ক্যান্সারবিরোধী ফল, সাওরসপ নিয়ে বিজ্ঞান এবং গুজবের সীমারেখা

ক্যান্সারবিরোধী ফল, সাওরসপ নিয়ে বিজ্ঞান এবং গুজবের সীমারেখা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বিশ্বজুড়ে এক ফলের নাম এখন ক্রমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আর তা হলো - Soursop বা Graviola, বাংলায় যাকে অনেকে চেনেন গায়াবা ফল, গুয়ানাবানা বা অ্যানোনা মুরিকাটা নামে। লেবু–পেয়ারার মতো গন্ধ আর টক-মিষ্টি স্বাদের এই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফলটি শুধু স্বাদে নয়, স্বাস্থ্যগুণেও বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। বিশেষত, এর ক্যান্সার প্রতিরোধে সম্ভাবনা নিয়ে চলছে ব্যাপক গবেষণা ও বিতর্ক।

Soursop মূলত দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের গাছ। এটি Annonaceae পরিবারভুক্ত একটি চিরসবুজ বৃক্ষ, যার পাতাগুলো গাঢ় সবুজ ও চকচকে। ফলটি বড়, কাঁটাযুক্ত খোসায় ঢাকা, আর ভিতরে থাকে সাদা মোলায়েম শাঁস। স্থানীয় জনগোষ্ঠী বহু শতাব্দী ধরে এই ফল ও এর পাতাকে ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে- বিশেষত জ্বর, সংক্রমণ, এবং পরিপাকতন্ত্রের সমস্যায়।

Soursop নিয়ে যে গবেষণাগুলো আলোচনায় এসেছে, সেগুলোর বেশিরভাগই ল্যাবরেটরিভিত্তিক (in vitro) বা প্রাণীদেহে (in vivo) করা হয়েছে।ফল, পাতা ও বীজে পাওয়া গেছে এক বিশেষ যৌগ-Acetogenins, যা কোষের শক্তিকেন্দ্র মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যকলাপ ব্যাহত করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে ভূমিকা রাখতে পারে।গবেষণায় দেখা গেছে, এই যৌগগুলো-

ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে এবং আশপাশের সুস্থ কোষকে তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত করে।
 

২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Journal of Natural Products-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, Graviola পাতার নির্যাস ফুসফুস, স্তন ও অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার কোষে প্রতিরোধী প্রভাব দেখায়। তবে এখনো এই ফলের কোনো অংশকেই ক্যান্সারের চিকিৎসার স্বীকৃত ওষুধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি।
 

বিজ্ঞান বলছে Soursop-এর মধ্যে পাওয়া যায়-

⇨ Acetogenins

⇨ Alkaloids

⇨ Phenolic compounds

⇨ Vitamin C ও Magnesium

এসব যৌগ একসঙ্গে কাজ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে, যা শরীরে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল কমায়। ফলে ক্যান্সার, হৃদরোগ, ও বার্ধক্যজনিত কোষ ক্ষয় কমাতে সহায়ক হয়। তবে গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, Graviola-এর বীজ বা কাঁচা অংশে থাকা annonacin নামক রাসায়নিক বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে তা স্নায়ুতন্ত্রে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। তাই প্রাকৃতিক হলেও এই ফলের অতিরিক্ত সেবন বা অপরিশোধিত নির্যাস ব্যবহার ক্ষতিকর হতে পারে।
 

ক্যান্সারবিরোধী প্রভাব ছাড়াও Soursop আরও নানা দিক থেকে শরীরের উপকারে আসে-

⇨ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে (ভিটামিন সি সমৃদ্ধ)

⇨ পরিপাকতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে

⇨ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

⇨ দেহে প্রদাহ ও ব্যথা কমায়

⇨ ঘুম ও স্নায়ু শান্ত রাখে -কারণ এতে আছে প্রাকৃতিক সেডেটিভ প্রভাব

এই ফল থেকে তৈরি হয় চা, জুস ও ড্রাই পাউডার, যা অনেক দেশে হারবাল থেরাপি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

যদিও ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় আশাব্যঞ্জক ফলাফল দেখা গেছে, এখনো মানবদেহে পরীক্ষিত ফলাফল সীমিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বা মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (FDA) এখনো Graviola-কে ক্যান্সারের বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে অনুমোদন দেয়নি। তাই এই ফল খাদ্য বা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গ্রহণ করা নিরাপদ হলেও, ক্যান্সার চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা বৈজ্ঞানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।

Soursop নিঃসন্দেহে প্রকৃতির এক অনন্য দান, যার ভেতরে লুকিয়ে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান। এটি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্ভাবনার এক জানালা খুলে দিয়েছে, তবে চিকিৎসার বিকল্প নয়। বিজ্ঞান বলছে, এটি এক সহায়ক খাদ্য উপাদান, যা প্রতিরোধমূলক ভূমিকা রাখতে পারে, কিন্তু রোগ নিরাময়ের প্রতিশ্রুতি দেয় না। অতএব, প্রকৃতির এই আশ্চর্য ফল আমাদের খাদ্যতালিকায় যুক্ত হতে পারে স্বাস্থ্যরক্ষার এক প্রাকৃতিক সহযোগী হিসেবে, যদি তা বিজ্ঞানসম্মতভাবে ও পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করা হয়।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ