মাথার চুলের পাক বলে দেবে, কয়টা বিয়ে আপনার ভাগ্যে!

মাথার চুলের পাক বলে দেবে, কয়টা বিয়ে আপনার ভাগ্যে!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমাদের সমাজে এমন কিছু বিশ্বাস আছে যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।যেমন, চুলের পাক নিয়ে কুসংস্কার।গ্রামের চায়ের দোকান থেকে শহরের বিউটি পার্লার সব জায়গাতেই শোনা যায়, মাথায় যদি দুই পাক থাকে, তাহলে জীবনে দুই বিয়ে হবেই! কেউ কেউ তো আবার বলে থাকেন, তিন পাক মানে তিন বিয়ে!শুনতে মজার, কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাস্তবে, চুলের পাকের সঙ্গে বিয়ে, ভাগ্য বা ব্যক্তিত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি কেবলমাত্র শরীরের প্রাকৃতিক ও জিনগত একটি বৈশিষ্ট্য।

চুলের পাক যেভাবে তৈরি হয়-

ভ্রূণ যখন গর্ভে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন মাথার ত্বকে চুলের ফলিকল (Hair follicle) তৈরি হয়। প্রতিটি ফলিকল থেকে চুল বের হয় নির্দিষ্ট কোণে। এই কোণগুলির দিকনির্দেশের ওপর নির্ভর করে চুল ঘুরে একটি পাক বা ঘূর্ণি (hair whorl) তৈরি করে।বেশিরভাগ মানুষের মাথায় এই পাকটি একটিই থাকে এবং এটি সাধারণত ঘড়ির কাঁটার দিকে (clockwise) ঘোরে। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দুটি বা তার বেশি পাক দেখা যায়, যেটি মূলত জেনেটিক বৈচিত্র্যের ফলাফল। গবেষণায় দেখা গেছে—

৬৫–৭০% মানুষের মাথায় একটিমাত্র পাক থাকে।
২০–২৫% মানুষের মাথায় দুইটি পাক। আর মাত্র ৫% মানুষের মাথায় তিন বা তার বেশি পাক দেখা যায়।এই পার্থক্য গঠিত হয় ভ্রূণাবস্থায় ত্বক ও মস্তিষ্কের কোষ বিভাজনের সময়। সুতরাং এটি একেবারেই প্রাকৃতিক জৈব প্রক্রিয়া, কোনো ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত নয়।
 

বিজ্ঞানীরা বলেন, কেমব্রিজ, টোকিও ও টেক্সাস ইউনিভার্সিটির জিনবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণায় দেখেছেন যে, চুলের পাকের দিক নির্ধারণে মূলত ভূমিকা রাখে দুটি বিষয়-

☞ LRRTM1 নামের একটি জিন, যা বাম-ডান মস্তিষ্কের আধিপত্য নির্ধারণ করে। 

☞ চুলের ফলিকল গঠনের প্রাথমিক কোষের ঘূর্ণন দিক, যা চুলের পাকের অভিমুখ তৈরি করে।
 

অর্থাৎ, কারও মাথায় পাকের সংখ্যা বা দিক নির্ভর করে তার জিনগত বিন্যাস (genetic pattern) ও মস্তিষ্কের বিকাশের প্রক্রিয়ার ওপর। এতে ব্যক্তির ভাগ্য, প্রেম, বা বিয়ের সংখ্যা কোনোভাবেই যুক্ত নয়।
 

কুসংস্কারের উৎপত্তি কোথা থেকে! 

প্রাচীনকালে মানুষ যখন জেনেটিক্স বা বংশগত বৈজ্ঞানিক ধারণা জানত না, তখন তারা শারীরিক বৈশিষ্ট্যকে ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখত।
কেউ হয়তো দেখেছে- একজন প্রভাবশালী, ধনী বা একাধিকবার বিবাহিত ব্যক্তির মাথায় দুটি পাক।সেখান থেকেই ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে এই বিশ্বাস।
এ ধারণা মুখে মুখে, গল্পে গল্পে ছড়িয়ে পড়ে এবং আজও অনেকের মধ্যে টিকে আছে, যদিও এর পেছনে কোনো বাস্তবিক ভিত্তি নেই।

 

মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, মানুষ অজানাকে ভয় পায় এবং সেই ভয় থেকেই অর্থহীন সংযোগ (superstitious association) তৈরি করে।
যখন কেউ নিজের বা অন্যের জীবনে কোনো অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য দেখে, তখন সে সেটাকে কোনো "অর্থ" দিতে চায়। চুলের পাকের সংখ্যাকে বিয়ের সংখ্যা বা চরিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা,এমনই এক মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতার ফল।

 

আসলে চুলের পাক জানায় কী

বিজ্ঞানীরা বলছেন, চুলের পাক হয়তো কিছু জেনেটিক ও স্নায়বিক দিক ইঙ্গিত দিতে পারে।উদাহরণস্বরূপ, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের চুলের পাক ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে (anticlockwise), তাদের মধ্যে বামহাতি (left-handed) হওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশি।কিন্তু এটাও কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নয়,শুধু পরিসংখ্যানগত প্রবণতা মাত্র।অর্থাৎ, চুলের পাক কোনো ভবিষ্যদ্বাণী নয়, বরং জৈব বৈচিত্র্যের এক নিদর্শন।

 

সমাজে এর প্রভাব-

এই ধরনের কুসংস্কার শুধু হাস্যরসের বিষয় নয়,এগুলো আমাদের চিন্তার পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে।যখন আমরা শারীরিক বৈশিষ্ট্যকে ভাগ্যের সঙ্গে যুক্ত করি, তখন আমরা অবচেতনে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করি।এর ফলে সমাজে তৈরি হয় অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা অগ্রগতির পথে অন্তরায়।

চুলের পাক হলো মানুষের জিনগত বৈচিত্র্যের প্রাকৃতিক ফলাফল, এর সঙ্গে বিয়ে, ভাগ্য বা ভবিষ্যতের কোনো সম্পর্ক নেই।এটি আমাদের শরীরের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, যেভাবে কারও চোখ বাদামি, কারও নীল, কারও নাক একটু বাঁকা-সবই প্রকৃতির এক শিল্প।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ