্দ, নিরাপত্তা এবং আবদ্ধতা অনুভূত করে।লেজ নাড়ার সময়, কুকুরের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসৃত হয়, যা আনন্দ এবং পুরস্কারের অনুভূতি দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কুকুরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে, তাদের কুকুর দ্রুত লেজ নাড়ার মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশ করতে শেখে।
লেজ নাড়া = সামাজিক চেতনা ও অভ্যস্তি
কুকুরদের মধ্যে সামাজিক চেতনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাড়ির সদস্যদের চেনা কুকুর দ্রুত প্রতিটি সঙ্গীর সঙ্গে ভিন্নভাবে আচরণ করতে শিখে। মালিককে দেখে লেজ নাড়া মানে,"আমি তোমাকে চিনতে পারছি, তুমি নিরাপদ, এবং আমি খুশি।"কুকুর প্রায়ই শিশু বা বড়দের সঙ্গে আলাদা লেজ নড়ানোর ধরন ব্যবহার করে।এই আচরণ প্রজাতিগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে শেখার মিলিত ফল।
গবেষকরা ভিডিও ও সেন্সর ব্যবহার করে কুকুরের লেজের গতিবিধি বিশ্লেষণ করেছেন।দেখা গেছে, মালিককে দেখে লেজ উচ্চ গতিতে এবং বিস্তৃতভাবে ঘোরে, যা অজানা মানুষের সামনে কম থাকে।
অন্য শব্দ বা দৃশ্যের উপস্থিতি কুকুরকে কিছুটা উৎকণ্ঠিত বা রক্ষণশীল করে, কিন্তু মালিক দেখলে অবাধ আনন্দ প্রকাশ পায়। ফলে, কুকুরের লেজ নাড়ার ধরন ও গতিবিধি মুখোশহীন ভাষা, যা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কুকুরের আবেগ, নিরাপত্তা ও আনন্দের মাত্রা।
কুকুরের লেজ নাড়া শুধু আনন্দ প্রকাশ নয়, একটি মানসিক সেতু। যারা কুকুরকে নিয়মিত সময় দেন, খেলান, প্রশিক্ষণ দেন,তাদের কুকুর দ্রুত লেজ নাড়ে এবং আরও আবেগপ্রবণ হয়। অপরিচিত বা কম পরিচিত মানুষের সঙ্গে সেই আবেগের মাত্রা কম থাকে। মালিক ও কুকুরের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে দিনে অন্তত ১৫–২০ মিনিট খেলা বা হাঁটা খুব কার্যকর।
কুকুরের লেজ নাড়া কেবল আনন্দের সিগন্যাল নয়। এটি মানব-কেন্দ্রিক আবেগ, সামাজিক চেতনা, প্রশিক্ষণ এবং জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের মেলবন্ধন।
মালিককে দেখে লেজ নাড়া মানে,"আমি খুশি, আমি নিরাপদ, আমি তোমার সঙ্গে আছি।"
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।