গাছের সঙ্গে কথা বললে কি সত্যিই তারা দ্রুত বেড়ে ওঠে? গাছের বৃদ্ধির রহস্য!

গাছের সঙ্গে কথা বললে কি সত্যিই তারা দ্রুত বেড়ে ওঠে? গাছের বৃদ্ধির রহস্য!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গাছের সঙ্গে কথা বললে তারা দ্রুত বাড়ে আমরা অনেকেই শৈশব থেকেই এই কথা বহুবার শুনেছি। কেউ বলেন এটি নিছক অনুভূতির ব্যাপার, কেউ বলেন গাছ নাকি মানুষের ভালোবাসা বুঝতে পারে।তবে বিজ্ঞানের গবেষণাগুলো জানাচ্ছে, এই ধারণা নিছক রোমান্টিক গল্প নয়, বরং এর পেছনে আছে বাস্তব জীববৈজ্ঞানিক ও পদার্থবিজ্ঞানের ব্যাখ্যা।

মানুষের কণ্ঠস্বর আসলে এক ধরনের শব্দতরঙ্গ (sound wave), যা বাতাসের মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে ছড়ায়।গবেষণায় দেখা গেছে, গাছের কোষে থাকা মেকানো-রিসেপ্টর (mechanoreceptor) নামক সূক্ষ্ম গঠন এই কম্পন শনাক্ত করতে পারে। যখন কোনো শব্দতরঙ্গ বা কম্পন গাছের গায়ে লাগে, তখন তাদের কোষ প্রাচীর সামান্য নড়াচড়া করে এবং ভেতরের রাসায়নিক সংকেত (signal molecules) সক্রিয় হয়ে ওঠে।এই প্রক্রিয়ার ফলে—

◑ পুষ্টি পরিবহন দ্রুত হয়

◑ হরমোন নিঃসরণ বাড়ে (বিশেষ করে 'অক্সিন', যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে) এবং

◑ নতুন কোষ বিভাজন সক্রিয় হয়
 

ফলে গাছের পাতা ও শিকড়ে বৃদ্ধি কিছুটা ত্বরান্বিত হতে পারে।


 

রয়্যাল হর্টিকালচারাল সোসাইটির (RHS) গবেষণায় (যুক্তরাজ্য) তারা ১০টি টমেটো গাছকে আলাদা আলাদা কক্ষে রেখে প্রতিদিন বিভিন্ন কণ্ঠে রেকর্ড বাজান।ফলে যেসব গাছ নারী কণ্ঠে কথা শুনেছে, সেগুলো গড়ে ২ সেন্টিমিটার বেশি বেড়েছে! বিশ্লেষণে দেখা যায়, নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির শব্দতরঙ্গ পাতার রন্ধ্র (stomata) খোলা ও বন্ধের প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে।

দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সের গবেষণায় (২০০৭),তারা দেখতে পান, ৫০–৬০ ডেসিবেল মাত্রার কোমল শব্দ (যেমন মানুষের স্বাভাবিক কথা বলার আওয়াজ) গাছের বৃদ্ধির জন্য উপকারী, কিন্তু অতিরিক্ত উচ্চ শব্দ (>৯০ ডেসিবেল) কোষের ক্ষতি করে এবং বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। আবার ভারত ও জাপানের গবেষণায় দেখা গেছে,  কিছু উদ্ভিদে  ক্লাসিক্যাল বা সুরেলা সংগীতের কম্পন শিকড়ের বৃদ্ধি ও পাতার ঘনত্ব বাড়ায়। এর কারণ, সুরেলা কম্পন উদ্ভিদের কোষের মধ্যে ক্যালসিয়াম প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা কোষ বিভাজন ও বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।

 

তাহলে গাছ "শোনে" কীভাবে!

গাছের কোনো কান নেই,তবুও তারা কম্পন অনুভব করতে পারে। তাদের দেহে থাকা কোষ প্রাচীরের মলিকিউলার ফাইবার শব্দের কম্পনে সাড়া দেয় এবং ভেতরে ইলেকট্রিকাল সিগনাল তৈরি হয়। এই সংকেত শিকড় থেকে কাণ্ড পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, যেমন মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে ঘটে। সাধারণভাবে, গাছ মানুষের কথা "বোঝে" না, কিন্তু কম্পনের শক্তি অনুভব করে, যা একধরনের "যান্ত্রিক উদ্দীপনা (mechanical stimulation)" হিসেবে কাজ করে।

 

মানুষ যখন গাছের সঙ্গে কথা বলে, শুধু শব্দ নয়- তার সঙ্গে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ, আর্দ্র নিঃশ্বাস, এমনকি শরীরের তাপমাত্রা ও গন্ধের অণু—সবই গাছের চারপাশে এক ক্ষুদ্র মাইক্রোক্লাইমেট তৈরি করে।
এই পরিবেশ গাছের ফটোসিনথেসিস বা খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও, গাছের সঙ্গে কথা বলার মানে সাধারণত তার প্রতি যত্ন ও নিয়মিত যোগাযোগ, যা—

⇨ নিয়মিত পানি দেওয়া

⇨ সঠিক আলো দেওয়া

⇨ শুকনো পাতা সরানো
এই অভ্যাসগুলো বাড়ায়। 

ফলে গাছ সুস্থ থাকে, আর সেটিকেই আমরা "গাছ কথা বুঝছে" বলে মনে করি।
 

যা জানা দরকার

◑ অতিরিক্ত বা উচ্চস্বরে কথা বলা গাছের জন্য ভালো নয়।

◑ যান্ত্রিক বা কৃত্রিম উচ্চ শব্দ (যেমন লাউডস্পিকার) গাছের বৃদ্ধিতে ক্ষতিকর।

◑ বিভিন্ন গাছের প্রজাতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে।

 

মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিষয়টি আরও গভীর!

মানুষ যখন গাছের সঙ্গে কথা বলে, তখন মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন ও ডোপামিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মানসিক প্রশান্তি দেয় ও স্ট্রেস কমায়।
এই মানসিক প্রশান্তি মানুষকে আরও যত্নবান করে তোলে, এবং সেই বাড়তি যত্নই গাছের বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়ে ওঠে।অর্থাৎ, এটা একদিকে বৈজ্ঞানিক প্রভাব, অন্যদিকে মানসিক সহাবস্থানের প্রকাশ।

গাছের সঙ্গে কথা বলা নিছক কল্পনা নয়। এটি প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে এক সূক্ষ্ম কিন্তু বাস্তব সংযোগ।গাছ শব্দ শুনে "বোঝে" না, কিন্তু সেই কম্পন, যত্ন ও মানবিক উপস্থিতি তাদের কোষে প্রতিক্রিয়া জাগায়। বিজ্ঞানের ভাষায় বললে, এটি একধরনের বায়ো-অ্যাকুস্টিক রেসপন্স,আর অনুভূতির ভাষায়, এটা ভালোবাসার প্রতিফলন।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ