চবি ছাত্রীকে ‘কান ধরে উঠবস’ করাতে চাইলেন শিক্ষক
- Author, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একটি বাসে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলী হায়দার ও এক শিক্ষার্থীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা এবং ‘কান ধরে উঠবস’ মন্তব্য ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) রাত সাড়ে আটটার বিশ্ববিদ্যালয়গামী বাসে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ছাত্রী তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে লেখেন“রাত ৮:৩০ মিনিটে বাসে ২০২২ সাল থেকে যাওয়া আসা করছি, কিন্তু আজ প্রথম কোনো শিক্ষক এত জঘন্য আচরণ করলেন। এবং এর পেছনের কারণ শুধুই আমি ও আমরা শিক্ষার্থী বলেই। ঘটনা হলো, আমি জিইসি থেকে ৮:৩০ মিনিটে বাসে উঠি। তখন তিনি ড্রাইভার ও হেলপারের সাথে বাজে আচরণ করেন। তাদের শাসান, কেন শিক্ষক-কর্মচারী বাসে শিক্ষার্থী উঠানো হচ্ছে।
এরপর আমি বসে কথা বলছিলাম, এজন্য আমাকে তিনি ধমক দিয়ে বলেন কথা না বলতে। আমি হকচকিয়ে যাই এবং বলি ‘কারণ?’ তখন তিনি চিৎকার করে বলেন, এইটা আমাদের বাস না, এখানে আমাদের কথা বলার অধিকার নাই।
আমি বললাম প্রক্টর স্যার পারমিশন দিয়েছেন। তিনি তখন আমার দিকে আঙুল তুলে বলেন, প্রক্টরের কোনো অথরিটি নেই এই পারমিশন দেওয়ার। আর আমরা যদি এটা প্রমাণ করতে না পারি, তাহলে তিনি আমাদের কান ধরে উঠবস করাবেন।
আমি তখন বললাম, এই অথরিটিও আপনার নাই। তখন তিনি আমাকে বেয়াদব বলেন এবং বলেন, আমি জানি না কিভাবে শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে হয়।
এই বাসে থাকা প্রত্যেকটা শিক্ষার্থী জানে তার আচরণ কতটা জঘন্য ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ ছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা লাফাঙ্গামী শিখছি।
একজন শিক্ষক যদি এমন অপেশাদার আচরণ করেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের কাছ থেকে কী শিখবে?”
ছাত্রী তার পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসুর নবনির্বাচিত আবাসন সম্পাদক মো. ইসহাক ভূঁঞার দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছেন আপনি আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এবং আপনার ছোট বোন হিসেবে চাই, এই ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান হোক। আমার বাবা পর্যন্ত কখনও আমার সঙ্গে এমন গলায় কথা বলেননি।”
ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ড. মুহাম্মদ আলী হায়দার বলেন“আমি গতকাল রাত সাড়ে আটটার বাসে উঠেছি। প্রথম সিটে এক পাশে আমি বসি, আরেক পাশে ছিল এইচ.আর.এম বিভাগের চেয়ারম্যান। আমার পেছনে এক মেয়ে ও এক ছেলে বসেছিল। উঠেই তারা জোরে জোরে কথা বলতে শুরু করে। অন্যদিকে ড্রাইভারও বারবার বাস থামিয়ে বাইরে থেকে লোক তুলছিলেন। আমি ড্রাইভারকে বলি ‘তুমি এগুলো কি করছ? এই বাস প্রধানত শিক্ষক-অফিসারদের জন্য, তুমি লোক তুলছো কেন? তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করব।’
এরপর আমি একটু চিন্তিত হয়ে ছিলাম। কিন্তু পিছনের মেয়েটি নিরবচ্ছিন্নভাবে কথা বলছিল। আমি পেছনে ফিরে আমার মুখে আঙুল দিয়ে ইশারা করে তাকে কথা বলতে নিষেধ তার পর সামনে ঘুরে যায় । কিছুক্ষণ পর আবার কথা বলতে শুরু করে। তখন আমি আবার বলি, ‘আমি তো আপনাকে কথা না বলতে বলেছি।’
এরপর সে হঠাৎ চিৎকার করে বলে ‘আমি কথা বলব না কেন?’ আমি বললাম, ‘দেখেন, আপনি কিন্তু এই গাড়ির জন্য এলিজিবল না।’ তখন পাশে বসা ছেলেটি বলে উঠল, ‘কে বলছে এলিজিবল না? প্রক্টর অফিস থেকে পারমিশন দিয়েছে, চাকসু যোগাযোগ সম্পাদকও পারমিশন দিয়েছেন।’
আমি তখন বলি ‘আপনারা যদি পারমিশন নিয়ে থাকেন, সেটা কোনো কাগজ আকারে আমাকে দেখাতে পারবেন? যদি না পারেন, তাহলে আপনাদের কান ধরে উঠবস করতে হবে, নাহলে আমি নেমে যাব।’
এই কথা বলার পর তারা দুজনই রেগে যায়। মেয়েটি সমানে আমাকে গালিগালাজ করতে থাকে অশালীন ও অসম্মানজনক ভাষায়। আমি তাও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। আমি শুধু বলেছিলাম‘শিক্ষকদের সঙ্গে এভাবে আচরণ করা যায় না। আমরা কিছু বললে আপনারা উল্টো তর্কে জড়িয়ে পড়েন।’
এরপর মেয়েটির সঙ্গে আমার আর কোনো কথা হয়নি, তবে ছেলেটি তর্ক শুরু করে। পরে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে বাসের দরজা বন্ধ করে দেয় এবং সামনের ফাঁকা সিটগুলো দখল করে। তারা ক্রমাগত ফোনে প্রক্টর অফিস ও ছাত্র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে, যেন পরিস্থিতি আরও উত্তেজিত হয়।
আমি তখন চুপচাপ বসেছিলাম, এমনকি আমার ছোট সন্তানও বাসে ছিল ওর সাথেও তারা দুর্ব্যবহার করেছে।
আমি আগামীকাল প্রক্টর স্যারের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাব। প্রয়োজনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সত্য ঘটনা তুলে ধরব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী বলেন,“বিষয়টি জানার পর আমরা উভয় পক্ষের সাথেই কথা বলেছি। প্রয়োজনে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বাসের ব্যবস্থা করব।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নবনির্বাচিত যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক মো. ইসহাক ভূঁঞা বলেন
“আমি এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। ঘটনার সময় আমি পরীক্ষায় ছিলাম। পরে চাকসুর কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় যোগ দিতে আসি।মিটিং শেষ হলে আমি তাদের সঙ্গে বসব। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে যেন পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় থাকে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে কাজ করব ।”
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।