রুক্ষ, শুষ্ক আর ঝরে পড়া চুলে ফেরান প্রাকৃতিক মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
চুলের সৌন্দর্য শুধু বাহ্যিক নয়, এটি শরীরের পুষ্টির প্রতিফলনও। শ্যাম্পু, হেয়ার কালার, হিট-স্টাইলিং কিংবা দূষণ, এসবই চুলের প্রাকৃতিক তেল ও প্রোটিন ধ্বংস করে দেয়। ফলে চুল রুক্ষ, ভঙ্গুর, এবং ভেঙে পড়া শুরু করে। এক্ষেত্রে প্রকৃতি নিজেই দিয়েছে এক অসাধারণ উপাদান-অ্যাভোকাডো। এতে আছে এমন ভিটামিন, মিনারেল ও প্রাকৃতিক ফ্যাট, যা চুলের গভীর স্তরে পুষ্টি জোগায়, আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে এবং ভাঙন প্রতিরোধ করে।
অ্যাভোকাডো ফলটিকে বিজ্ঞানীরা বলেন, "নিউট্রিয়েন্ট ডেন্স সুপারফুড"। কারণ এর প্রতিটি অংশে থাকে জীবন্ত কোষের প্রয়োজনীয় উপাদান।
এতে যা থাকে-
⇨ ভিটামিন E: চুলের ফলিকল রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।
⇨ ভিটামিন B5 ও বায়োটিন: কেরাটিন উৎপাদনে সহায়তা করে, ফলে চুল হয় শক্ত ও কম ভঙ্গুর।
⇨ ভিটামিন A: স্ক্যাল্পে প্রাকৃতিক তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
⇨ ভিটামিন C: ফ্রি র্যাডিকাল ক্ষতি রোধ করে, চুলের কোষ রক্ষা করে।
⇨ মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড: চুলে গভীরভাবে প্রবেশ করে, যা কন্ডিশনারের মতো কাজ করে।
⇨ অ্যামিনো অ্যাসিড ও প্রোটিন: ক্ষতিগ্রস্ত চুল পুনর্গঠনে সহায়ক।
ফলে, অ্যাভোকাডো শুধু বাহ্যিকভাবে আর্দ্রতা দেয় না; বরং চুলের গঠন পুনরুদ্ধারে জৈব রাসায়নিকভাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
কীভাবে অ্যাভোকাডো হেয়ার মাস্ক চুলে কাজ করে ?
চুলের বাইরের স্তরকে বলে কিউটিকল। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে চুল নিস্তেজ ও রুক্ষ দেখায়। অ্যাভোকাডোর প্রাকৃতিক তেল এই কিউটিকলের ফাঁক ভরাট করে দেয়, ফলে আর্দ্রতা আটকে রাখে এবং চুলে চকচকে ভাব আসে।
ভিটামিন E ও প্রোটিন স্ক্যাল্পে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়, যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত অ্যাভোকাডো মাস্ক ব্যবহার করলে চুলের জলীয় উপাদান (moisture retention) প্রায় ৪০–৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
তৈরির উপায়-
উপকরণ:
⇨ পাকা অ্যাভোকাডো – ১টি
⇨ অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল – ২ টেবিলচামচ
⇨ মধু – ১ টেবিলচামচ (চুলে আর্দ্রতা ধরে রাখে)
⇨ ডিমের কুসুম (ঐচ্ছিক) – ১টি, প্রোটিন সরবরাহের জন্য
প্রস্তুত প্রণালী:
১️। অ্যাভোকাডো ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
২️। তাতে তেল ও মধু মিশিয়ে একটি মসৃণ মিশ্রণ তৈরি করুন।
৩️। পরিষ্কার ও সামান্য ভেজা চুলে মাস্কটি গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগান।
৪।২৫–৩০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৫️। সপ্তাহে ১–২ বার ব্যবহার করলেই চুলে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন দেখা যায়।
কোন ধরনের চুলে সবচেয়ে উপকারী?
⇨ শুষ্ক বা রুক্ষ চুল: আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেয়, ফ্রিজ কমায়।
⇨ রঙ করা বা হিট-স্টাইল করা চুল: ক্ষতিগ্রস্ত কিউটিকল মেরামত করে।
⇨ চুল ঝরে পড়া বা ভেঙে যাওয়া: ফলিকলকে মজবুত করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
⇨ প্রাকৃতিক কোঁকড়া চুল: নরম ও সহজে পরিচালনাযোগ্য করে তোলে।
বিজ্ঞান যা বলছে-"Journal of Cosmetic Science"-এর এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রাকৃতিক ভিটামিন E এবং মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ তেল (যেমন অ্যাভোকাডো অয়েল) চুলের জলীয় ভারসাম্য বজায় রাখে এবং কেরাটিন স্তরে পুষ্টি সরবরাহ করে। চুলের মাইক্রোস্কোপিক গঠন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অ্যাভোকাডো মাস্ক ব্যবহারকারীদের চুলে কম ভঙ্গুরতা ও বেশি ইলাস্টিসিটি পাওয়া গেছে।
সতর্কতা ও ব্যবহার পরামর্শ-
⇨ যাদের স্ক্যাল্প অতিরিক্ত তৈলাক্ত, তারা সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলেই যথেষ্ট।
⇨ ব্যবহারের আগে অ্যাভোকাডো বা ডিমে অ্যালার্জি আছে কি না তা পরীক্ষা করে নিন।
⇨ রাসায়নিক হেয়ার কালারের পর প্রথম সপ্তাহে ব্যবহার না করাই ভালো। প্রোটিন শোষণ ব্যাহত হতে পারে।
অ্যাভোকাডো শুধু একটি ফল নয়, এটি চুলের জন্য প্রাকৃতিক পুষ্টির এক সম্পূর্ণ ল্যাবরেটরি। ভিটামিন, প্রোটিন ও প্রাকৃতিক তেলের নিখুঁত মিশ্রণে এটি চুলের গঠন মজবুত করে, স্ক্যাল্পকে পুষ্টি দেয়, আর ফিরিয়ে আনে প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য। একটি পাকা অ্যাভোকাডোই পারে আপনার চুলে ফিরিয়ে আনতে সেই হারানো প্রাণ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।