ভাঙলেও নিজেই মেরামত! প্রযুক্তির নতুন চমক যা বদলে দেবে সবকিছু

ভাঙলেও নিজেই মেরামত! প্রযুক্তির নতুন চমক যা বদলে দেবে সবকিছু
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ভাবুন, আপনার মোবাইলের স্ক্রিনে হঠাৎ একটি ফাটল ধরল, আর কয়েক মিনিট পর সেই ফাটল নিজে থেকেই মিলিয়ে গেল, কোনো সার্ভিস সেন্টারে না গিয়েই! এটি কোনো সায়েন্স ফিকশন গল্প নয়, বরং বাস্তব প্রযুক্তিরই এক চমকপ্রদ অধ্যায়- Self-Healing Material বা নিজে নিজেকে মেরামত করতে সক্ষম উপাদান।এই প্রযুক্তির মূল ধারণা এসেছে জীবজগত থেকে, বিশেষত মানুষের দেহ থেকে। যেমন: আমাদের চামড়ায় ক্ষত হলে শরীর নিজে থেকেই টিস্যু পুনর্গঠন করে সেই ক্ষত সারিয়ে তোলে। বিজ্ঞানীরা ভাবলেন, যদি এই প্রক্রিয়াটি কৃত্রিম উপাদানে অনুকরণ করা যায়, তাহলে তা শিল্প ও প্রযুক্তি দুনিয়ায় বিপ্লব ঘটাতে পারে।

যেভাবে কাজ করে এই সেলফ-হিলিং প্রযুক্তি-

সেলফ-হিলিং মেটেরিয়াল সাধারণত এমনভাবে তৈরি হয় যাতে এর ভেতরে মাইক্রোক্যাপসুল বা ন্যানোটিউব আকারে বিশেষ রাসায়নিক যৌগ থাকে। কোনো কারণে উপাদানটি ভাঙলে বা ফাটলে সেই মাইক্রোক্যাপসুলগুলো ফেটে গিয়ে হিলিং এজেন্ট নামের তরল রাসায়নিক ছড়িয়ে দেয়। এই রাসায়নিক ভাঙা অংশের সঙ্গে বিক্রিয়া করে একে আবার যুক্ত করে দেয় বা শক্ত বন্ধন তৈরি করে, যেমনটা মানুষের ত্বকে ক্ষত সারায়। কিছু উন্নত ধরণের মেটেরিয়ালে আবার রিভার্সিবল পলিমার বন্ড ব্যবহৃত হয়, যা তাপ বা আলো পেলে আবার নিজে থেকেই পুনর্গঠিত হতে পারে। এমনকি কিছু গবেষণায় বায়োলজিক্যাল সেল-ইনস্পায়ার্ড হাইড্রোজেল ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে, যা রক্তনালীর মতো উপায়ে তরল প্রবাহ ঘটিয়ে ক্ষতস্থান মেরামত করতে পারে।

 

কোথায় ব্যবহার হচ্ছে এই প্রযুক্তি?

এই প্রযুক্তির প্রয়োগের ক্ষেত্র দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে-

⇨ ইলেকট্রনিক্সে: মোবাইল স্ক্রিন, সেন্সর, এমনকি মাইক্রোচিপে ক্ষুদ্র ফাটল বা শর্ট সার্কিট নিজে থেকেই মেরামতের জন্য।

⇨ অটোমোবাইল শিল্পে: গাড়ির বডি কোটিং বা পেইন্টে এই উপাদান ব্যবহারে ক্ষুদ্র আঁচড় বা ঘষা সহজেই মিলিয়ে যায়।

⇨ এয়ারক্রাফট ও স্পেসক্রাফটে: চরম তাপমাত্রা ও চাপের মধ্যে ক্ষতি রোধে হালকা ও স্বয়ংমেরামত উপাদান এখন পরীক্ষাধীন।

⇨ নির্মাণ খাতে: কংক্রিটে এমন মাইক্রোব ব্যবহার করা হচ্ছে যা ফাটল দেখলে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট তৈরি করে তা পূরণ করে দেয়। অর্থাৎ "নিজে নিজে মেরামত হওয়া ভবন" আর কল্পনা নয়।
 

এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো টেকসইতা ও বর্জ্য হ্রাস। যন্ত্রপাতি বা ভবন ঘন ঘন বদলাতে হবে না, ফলে উৎপাদন খরচ ও বর্জ্য দুটোই কমবে। এছাড়া এটি রিসোর্স সংরক্ষণে বড় ভূমিকা রাখবে, কারণ একবার তৈরি হওয়া উপকরণ দীর্ঘদিন টিকে থাকবে।

বর্তমানে গবেষকরা এমন মেটেরিয়াল তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছেন যা নিজে থেকেই একাধিকবার মেরামত হতে পারে এবং বিভিন্ন তাপমাত্রা বা চাপেও কার্যকর থাকে। বিশেষত, ভবিষ্যতের রোবট, স্মার্টওয়াচ, এমনকি স্মার্ট টেক্সটাইলেও সেলফ-হিলিং উপাদানের ব্যবহার দেখা যাবে।

একজন বিজ্ঞানীর ভাষায়, "ভবিষ্যতের যন্ত্রপাতি শুধু বুদ্ধিমান নয়, নিজের শরীরের যত্নও নিতে পারবে।"

সেলফ-হিলিং মেটেরিয়াল কেবল একটি উদ্ভাবন নয়, বরং এটি এমন এক বিজ্ঞান যা প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রযুক্তিকে জীবন্ত রূপ দিচ্ছে। সময় আর খুব বেশি দূরে নয়, যখন আমাদের গ্যাজেট, ভবন কিংবা গাড়ি নিজের ক্ষত নিজেই সারিয়ে তুলবে, একদম মানুষের মতোই!

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ